You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.01.10 | ১০ জানুয়ারি ১৯৭১ এর সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ সিলেটে চা শ্রমিক সমাবেশ ও নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্য দের সংবর্ধনা
সিলেটের খাদিম নগরে এক বিশাল চা শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সিলেট জেলার সকল জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ভাষণে আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন বাংলাদেশের জনগন ৬ দফার পক্ষে রায় দিয়েছে তাই শাসনতন্ত্র হতে হবে ৬ দফা ভিত্তিক। ৬ দফার বাহিরে কোন শাসনতন্ত্র আওয়ামী লীগ গ্রহন করবে না। খাদিম নগর আঞ্চলিক আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্তে অনুষ্ঠিত সভায় এমএনএ দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএনএ মোহাম্মদ ইলিয়াসসহ অনেকে বক্তৃতা দেন।

 

 

 

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ পটুয়াখালীতে শেখ মুজিব

আমতলি জনসভা শেষে ৯ তারিখ শেখ মুজিব পটুয়াখালীতে রাত্রিযাপন করেন।
শেখ মুজিব আজ পটুয়াখালীতে জনসভায় বলেন বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণ ও তাদের নিজেদের ভাগ্য ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের অধিকার আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব না, কারণ জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমেই এ ব্যাপারে তাদের রায় দিয়েছে। গণবিরোধী শক্তি নির্বাচনের ফলাফলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেও তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী আবার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়া তাঁর জীবনের উপর সাম্প্রতিক হামলার উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণশত্রুরা পরাজিত হয়ে বাংলার মানুষের কণ্ঠরোধের জন্য অন্যপন্থা অবলম্বন করেছে। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরাট সাফল্যের সাথেই পাবনার দলীয় নবনির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, খুলনায় একজন আওয়ামী লীগ কর্মী হত্যারও উল্লেখ করেন।

পরে বিকেলে গলাচিপায় এক জনসভায় সরকারী কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন মনিব না সেজে জনগনের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করুন। তিনি তাদের আইয়ুব আমলের দৃষ্টিভঙ্গী বদল করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ৬ দফার সরকার গঠিত হলে সে সরকার উপকূলীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এবং বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করবে। বাঙ্গালিরা এক তা প্রমানের জন্য তিনি জনগণকে ৬ দফার পক্ষে ভোট দেয়ার আহবান জানান।

 

 

 

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ নোয়াখালীতে মিজান চৌধুরী

নোয়াখালীর চাপরাশির হাটে এক জনসভায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী বলেন দিকে দিকে বাংলার মানুষ যেভাবে রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় দিয়েছে এতদঞ্চলের মানুষ তার অন্যথা করবে না। পাকিস্তান আন্দোলন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নোয়াখালীর মানুষ যেভাবে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছে ঠিক একই ভাবে নোয়াখালীর মানুষ আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলার স্বাধিকার অর্জনে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন ইহা সুনিশ্চিত। তিনি বলেন সার্জেন্ট জহুরুল হক নোয়াখালীর সন্তান। তিনি এবং অনেকেই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের প্রান বিসর্জন দিয়েছেন। নোয়াখালীর জনগন যদি নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভুল করেন তবে শহীদের আত্মা শান্তি পাবেনা। এর আগে তিনি করের হাটে এক সমাবেশে ভাষণ দেন। এখানে তিনি বলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাজী ইদ্রিসকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নন। তিনি দলের নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানান। সভায় আরও ভাষণ দেন জাতীয় পরিষদ আসনের প্রার্থী আব্দুল মালেক উকিল, নুরুল হক এবং প্রাদেশিক পরিষদের আসনের প্রার্থী সহিদউদ্দিন ইস্কান্দার।

 

 

 

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ শাসনতন্ত্র প্রনয়নে সহযোগিতা করব-ভুট্টো

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পেশোয়ার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চক আরবার রোডের পাশে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় পুনরায় দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন যে, তাঁর দল পাকিস্তানের সামগ্রিক সংহতির কথা মনে রেখে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করবে। তিনি বলেন শাসনতন্ত্র প্রণয়নে তিনি জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। তার আগেই তিনি জনগন দ্বারা শাসনতন্ত্র অনুমোদন করিয়ে নিতে চান।
উক্ত জনসভায় বক্তৃতাদানকালে তিনি আরো বলেন, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন একটি সূক্ষ্ম বিষয়, তাই তিনি একে রাজপথে টেনে আনতে চান না। শাসনতন্ত্র প্রণয়ণের কাজে পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করবো বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।

 

 

 

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ ভাসানীর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবী

পল্টনে সমমনা কয়েকটি দলের সম্মেলনে মওলানা ভাসানী লাহোর প্রস্তাবের আলোকে পুনরায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবীতে সরকারের কাছে গণভোটের দাবী করেছেন। তিনি আশা করেন আসন্ন শাসনতন্ত্রে পাকিস্তানের দুটি অংশ সার্বভৌমত্ব অর্জন করবে। তিনি বলেন আজ হোক আর কাল হোক স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান হবেই। তিনি বলেন লাহোর প্রস্তাব কোন ব্যক্তি বিশেষের প্রস্তাব ছিল না এটি ছিল মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের টানা ২৭ ঘণ্টা পরিশ্রমের ফল। তিনি বলেন পাকিস্তান আন্দোলন করে আমরা ১৪ জেলা হারিয়েছি, কলকাতা হারিয়েছি। পূর্ব পাকিস্তানের ভুমি সঙ্কটের কারনে ২৫ লাখ বাঙালি আসামে ৬ লাখ বাঙ্গালী বার্মায় চলে গিয়েছে। সভার শুরুতে স্লোগান নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হলে অনেক শ্রোতা সভাস্থল ত্যাগ করে। মশিউর রহমান সভাস্থল ত্যাগ করলে আতাউর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় জাতীয় লীগ সাধারন সম্পাদক শাহ আজিজুর রহমান বলেন দিল্লী প্রস্তাবে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন হয়নি। এরপর মাইক নিয়ে ভাসানি আবার বক্তৃতা দিতে থাকেন। বক্তৃতা দিতে না পেরে আতাউর রহমান খান সভাস্থল ত্যাগ করেন।

 

 

 

১০ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ ইয়াহিয়া আজ আসছেন

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শাসনতন্ত্র ও জাতীয় পরিষদের আসন্ন অধিবেশন বিষয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার জন্য সংক্ষিপ্ত সফরে আজ ঢাকা আসছেন। এ সফরে তিনি উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করতে পারেন বলিয়া সরকারী সুত্র জানিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারে উপকূলীয় এলাকায় আছেন। তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে ঢাকা রওয়ানা হয়েছেন।