You dont have javascript enabled! Please enable it!

ওয়াশিংটন পোস্ট, ২৭ অক্টোবর ১৯৭১
বাংলার যুদ্ধ শান্তঃ শান্তির প্রতি নতুন হুমকি
পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ সম্পর্কে বিতর্কিত রিপোর্ট
– লি লেস্কেজ
ওয়াশিংটন পোস্ট ফরেন সার্ভিস

চাতক, পূর্ব পাকিস্তান ২৬ অক্টোবর- পাকিস্তান এ ঘটে যাওয়া দীর্ঘতম এবং বৃহত্তম সাম্প্রতিক যুদ্ধের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এই ছোট সীমান্ত ঘেষা শহরে় সংঘটিত হয়। পাকিস্তান সঙ্কটের সময় অনেক অন্যান্য ঘটনার মত, চাতক এর যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তান থেকে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন বাড়িয়ে তোলে। প্রকৃতভাবে আলোকপাত করা গেলে, সম্ভাবনা থেকে যায়, যে একটি জাতি নিজেই বিশ্বাস করবে যে তাদের সাথে ভুল হচ্ছে এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে পরিপূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে। শত্রুতা দুই দেশের মধ্যে বৃদ্ধি পায় যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মার্চ মাসে, বঙ্গভঙ্গের উদ্দেশ্যে একটি স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করতে যায়। পাকিস্তানে নয়, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চল পাঞ্জাবীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়, যারা পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভারত হতে ১০০০ মাইল পশ্চিম থেকে, বাংলা, পার্শ্ববর্তী এলাকা হিসাবে একই। চাতক এর আশেপাশে ঘটা প্রায় সাম্প্রতিক যুদ্ধের সময় ভারতের জাতীয় রেডিও ঘোষণা করে যে পূর্ববাংলার গেরিলা, মুক্তিবাহিনী নামে যারা পরিচিত, তারা ভারত থেকে সমর্থন পেয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যদের একটা সংখ্যা সম্প্রচার শুনছিলো, যখন তারা তিন দিনের যুদ্ধের পর চাতক সদর দপ্তরে বিশ্রামরত ছিলো। তাদের মধ্যে একজন, লিমিটেড কর্নেল সরফরাজ খান মালিককে হত্যা করা হয়েছে, ভারতীয় রেডিও এ ঘোষণা দেয়। কর্নেল, একটি ভোঁতা ব্যক্তি যিনি বিশ্বাস করেন তার সরকার বাঙালিদের সাথে খুব কোমল আচরণ করছে। এবং পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা ভারতীয় সম্প্রচারের দ্বারা আমোদিত হয় নি, “কে বিশ্বাস করতে পারে এমন মিথ্যাবাদীকে? “তিনি জিজ্ঞেস করেন। ” এটা প্রচনফ বিরক্তিকর, আমার স্ত্রীকে টেলিফোন করা লাগবে পূর্ব পাকিস্তানে, শুধু বলতে যে আমি এখনও বেঁচে আছি!” পাকিস্তানি সেনারা চাতক ও পার্শ্ববর্তী ৫ মাইল এলাকা যা শহর ও ভারতের সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত, তার দখল নিয়ে রাখায়, আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হয় না। গেরিলাদের মনোযোগ জুড়ে পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা। অনেক রেল লাইন কাটা হয়, সেনাবাহিনী সড়ক পথ শুধুমাত্র খুলে রেখেছে দ্রুততার জন্য। উড়িয়ে দেয়া সেতু ভবন; পাইলনস এবং বৈদ্যুতিক শক্তি কেন্দ্র অন্তর্ঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গেরিলা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য এখানে সিমেন্ট কারখানা।পূর্ব পাকিস্তানের মত ৭০ লক্ষ মানুষের একটি অঞ্চলে, টালি কারখানা টি একমাত্র ছিলো, যা বন্ধ। কারখানার বেশ কয়েকটি ভবন এর ছাদ আর্টিলারি শেল দ্বারা ভেঙে গিয়েছে এবং যন্ত্রপাতি কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কারখানার ৫০০ শ্রমিক পালিয়ে যায় হামলার সময় এবং এটা নির্দিষ্ট নয় কতজন ফিরতে ইচ্ছুক।

