করাচীর বাহাদুর সুতাকল শ্রমিক
একটি বুর্জোয়া রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত মালিকানা যখন ক্রমবর্ধমান মুনাফার লােভে শ্রমিকদের যাবতীয় চাহিদাকে চূড়ান্তভাবে পদদলিত করে, শ্রমিক অসন্তোষ পদদলিত করে, শ্রমিক সন্তোষ তখনই অগ্নিগর্ভ রূপ নেয়। ঠিক এমনই এক বৈপ্লবিক ঘটনা সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে ঘটে গেছে। এখানকার একটি সুতাকল প্রকল্পের জঙ্গী শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষকে হটিয়ে কারখানার নিয়ন্ত্রণ দায়িত্ব নিজেরা গ্রহণ করেছে। বলা বাহুল্য, শ্রমিকদের এই প্রকল্প নিয়ন্ত্রণাধিকার মালিক ও তার সহযােগী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র শাসকরা বরদাস্ত করতে পারে নি। তারা শ্রমিকদের এই অভুত্থানকে একটি চ্যালেঞ্জ বা মর্যাদার প্রশ্ন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই একচেটিয়া মুনাফাবাজদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনী ও পুলিশ ঐ শ্রমিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শ্রমিকের ৪ ঘন্টারও ওপর বীরত্বপূর্ণভাবে এই হিংস্র আক্রমণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে মােকাবিলা করেছে। মােট দু-হাজার শ্রমিকের মধ্যে এক হাজার জনকে ইতিমধ্যেই সামরিক আইনভঙ্গের’ অজুহাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এভাবেই নিপীড়নমূলক মিলিটারি একনায়কত্ব ‘বেইমান’ শ্রমিকদের বে-আদবি’-র প্রতিশােধ গ্রহণ করেছে।
আশা ছিল পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর মালিক ও রাষ্ট্রযন্ত্র দেশের মানুষের মর্জি বুঝতে পেরে তা থেকে কিছুটা শিক্ষা গ্রহণ করবে। গণজাগরণ আজ পাকিস্তানের পূর্ব-পশ্চিমে ঢেউয়ের ম পড়ছে। এই অগ্নিগর্ভ পটভূমিতে শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবিত্ত মানুষজন সম্পর্কে শাসক ও মালিকশ্রেণীকে একটু হুশিয়ার হয়ে চলতে হবে বৈকি।
সূত্র: কালান্তর, ১৬.২.১৯৭১