জয় বাংলা আন্দোলন
২৩ মার্চ। পাক প্রেসিডেন্টের ফরমাস ছিল এই দিনে সমগ্র পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম) পাকিস্তান ডে’ প্রতিপালনের। পূর্ব পাকিস্তানের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সদৃশ শেখ মুজিবর রহমানের নির্দেশে এই দিনটিকে পালন করা হয় প্রতিরােধ দিবস’ রূপে। শুধু প্রতিরােধই যথেষ্ট নয়, পাল্টা জয় বাংলা দিবস’ প্রতিপালিত হয় এই দিনটিতে সমগ্র পূর্ব বাংলায়। প্রতিটি গৃহশীর্ষে, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও সংস্থার মস্তকোপরে এবং নৌ ও স্থল যানবাহনের উপর পাকিস্তান জাতীয় পতাকার স্থলে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানাে হয়। শেখ মুজিবরের নির্দেশে আজ ছিল ছুটির দিন। সবকিছু বন্ধ রেখে সংগ্রামে নিহত শহীদগণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে স্থানে স্থানে শহীদ বেদীতে মালা দান করেন অগণিত বঙ্গ সন্তান। পরবর্তী আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান ছিল ঢাকার পল্টন ময়দানে ‘জয় বাংলা বাহিনীর সামরিক কায়দায় কুচকাওয়াজ। বিশাল জনসমুদ্রের মধ্যে চারজন ছাত্রনেতা উক্ত বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং জয় বাংলা ধ্বনির পিঠে ধ্বনিতে আকাশবাতাস কাঁপিয়ে মিছিল করে জয় বাংলা বাহিনী গিয়ে হাজির হয় শেখ মুজিবর রহমানের বাসভবনের প্রাঙ্গনে। বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন শেখ মুজিবর। অভিবাদনান্তে কন্তু কণ্ঠে উচ্চারণ করেন শেখ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বাঁচার অধিকার অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। আপােষহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই একমাত্র নীতি।’ পূর্ব বাংলায় ২২ দিন যাবত অহিংস অসহযােগ আন্দোলন অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার নিজস্ব দলবল ও গােষ্ঠীবর্গকে নিয়ে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে এ-দিন পাকিস্তান দিবস পালন করেন। ৩১টি তােপধ্বনির পর তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন। মামুলি ভাষণ। প্রথমে কায়েদে আজম জিন্নার বাণী, পরে বলেন, আজ প্রয়ােজন জাতীয় ঐক্য ও সহনশীলতা। জাতি আজ চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে, জাতীয় অস্তিত্বই বিলুপ্তির পথে।
সূত্র: ত্রিপুরা
২৪ মার্চ, ১৯৭১
১০ চৈত্র ১৩৭৭