You dont have javascript enabled! Please enable it!

সব বন্ধ, তবু সব নাকি ‘শান্ত’!

বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ আগুনে জ্বলছে অথচ করাচী রেডিওর ভাষ্য অনুযায়ী সব শান্ত, সব স্বাভাবিক। দিনের পর দিন এই মিথ্যাচার চলছিল। আজ, বৃহস্পতিবার, আড়াল থেকে আর্ত চিৎকার শােনা গেছে। আজ করাচী থেকে প্রচারিত বাংলা সংবাদে সামরিক বাহিনীর পায়ের তলায় চোরাবালির কথা ফাঁস হয়ে গেছে। আজ এক বিশেষ ঘােষণায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত তেল কমপানির কর্মচারীদের-এসাে, বারমা শেল এবং পাকিস্তান অয়েল কোম্পানির সমস্ত কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যােগদান করতে হবে। অর্থাৎ, এতদিন এরা কাজে যােগ দেয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশে গুরুতর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। সামরিক যানবাহন চলাচলের জন্য তেলের অভাব।

আর এক ঘােষণায় হুমকী দেওয়া হয়েছে, নদী পরিবহন কর্মীরা যদি কাজে যােগ না দেয়, তাহলে সবার লাইসেন্স বাতিল করা হবে। নদী পরিবহন কর্মীরা অবশ্য এর আগে বার বার এরকম ভয় দেখানাে সত্ত্বেও কাজে যােগদান করেন নি। রাস্তা অগম্য, রেল লাইন বিচ্ছিন্ন, পাক বাহিনী নদী পথ ব্যবহার করার জন্য উদগ্রীব। এমন কি, গত সপ্তাহে বলা হয়েছিল, নদী পরিবহন কর্মীরা এখনও কাজে যােগ দিলে তাদের পূর্ব অনুপস্থিতি ক্ষমা করা হবে। কেউ আক্ষেপও করেন নি।

সামরিক কর্তৃপক্ষ আবার আদেশ করেছেন, কারুর কাছে কোনাে অস্ত্র রাখা চলবে না। সব থানায় জমা দিতে হবে। এমন কি লােহার রড, লাঠি রাখাও নিষিদ্ধ। বাংলাদেশের সমস্ত বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ কেটে জমা দিতে হবে কিনা, তা অবশ্য বলা হয়নি।

কোন আধা সামরিক বা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতেও কারুর যােগদান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাহলে, এইসব বাহিনীতে দলে দলে মানুষ নিশ্চয়ই যােগ দিচ্ছে?

আর এক হুকুমে বাংলাদেশের সমস্ত ব্যাংকের টাকা পয়সার লেনদেন-বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লকার সীল করে দিতে হবে। ব্যাংক পরিচালনা অবশ্য এখনাে অসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে। ব্যাংক বন্ধ, দেশের প্রায় সব সংস্থার কাজকর্ম বন্ধ, অথচ দেশের অবস্থা স্বাভাবিক।

২২ এপ্রিল ‘৭১

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!