You dont have javascript enabled! Please enable it! ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ এর সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ফজলুল কাদের চৌধুরীর গ্রেফতারের কাহিনী সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

 

 

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ বাংলাদেশ প্রশ্নে ইন্দিরা গান্ধী

দিল্লীর স্পোর্টস গ্রাউনড মাঠে এক সমাবেশে ইন্দিরা গান্ধী বলেন কতিপয় বিদেশী রাষ্ট্রের একতরফা প্রচার সত্ত্বেও তিনি তার নীতিতে অটল থাকবেন। তিনি বলেন যে সকল রাষ্ট্র বাংলাদেশে দীর্ঘ ৯ মাসে লাখ লাখ লোকের হত্যাযজ্ঞে একটু টু শব্দ করেনি তারা এখন বিহারী হত্যা বা তাদের খাদ্য সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করার মিথ্যা গল্প প্রচার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কথা বলেছেন তারা তাকে জানিয়েছে এসকল সংবাদ মিথ্যা। তিনি সকলকে যুদ্ধকালীন ঐক্য বজায় রাখার আহবান জানান।

 

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ দালাল দেহপসারনীকে খুজছে মুক্তিবাহিনী

সৈয়দা জাহানারা জানু নামে গোপীবাগের এক দেহপসারনীকে খুজছে মুক্তিবাহিনী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে এবং তার কয়েকজন সহযোগী পাক উচ্চপদস্থও সেনা কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জন করত। তার খদ্দেরের তালিকায় ছিল রাও ফরমান আলী, কর্নেল পরে ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহ (২৭ ব্রিগেড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), লেঃ কঃ বশারত, লেঃ কঃ সুলতান (৩১ বালুচ জামালপুর), মেজর সরদার খান, ক্যাপ্টেন শরীফ খান। তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনায়। থাকতো তার বোনের সাথে। গোপীবাগে আস্তানা হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে সে স্থান পরিবর্তন করেছিল। দেশ স্বাধীনের পর তার সাথেও তার ভগ্নীপতি প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাও উধাও হয়ে গেছেন।

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ মহিলা রাজাকার আটক

জরিনা নামে এক কুখ্যাত পাক দোসরকে আটক করেছে ২ নং সেক্টরের সিদ্দিক বাজার গেরিলা গ্রুপ। তাকে গ্রেফতারের সময় এসোসিয়েট প্রেস ফটো সাংবাদিক তাদের সাথে ছিল। এই মহিলা দালাল পাক সেনাবাহিনীর কিছু অফিসারকে মেয়ে সরবরাহ করত এবং মুক্তিবাহিনীর তথ্য সমুহ তাদের কাছে পাচার করত। মেয়ে সরবরাহ ছাড়াও সে অনেক মেয়ের খবর পাকবাহিনীকে দিত ফলে পরে পাকবাহিনী তাদের উঠিয়ে নিয়ে যেত।

 

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ খন্দকার মুস্তাক আহমেদ অসুস্থ

আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী খন্দকার মুস্তাক আহমেদ অসুস্থ হয়ে গত ২ জানুয়ারী ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি আমাশয়, দাতের ব্যথা ও কাশিতে ভুগছেন। হাসপাতাল কতৃপক্ষ জানিয়েছেন তার অবস্থা উন্নতির দিকে এবং দু তিন দিন পরে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবেন। অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, যোগাযোগ মন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ এবং শিক্ষা মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী, প্রচার সম্পাদক আব্দুল মমিন, মতিউর রহমান এমএনএ, ওবায়দুর রহমান এমএনএ, মোঃ হানিফ সহ আরও কয়েকজন নেতা তাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান।

 

 

 

৭ জানুয়ারি ১৯৭২ঃ শেখ মুজিবের মুক্তির প্রক্রিয়া সমাপ্ত।

শেখ মুজিবের মুক্তির সকল প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়। শেখ মুজিবকে কোথায় পৌঁছে দেয়া হবে সেটাই নির্ধারণ বাকি। হরিপুর কারাগার থেকে ডঃ কামালকে সিহালা রেস্ট হাউজে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ভাড়া করা চার্টার্ড বিমান মুম্বাই এ প্রস্তুত তবে পাকিস্তান সরকার বিমানকে পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। রেডক্রসের প্রতিনিধিও শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাত করতে পারেননি। রেডক্রসের বা জাতিসঙ্ঘের বিমানে তিনি ফেরত আসছেন না। জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবের সাথে শেষ বারের মত সাক্ষাত করেছেন। তিনি শেখ মুজিবকে হাত খরচের জন্য ৫০০০০ ডলার পকেট মানি অফার করলে শেখ মুজিব তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাওালপিণ্ডির চাকলালা বিমানবন্দর শেখ মুজিবের বিদায়ের জন্য প্রস্তুত। জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবকে তেহরান পাঠাতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেখ মুজিব এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ব্রিটিশ এমপি জন স্টোন হাউজের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ।
ঢাকা সফররত ব্রিটিশ লেবার এমপি জন স্টোন হাউজ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ মানচিত্র খচিত টাই উপহার দেন।

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ আব্দুস সামাদ আজাদ

নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের পর রাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ আজ সোভিয়েত ইউনিয়ন এর রাষ্ট্রদূত,পূর্ব জার্মানি এর কন্সাল জেনারেল, ভুটানের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। আলোচনার ফলশ্রুতিতে জার্মানির পর রাষ্ট্র মন্ত্রী শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানানো হয়। ভারত সফররত পোল্যান্ডের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও সামাদ আজাদ বৈঠক করেছেন। এর আগের দিন সামাদ আজাদ চেকস্লভিয়া হাংগেরি পোল্যান্ড মঙ্গোলিয়া বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাত করেন। পরে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান কতিপয় শক্তি এখনও বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত।

 

 

 

৭ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ তাজ উদ্দিন আহমেদ

প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের এক কর্মী সভায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলীকে হুশিয়ার করে বলেছেন পাকিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা এবং উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করতে চাইলে তাকে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন আমাদের প্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাঙ্গালীরা যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছে। পরে কমলাপুরের জনসভায় তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি সেখানে আরও বলেন পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগসাজশকারীদের অবশ্যই বিচার হবে। তিনি কালোবাজারি, মুনাফাখোর মজুতদারদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারন করে বলেন এদের কাউকে ক্ষমা করা হবে না। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেন।