১৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ মন্ত্রী সভা বৈঠকে জাতীয় সঙ্গীত অনুমোদন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি দেশ বন্দনামূলক গানটির প্রথম ১০ লাইন স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠানে গানটির প্রথম চার লাইন যন্ত্র সঙ্গীত হিসেবে বাজানো হবে।
নোটঃ ১০ জানুয়ারী দিল্লী থেকে ফেরার পথে বিমানে সহযাত্রী ভারতীয় কর্মকর্তা শশাঙ্ক ব্যানার্জি এবং কূটনীতিক ফারুক চৌধুরীকে এ গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে মনোনয়নের কথা বলেছিলেন শেখ মুজিব। ৭১ পূর্ব গানটি বহুল প্রচলিত ছিল না। এই গানের একটি রেকর্ড তখন বাজারে চালু ছিল এবং সেটি ছিল সুচিত্রা মিত্রের। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকাশহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা থেকে ঘোষিত ইশতেহারে এইগানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার অজিত রায় গানটির বর্তমানে প্রচলিত যন্ত্রসুর করেন। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারী বাংলাদেশ সরকার গানটির প্রথম দশ লাইন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন (মোট চরণ সংখ্যা পঁচিশটি) এবং যন্ত্রসঙ্গীতে ও সামরিক বাহিনীতে ব্যবহার করা হয় প্রথম চারটি লাইন। একই বছর বাংলাদেশের জাতীয়সংগীত হিসেবে ব্যবহার করা “আমার সোনার বাংলা” গানটির স্বরলিপি বিশ্বভারতী সংগীত বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত করা হয়।
১৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ইন্দিরা গান্ধীর অভিনন্দন
বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেন দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ ভাবে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন আপনার বিজ্ঞ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের জনগন স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা এবং মানবিক মর্যাদার রক্ষক হিসেবে তাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আশ্বাস লাভ করবে। আমরা ঐকান্তিকভাবে আশা করি যে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি ও বন্ধুত্তের স্বার্থে আমাদের এ দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র একযোগে কাজ করে যাবে।
১৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ সকল বকেয়া খাজনা আদায় বন্ধ।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলা ১৩৭৮ সাল পর্যন্ত সকল বকেয়া খাজনা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। তা এখন থেকে আদায় বন্ধ থাকবে। কৃষককুল জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহন করায় এবং গ্রামাঞ্চলে বর্বর শত্রুরা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রীসভা এ সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তে বলা হয় বর্তমান জনসাধারন যারা জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে সাহসিকতার সাথে অংশ নিয়েছেন তারা আজ অস্তিত্তের জন্য সংগ্রাম করছেন। সমগ্র গ্রাম বাংলা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা হয়েছে এবং এ জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে তাদের অবিলম্বে দায় থেকে উপশম দেয়ার জন্য খাজনা মওকুফ করা হয়েছে।
১৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ শেখ মুজিবের সাথে ওসমানী সহ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ
ধানমণ্ডির অস্থায়ী বাসভবনে সকালে পৃথক ভাবে কর্নেল ওসমানী এবং পরে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেছেন। তারা সেখানে বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার, লেঃ কঃ শফিউল্লাহ, মেজর মীর শওকত আলী, মেজর মঞ্জুর, খালেদ মোশারর্ মেজর মইনুল সহ শীর্ষ কয়েক অফিসার সাথে ছিলেন।
১৩ জানুয়ারী ১৯৭২
বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এর জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার মার্কিন প্রসাশন কে অনুরধ করেন । শেখ মুজিব প্রধান মন্ত্রী এবং বিচারপতি আবু সাঈদ রাষ্ট্র পতি হিসাবে শপথ নিয়াছেন ।ভারত বাংলাদেশী হাজীদের ফেরত আনবে । দেশের পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেয়া হয়েছে ।তবে মনোগ্রামে মানচিত্র থাকবে ।ঢাকায় নতুন ভারতীয় মিশন প্রধান হিসাবে এন দিক্ষিত যোগদান করেছেন ।শেখ মুজিবের সাথে এম এ জি ওসমানী, কাদেরিয়া বাহিনী প্রধান কাদের সিদ্দিকি ,জাতীয় লীগ সাধারন সম্পাদক অলি আহাদ দেখা করেছেন ।সৈয়দ নজরুলের সাথে অবাঙ্গালীদের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাত করেছেন ।
১৩ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ শেখ মুজিবের লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সাক্ষাৎ
ধানমণ্ডির অস্থায়ী বাসভবনে সকালে লেঃ জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেছেন। তিনি সেখানে এক ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন মেজর জেনারেল বি এন সরকার।
পরে ভারতীয় নৌ বাহিনীর ৪ জন অফিসার প্রধান মন্ত্রী শেখ মুজিবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।