You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.21 | বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি ব্যর্থ হলে শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ভারত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি ব্যর্থ হলে শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ভারত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে
বাঙলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সরকার সােভিয়েত ইউনিয়নের সংগে নিয়মিত পরামর্শ করছেন

নয়াদিল্লী, ২০ অক্টোবর (ইউএনআই) শরণার্থীদের নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি ব্যর্থ হলে ভারত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। পাক-ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার প্রতিনিয়ত সােভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। বাঙলাদেশে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যকে ভারত আক্রমণের উপলক্ষ্য হিসাবে ভাবলে তার যথােপযুক্ত উত্তর দেওয়া হবে। ভারত সরকারের জনৈক মুখপাত্র আজ একথা ঘােষণা করেছেন।
নিরাপত্তা ও সম্মানের সংগে যাতে শরণার্থীরা স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি পাকিস্তানকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হলে ভারত নিজ জাতীয় স্বার্থের দিকে চেয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার হাতে রাখবে। আজ এখানে ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র একথা ঘােষণা করেন।
প্রেসিডেন্ট টিটোর ভারত সফর শেষে যে যুক্ত ইস্তেহার প্রকাশিত হয়েছে, মুখপাত্রটি তার ব্যাখ্যা করছিলেন। ইস্তেহারে বলা হয়েছিল, ভারত এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত যে শরণার্থীরা স্বদেশে ফিরে যাবেনই। ভারতের এই দৃঢ় প্রত্যয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্রটি বলেন, “ভারত এ বিষয়ে সুনিশ্চিত যে, পাকিস্তানের এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা উচিত যার দ্বারা শরণার্থীরা নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন। যদি তা করা না হয় তবে আমরা আশা করব যে, বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ দেবে। যদি বিশ্ব রাষ্ট্রগুলি এ ব্যাপারে ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই নিজস্ব পথ ও উপায় নির্ধারণ করতে হবে। তবে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে আকারও প্রকৃতি সম্পর্কে আমি বলছি না। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ আমরা শুরু করব না। কিন্তু আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের অধিকার হাতে রাখছি।”
মুখপাত্রটি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য অপসারণ করার ব্যাপারে যেসব পরােক্ষ প্রস্তাব এসেছে তা বাঙলাদেশের মূল সমস্যার সমাধান নয়। যদিও প্রত্যক্ষভাবে কোনও প্রস্তাব রাখা হয়নি তবে প্রধানতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এ ব্যাপারে কিছু কিছু ধারণা সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
সীমান্তে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির বিষয়টি নিয়ে ভারত নিরাপত্তা পরিষদে যাবে না। “একাজ করার কোনও যুক্তিসংগত কারণও নেই।” বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মুখপাত্রটি জানান, উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সােভিয়েত ইউনিয়নের সংগে প্রতিনিয়ত পরামর্শ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত আক্রমণ করার আগে পাকিস্তানকে দু’বার ভেবে দেখতে হবে। আমাদের নিজস্ব শক্তির জন্যই যে তাদের ভেবে দেখতে হবে তাই নয়, ভেবে দেখতে হবে ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তির কথা”। তাঁর মতে এই চুক্তিই পাকিস্তানের যুদ্ধান্মদনাকে বেশ কিছুটা দমিয়ে দিয়েছে।
মুখপাত্রটি জানান, প্রেসিডেন্ট টিটো বাঙলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে ভারতের সংগে পূর্ণ ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন।
ভারত পাকিস্তানের আকাশ ও স্থল সীমা লঙ্ঘন করেছে বলে যে অভিযােগ করা হয়েছে, মুখপাত্রটি তা সরাসরি অগ্রাহ্য করে বলেন, “বরং ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বিপরীত।”
সৈন্য অপসারণের প্রস্তাব ভারত কেন অগ্রাহ্য করেছে তার কারণ বিশ্লেষণ করে মুখপাত্রটি বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। পাকিস্তান তিনবার ভারত আক্রমণ করেছে। আমাদের হয়েছে এবং তিনবার বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছি। তাই এবার আর আমরা কোনরকম ঝুঁকি নিচ্ছি না। একই সঙ্গে আমরা কোনওরূপ আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিচ্ছি না, তবে আক্রান্ত হলে আমরা নিশ্চয়ই পাকিস্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দেব।”
মুখপাত্রটি বলেন, প্রেসিডেন্ট টিটো কেবল মাত্র শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের দাবিকেই স্বীকার করেছেন তাই নয় উপরম্ভ এ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক দায়িত্বের কথাও বলেছেন।
একটি প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্রটি জানান, “বাঙলাদেশে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান আলােচনা হতে পারে না। অন্যথায়, ঘােড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া হবে না।”
বাঙলাদেশে মুক্তিবাহিনী সাফল্য অর্জন করলে পাকিস্তান ভারতের সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হবে বলে পাকিস্তান যে বিবৃতি দিয়েছে তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছি যে, মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের সংগে ভারতকে যুক্ত করা যাবে না। মুক্তিবাহিনী তাদের নিজেদের শক্তিতেই দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভারত অথবা অন্য কোনও দেশের হাতের পুতুল নয়। যদি মুক্তিবাহিনীর সাফল্যকে পাকিস্তান ভারত আক্রমণের উপলক্ষ্য বলে ভাবে তবে আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দেব।

সূত্র: কালান্তর, ২১.১০.১৯৭১