একটি কারখানা কর্মকর্তা বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে আবার অপারেশন হবে। কিন্তু অফিসের আসবাবপত্র রেল বগির উপর চাপিয়ে রাখা হয়। ম্যানেজারকে প্রশ্নকরা হলে বলেন, বিভাগীয় রাজধানীতে তাদের অফিস স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা সিলেট থেকে ২২ মাইল দূরে। দপ্তরের লোকেরা সন্দেহ প্রকাশ করে এই পদক্ষেপ শ্রমিকদের আস্থার উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু, একজন আর্মি মেজর সন্তুষ্ট নয়, “এটা খুব খারাপ, তোমাদের এখানে থাকতে হবে,” মেজর বলেন। একটা অস্বস্তিকর নীরবতা এবং কথোপকথন যুদ্ধের বিবরণ এ ফেরৎ গেলো। লাল টেপ প্রত্যাশিত কারখানা একটি সরকারী শিল্প, অন্য একজন পর্যবেক্ষক সেদিকে আলোকপাত করেন। সেখানে ক্ষতি সমূহের রিপোর্ট নেয়া হবে এবং তারপর সেখানে সমীক্ষার রিপোর্ট পুনর্বিবেচনা হবে। এবং খুচরা যন্ত্রাংশ এর জন্য অনুরোধ করা হবে। অবশেষে কেউ একজন কানাডিয়ান বা জাপানি বিশেষজ্ঞ পাঠাবে, তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেন। “এটাতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।” প্রায় ১০০০ মুক্তিবাহিনী চাতকের উপর হামলায় অংশ নেয় বলে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানান। গেরিলাদের রাতে সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে যায় এবং উভয় পার ঘেষে সুরমা নদীর ধারে অবস্থান নেয়, যা কারখানা থেকে শহর কে আলাদা করেছে। প্রায় আটটার সময়, ১৩ অক্টোবর এ ভারতীয় আর্টিলারি খুলে দেয়া হউ এবং গেরিলারা ছোট পাকিস্তানী দলটির বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করেন। যুদ্ধ পুরো দুইদিন ধরে চলে এবং বিভাগ থেকে আগত পাকিস্তানি সৈন্য এবং আর্টিলারি দলের খুব কাছে থেকে, তৃতীয় দিনের সকালে ৩০০ জন এর একটি দল নদী ক্রস করতে ও গেরিলাদের দল ভারতে ফিরে যেতে সক্ষম ছিল। দেহ গনণা অন্য কোথাকার চেয়ে এখানে বেশি সঠিক হয়। কর্নেল সরফরাজ বলেন, ২৫০ এর বেশি গেরিলা নিহত হয়েছে। একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ১৫০ জনেরও বেশি দাবী করেন। আর একটি তৃতীয় সামরিক উৎস রিপোর্ট যখন প্রকাশ করে প্রায় ১০০ আক্রমণকারী মারা যান, একটি বিষয়ে তারা একমত যে, তার চেয়ে তুলনায় ১০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পাকিস্তানি চার্জ ভারতীয়দের ব্রিটিশদের তৈরি বন্দুক এর ক্ষেত্র পরিসর থেকে হিসাব মতে, পাকিস্তানী কমান্ড বুঝতে পারে যে ভারতীয় আর্টিলারির মধ্যে প্রায় ১০০০ গজেরো বেশি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে গিয়েছে চাতক যুদ্ধের সময়। তারা ভারতীয় সৈন্যরা যে গেরিলা আন্দোলন পরিচালনা এবং প্রদান সীমান্ত জুড়ে ৫০০০ গজ এ হামলাকারীদের হামানদিস্তা আগুন দিয়্র সাহায্য করে বলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দোষারোপ করে। স্থানীয় গ্রামবাসী পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে ভালভাবেই ভারতীয়দের আনাগোনা দেখে। একজন কর্মকর্তা বলেনন, তারা বিশ্বাস করে ভারতের কৌশলে হচ্ছে, ফ্রন্টলাইন এ বাঙালি গেরিলাদের ব্যবহার করে যেন বাজেয়াপ্ত করা যায় পাকিস্তানের অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক থলে। এ প্রচেষ্টায়, যদি কোনো ধরনের হামলা সফল হয়, কমান্ডার এর ব্যাখ্যানুযায়ী, ভারতীয় সেনা ইউনিট টালি পকেট দখল নিবে, এবং ঘনিষ্ঠ সমর্থনের জন্য একটি দ্বিতীয় গেরিলা হামলার প্রস্তুতি নিবে। যেন তাদেরকে পাকিস্তান এর গভীরে ঠেলে পাঠানো যায়। ” পিছন দিকে থেকে এবং শুধুমাত্র অগ্নি ও লজিস্টিক সহায়তা, আচ্ছাদন প্রদান করে, ভারতীয়রা দখল এড়াতে সক্ষম হচ্ছে বা নিহত ও হচ্ছেনা। এবং এতে করে, পাকিস্তান অনুপ্রবেশ এর প্রমাণ প্রদর্শন করতে পারবে না” – টালি কর্মকর্তা বলেন। তার অভিযোগ সত্য হোক বা না, তারা যুদ্ধের একটি ছোট অংশ স্নায়ুর উপরেও ভারত এবং পাকিস্তান এর রাজধানী হতে তাদের সীমান্তে পরিচালনা করছে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!