স্বাগত ভারত-সিংহল যুক্ত বিবৃতি
সাম্রাজ্যবাদবিরােধী জাগরণের জোয়ারে ভারত-সিংহল যুক্ত বিবৃতির তাৎপর্য অসামান্য। বিশেষতঃ যে মুহুর্তে সাম্রাজ্যবাদ শিরােমণি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যখন সঙ্কট ও দ্বিধার চাপে নতুন রণকৌশল সন্ধনের জন্য ব্যগ্র, তখন এশিয়ার দুটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐক্যমতকে লঘু করে দেখার অবকাশ নেই।
বাঙলাদেশে শরণার্থী সমস্যার ব্যাপারে ভারত ও সিংহলের অভিন্ন মত, ভারত মহাসাগরে সিংহল প্রস্তাবিত শান্তি অঞ্চল, ঐতিহাসিক ভারত-সােভিয়েত চুক্তি ও উভয় দেশের মধ্যে অর্থনীতিক-শিল্পগত সহযােগিতার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আলােচনার সূত্রপাত এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা। তৃতীয় বিশ্বের দুটি দেশ, যাদের বৈদেশিক নীতির মূল ভিত্তি জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি, তাদের এই পদক্ষেপ সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিঃসন্দেহে অস্বস্তিজনক, বিশেষতঃ এই দুটি দেশের সঙ্গেই যখন সমাজতান্ত্রিক ও সদ্য স্বাধীন দেশগুলির মৈত্রীবন্ধন সুদৃঢ়তর হচ্ছে।
বাঙলাদেশ সম্পর্কিত প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পদ্ধতির অনিবার্যতা যুক্ত বিবৃতির আর একটি উল্লেখ্য অংশ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক ইয়াহিয়া খানের এতে ক্রোধ হতেই পারে, কিন্তু ইয়াহিয়ার মতাে ভারত ও সিংহলের জনগণ (যারা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদবিরােধী গণসংহতির প্রতীক) নিকসনের কাছে দাসখত লিখে দেয় নি। আমরা আশা করব এই যুক্ত বিবৃতির প্রকৃত ভিত্তি প্রসারিত হােক এবং ধীরে ধীরে সমগ্র তৃতীয় বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হােক তাদের মূল শক্ত সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে।
সূত্র: কালান্তর, ১২.১০.১৯৭১