You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.10 | বাংলাদেশ থেকে দু' কোটি লােক তাড়ানাের পাকিস্তানী চক্রান্ত। - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ থেকে দুকোটি লােক তাড়ানাের পাকিস্তানী চক্রান্ত।

এখনই তিরিশ হাজার বাঙালী খুনের জন্য নামের তালিকা তৈরি মুজিবনগর, মেইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে দুকোটি লােক তাড়ানাের একটি চক্রান্ত করেছেন। ব্যাপারে তাঁদের কোন ঢাকঢাকগুড়গুড় নেই। খােলাখুলিভাবে তাঁরা এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য বাংলাদেশে অবস্থানকারী অবাঙালীদের সাহায্য চেয়েছেন। এর উদ্দেশ্য দুটি -() খাস পাকিস্তান এবং তার উপনিবেশ পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) দুই জায়গা মিলিয়ে বাঙালীদের সংখ্যাগুরুত্ব ধ্বংস করে তাদের সংখ্যালঘু বানিয়ে দেওয়া এবং () ভারতে বাস্তুত্যাগী পাঠিয়ে ভারতীয় অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করা।

ছাড়া আগরতলা থেকে ইউ এন আইএর খবর : পাক সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ঢাকা এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলির তিরিশ হাজার বিশিষ্ট বাঙালীর নামের তালিকা তৈরি করেছেন। তাদের নাকি এক এক করে হত্যা করা হবে বলে একজন সরকারী অফিসার এবং একজন তরুণ ব্যবসায়ী ইউ এন আইকে জানিয়েছেন। তারা উভয়েই সম্প্রতি বাংলা দেশ থেকে এসেছেন।

এই তালিকার যাঁদের নাম আছে, সামরিক কর্তৃপক্ষের মতে তারা ভারতপন্থী বা আওয়ামী লীগের গোঁড়া। সমর্থক। পাক সৈন্যরা নাকি তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে রাত্রে হানা দিয়ে তাদের অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়।

সম্প্রতি ডাক তার বিভাগের প্রবীণ অফিসার শ্রী লােকমান হােসেনকে এইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তার কোন খবর নেই। পূর্বে বারমা শেলের এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসএর দুজন বাঙালী অফিসারকে এভাবে অপহরণ এবং হত্যা করা হয়।

এখানে আগত উদ্বাস্তুরা জানান, ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় একদিনে পাক সেনারা পাঁচ হাজার। বাঙালীকে হত্যা করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলি চলে। | দুজন উদ্বাস্তু বলেন, গত শনিবারের আগের শনিবার ঢাকা জেলার একটি নদীতে কয়েক হাজার নাগরিককে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা নদীর অন্যান্য স্থানেও তাদের মৃতদেহ ভাসতে দেখে। এই উদ্বাস্তুরা আরও বলেন যে, পাঁচ হাজার পাঠান সৈন্যকে বাড়ি দোকানঘর লুট করতে এবং মেয়েদের সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করার সুযােগ দেওয়া হয়। এই ধরনের সুযােগের আশ্বাস দিয়েই নাকি তাদের বাংলাদেশে আনা হয়েছে। সব ধরনের গাড়ি সামরিক কর্তৃপক্ষ হস্তগত করছেন এবং কারখানাগুলিতে বন্দুক উঁচিয়ে শ্রমিকদের কাজ করানাে হচ্ছে

মাসেই বাস্তুত্যাগীর সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষে পৌঁছতে পারে তুষার পণ্ডিত আরও জানিয়েছেন : পাকিস্তানী

দখলদারদের অত্যাচারে ইতিমধ্যেই পনেরাে লক্ষ লােক বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই মাসের মধ্যেই এই সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষে পৌঁছতে পারে। বাস্তুত্যাগীরা আসছেন প্রধানত পাঁচটি সীমান্ত রাজ্যেপশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় বিহারে।

একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন যে, এই হারে শরণার্থী এলে মাসের মধ্যেই ভারতের এই বাবদে খরচের অঙ্ক বারাে কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আর বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে ৩৬৫ কোটি টাকা।

পাকিস্তান তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলেছে। আবার এই পরিকল্পনাও রচিত হয়েছে বাংলাদেশে দেড় মাস ধরে ব্যাপক গণহত্যা চালানাের পর। ঢাকানগরীর কাছে কুরমিটোলার পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা নিবাস গণিকালয়ে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নেতা পি টি আইকে জানান, নারী অপহরণের ঘটনা এখন অনেক ঘটছে।

কুরমিটোলার ছাউনিতে শত শত বাঙালী নারীকে আটক রাখা হয়েছে এবং সমস্ত এলাকাটিকে কার্যত গণিকালয়ে পরিণত করা হয়েছে।

১০ মে৭১

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা