You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরণার্থীদের সমস্যা

মহাশয়,
বাঙলাদেশের শরণার্থীদের প্রশ্ন বহু সমস্যা কণটকিত এবং এ-ও সত্য যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকার নিজেদের সাধ্যমত এর সামধানে সচেষ্ট। তবুও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বিশেষ করে এই ব্যাপারে দুটি সমস্যা আজকের দিনে খুবই জরুরী বলে মনে করছি এবং তার প্রতি আপনার পত্রিকা মারফত সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রথমতঃ রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলমান স্বাধীন বাঙলাদেশের যথাসম্ভব বেশী সংখ্যক শ্রমিক, কৃষক ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে যে মুক্তিফৌজ গড়ে তুলতে হবে তা আশা করি সর্বসম্মত সত্য। কিন্তু যারা মুক্তিফৌজে নাম লেখাবেন তাদের মা, বাবা, ভাইবােন ও স্ত্রী পুত্রদের যদি উপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসা ইত্যাদির সুব্যবস্থা না করা হয় তবে ঐ সমস্ত মৃত্যুভয় তুচ্ছকারী মুক্তি সেনাদের তাদের পরিবার-পরিজনদের বাসস্থান খাদ্য ও নিরাপত্তার ব্যাপারে সব সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতে হয় তবে প্রকৃত লড়াই-এর ময়দানে তাঁদের মনেপ্রাণে কতটা যে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে তা বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে দেখা দরকার। এই সমস্ত পরিবারবর্গদের জন্য আলাদা ক্যাম্প করা দরকার শুধু খাদ্য বাসস্থান বা চিকিৎসার জন্য নয় এদের বিশেষ ধরণের নিরাপত্তার জন্যও। কারণ বিভিন্ন প্রকারের বিশেষ ধরণের বিপদ-আপদ এদের যে কোন সময় হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ ৮০%, ৯০% পরিবারের সাথে কোন না কোন প্রকারে দূর বা নিকট আত্মীয়তার সূত্রে বাঙলাদেশের জনগণের সাথে সংযােগ রয়ে গিয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে কম বেশী বিভিন্ন সংখ্যায় ওপার বাঙলার সর্বহারা শরণার্থী এসে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে সরকারের নীতি অনুসারে শুধু ক্যাম্পবাসীরাই রেশন পাবার অধিকারী। ফলে আজ প্রায় প্রতিটি পরিবার এক তীব্র সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বাস্তবতা ও সহানুভূতির সাথে এই সমস্যার বিচার ও সমাধান করতে হবে। শুধু ক্যাম্পে আশ্রয় না বললেই চলবে না। কারণ ক্যাম্পে সকলের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না এবং সব সময় সকলের পক্ষে ক্যাম্পের বর্তমান যা অবস্থা ও ব্যবস্থা তাতে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। শুধু গতানুগতিক ও আমলাতান্ত্রিকভাবে ক্যাম্প দেখিয়ে দিলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। মাঝখান থেকে পশ্চিমবাঙলার বহু পরিবার এই সমস্যায় ইছায় বা অনিচ্ছায় গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছেন ও দিনের পর দিন প্রকৃত পক্ষে এদের ভিতর সরকার বিরােধী এক প্রচণ্ড বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এদের যদি পুরা রেশন না-ও দেওয়া যায় (যা দিলে খুবই ভাল হয় এবং দেওয়া উচিত) অন্ততঃ পক্ষে এদের Temporary Ration Card issue করা এই মুহূর্তে দরকার যাতে কমপক্ষে কনট্রোল দলে এরা খাদ্যবস্তুগুলাে পান তাতে অন্ততঃ এই ভাগ্যহীনরা এবং এদের এ বাঙলার আত্মীয়রা কিছুটা সুবিধা ও আরাম পান।
আশা করি আমাদের বর্তমান জনপ্রিয় সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করবেন ও অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ইতি–
ডাঃ রঞ্জিত চ্যাটাজি
সহসভাপতি
বাঙলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতি, শিলিগুড়ি

সূত্র: কালান্তর, ২৯.৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!