মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে এসেছে
গণতন্ত্র প্রিয় দেশমাত্রেরই উচিত আমাদের সাহায্য করা
-ইন্দিরা গান্ধী
ওয়াশিংটন, ৫ নভেম্বর (ইউএনআই) গতকার রাত্রে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানার্থে হােয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক ভােজসভায় শ্রীমতি গান্ধী, পূর্ববঙ্গ থেকে আগত ৯৫ লক্ষ শরণার্থী আগমনের ফলে ভারত যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে তার জন্য, গণতান্ত্রিক নীতির যারা মূল্য দেয় বিশ্বের সেই সমস্ত দেশের সহানুভূতি ও সমর্থন কামান করে ভাষণ দেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আহুত এই সভায় শ্রীমতি গান্ধী শ্রোতাদের কাছে জোরের সঙ্গে বলেন যে, এই বিরাট পরিমাণ শরণার্থী আগমনের ব্যাপারটি চিন্তা করা যেতে পারে যদি হঠাৎ দেখা যায় যে, মিচিগান রাজ্যের সমস্ত লােক একদিন নিউইয়ক রাজ্যে যেয়ে উপস্থিত হয়।
তিনি আরও বলেন যে, এই শরণার্থী আগমন, কোন বর্ধিষ্ণু দেশে হয়নি, জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের দিক থেকে সেদেশ আগে থেকেই বিপন্ন ছিল।
ভারত তার বাধাহীন সামাজিক ঐতিহ্যের জন্য এই মূল্য দিয়ে আসছে বলে তিনি মনে করেন।
সমস্যাটি বােঝাবার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের হাত থেকে মানুষ ঐক্য, আত্মসংযম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন।”
ভারতের বন্ধুরা বিশেষ করে যারা তার মতই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তারা নিশ্চয়ই আশা করবে যে, ভারত তার নীতি বিসর্জন দেবে না বলে জানান। “আজ যদি আমাদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আমাদের স্থায়ীত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়ে থাকে তবে আমাদের গণতান্ত্রিক নীতি ও ভৌগােলিক অবস্থানের ফলে মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর আগমনের ফলেই তা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন যে, যারা অত্যাচারের ফল ভােগ করছে ও নিজেদের অতিকষ্টে সংযত রাখছে তাদের সঙ্গে যারা এই কষ্টকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে তাদের এক করে কিভাবে দেখা হচ্ছে তা ভারতীয়রা বুঝতে পারেন না।
“এই গােলযােগের মূল্যেৎপাটনের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকেই চেষ্টা করতে হবে,” বলে তিনি ঘােষণা করেন।
সূত্র: কালান্তর, ৬.১১.১৯৭১