You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাছাড়ের শরণার্থী শিবিরঃ একটি সমীক্ষা
– অরবিন্দ পাল

বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের মধ্যে একমাত্র কাছাড়েই সরকারী মতে বিভিন্ন শিবিরে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার এসেছেন। কাছাড়ের সীমান্ত দিয়ে শরণার্থীদের আগমন আজ অবধি অব্যাহত। একমাত্র করিমগঞ্জ মুহকুমাতেই বত্রিশটি ত্রাণ শিবির খােলা হযেছে। তন্মধ্যে দক্ষিণ করিমগঞ্জ খণ্ড-উন্নয়ন অধিকারিকের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি শিবির রয়েছে। পাঁচটি শিবিরে ৩৭৩টি পরিবারে ২০১৩ জনের মধ্যে ৩২৭ জন আত্মীয়-স্বজনের কাছে চলে গেছেন এবং দু’জনের মৃত্যু ছাড়া এখন আছেন ১৬৮৪জন। এখানে উল্লেখযােগ্য, কাছাড়ের সব ক’টি শিবির সরকারী পরিচালনাধীন থাকলেও দক্ষিণ করিমগঞ্জের পাচটির মধ্যে চারটিই নিলাম বাজার ত্রাণ সমিতির পক্ষে স্থানীয় শিক্ষক ও সমাজসেবী বেসরকারী ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত সমিতির ব্যয়ে একটা শিবিরে (বাটইয়া) সকালে টিফিনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

পরিচালনা ও সরবরাহ ব্যবস্থা
সরকারের তরফ থেকে শরণার্থী শিবিরে প্রত্যহ দু’বেলা খাদ্য সরবরাহের বরাদ্দ করা হলেও, সরকারী বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অসংগতি এবং অসমন্বয় সুষ্ঠু ত্রাণ কার্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আবার শিবির কর্তৃপক্ষ রেশন সামগ্রী নির্ধারিত পরিমাণ থেকে কম দিচ্ছেন বলে অভিযােগ শােনা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব ক্ষেত্রে ওজন পরিমাপক যন্ত্রে অভাব দেখানাে হচ্ছে। তাছাড়াও সরকারী বিভাগের আমলাতান্ত্রিক মনােভাব, রেশন সরবরাহে অথবা যে-কোনাে আশু প্রয়ােজনীয় ব্যাপারে অহেতুক সময় নষ্ট করা হয় বলে অনেকের মনেই ক্ষোভ সঞ্চার করছে।

শরণার্থীদের অসুবিধা
ছােট ছােট ছেলেমেয়েদের জন্য সকালে টিফিনের কোন ব্যবস্থা না থাকা ওদের আর্ত-রূপ মর্মন্তুদ। তদুপরি রয়েছে শিশু ও রােগীদের পথ্য এবং টাকা পয়সার সমস্যা। অনেকের কাছে টাকা-কড়ি থাকা সত্ত্বেও সহজে বিনিময় করতে পারছেন ; কেউ-বা হাতে পয়সা নেই অথচ নিত্য প্রয়ােজনীয় কিছু কিছু দরকারী সামগ্রীর জন্যে বেজায় ভুগছেন, কেউ কেউ প্রয়ােজনীয় পরিধানের বস্ত্র বা বিছানা-পত্তর অবধি নিয়ে আসতে পারেননি। এ ছাড়াও সমস্যা হলে এক পরিবারের লােকেরা বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, অথচ বিভিন্ন শিবিরবাসী আত্মীয়-স্বজনের সংগে যােগাযােগ করতে পারছেন না।…

সূত্র: কালান্তর, ১.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!