You dont have javascript enabled! Please enable it!

সল্ট লেক শরণার্থী শিবিরে জনসভায় বাঙলাদেশের অগ্নিকন্যা শ্রীমতি মতিয়া চৌধুরীর ভাষণ

কলকাতা, ৩০ সেপ্টেম্বর- গত ২১ সেপ্টেম্বর লবন হদ শরণার্থী শিবিরে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় বিখ্যাত ন্যাপনেত্রী, বাঙলাদেশের অগ্নিকন্যা শ্রীমতি মতিয়া চৌধুরী বলেন যে দীর্ঘ ২৪ বৎসর যারা পাকিস্তানের মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে সেই আদমজী ইস্পাহানির দল এবং মুসলিম লীগই পাকিস্তান ভেঙ্গেছে আমরা নই। তিনি বলেন, বৃটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামে যখন সূর্যসেন, প্রীতিলতার প্রাণ দিয়েছেন তখন এই মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ বৃটিশের সাথে আপস করেছে- স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কায়দে আজম জিন্না বৃটিশের জেলখানায় একদিনও কাটান নি। ধর্মের নামে, দ্বিজাতি তত্ত্বেও উপর পাকিস্তানের জন্য। শাসন ক্ষমতা হাতে পেয়েই কায়দে আজম বাঙ্গালী জাতির ভাষার উপর আক্রমণ করেন। বাঙ্গালী ছাত্ররা কায়দে আজমের ফতােয়ার প্রতিবাদ জানালে তাদের ভারতের চর বলা হয়। বরকত, সালাম , জব্বার বুকের খুন দিয়ে মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা পেয়ে কায়দে আজম শুধু বাঙ্গালীর ভাষাই নয় পাঠান, বালুচী, সিন্ধ সকল জাতির উপরই উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিয়েছে এই জাতিগুলােকে পর্যন্ত করার জন্য। আজ বাঙলাদেশের মানুষের বুঝতে বাকী নেই যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার মুক্তি সগ্রামের দুশমন চীন তার ভূমিকা না বদলালে বাঙলাদেশের মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না চীনের নেতাদের জবাব দিতে হবে। শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে আবেগ দীপ্ত কণ্ঠে শ্রীমতি মতিয়া বলেন, আমাদের দেশ আমাদের নিজেদেরই স্বাধীন করতে হবে, কেউ স্বাধীন করে দিবে না। প্রতিটি যুবককে লড়াই-এ যেতে হবে। মেয়েদের নার্সিং এ যােগ দিতে হবে। বন্দুক হাতে নিয়ে লড়াই- এও নামতে হবে। শরনার্থীদের দুরবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রতিটি শরণার্থী শিবিরের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে শশ্মান। পাঁচ বছরের নিচে যে শিশুরা আছে কজন মা তাদের বুকে নিয়ে স্বাধীন বাঙলায় ফিরে যেতে পারবেন জানি না। কিন্তু আমাদের এ কথাও ভুললেও চলবে না ভারতের মানুষ ও ভারত সরকার আমাদের জন্য তাদের সাধ্যমত করে যাচ্ছেন। আমরা আজ ভারতকে এর কোন প্রতিদান দিতে পারছি না কিন্তু তাদের আজ আমি একথা বলতে পারি স্বাধীন বাঙলাদেশে কোন দিন আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হবে না-না-না। সভায় সভা নেতৃত্ব করেন ভারতীয় মহিলা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রীমতি বিদ্যা মুন্সী। ডঃ ফুলরেনু গুহ এবং শেফালী ভট্টাচার্য ভাষণ দেন।

সূত্র: কালান্তর, ১.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!