৫ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ জাতিসংঘ দুত
উপমহাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দুত ও জাতিসংঘ আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল জেনেভা অফিস ভিত্তরিও উইন্সপিয়ার গুসিয়ারদি ভারত ও বাংলাদেশ সফর শেষ করে ভারত হয়ে পাকিস্তান গিয়েছেন। ভারতে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিব ও বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষ দুত ডিপি ধরের সাথে দেখা করে গেছেন। পাকিস্তানে তিনি কতদিন থাকবেন সেখান থেকে কোথায় যাবেন তা জানা যায়নি। গুসিয়ারদি উপমহাদেশে যুদ্ধের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মধ্যস্থতা করছেন। শেখ মুজিবের মুক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তানে তিনি বন্দী শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন কিনা সে বিষয়েও জাতিসংঘ নীরব রয়েছে। নয়াদিল্লী থেকে বাংলাদেশ মিশন প্রধান হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী জানিয়েছেন গুসিয়ারদি পাকিস্তানে পৌঁছে শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন তবে এর ফলাফল এখনো তিনি পাননি।
৫ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান
চট্টগ্রামে তার দলের এক কর্মী সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে ঘরোয়া আলাপকালে জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য তার দাবী শেখ মুজিবের ৬ দফার পরিপূরক। তার দাবী ৬ দফা বিরোধী নহে। তার দাবী এবং ভাসানির দাবীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি বলেন আওয়ামী লীগের ৬ দফা ইতিমধ্যে দেশবাসী গ্রহন করেছে। আমরা স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান আন্দোলনের জন্য আগামী ৯ জানুয়ারি ভাসানীর সাথে সন্তোষে এক সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছি। আমাদের এই আন্দোলনে ফজলুল কাদের চৌধুরীর কনভেনশন মুসলিম লীগও যুক্ত হতে পারে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন পৃথিবীর কোথাও দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমন্বয়ে কোন দেশ না থাকলেও আমরা নতুন এ ফর্মুলা পালন করতে প্রচেষ্টা নিচ্ছি।
নোটঃ তাদের এ প্রস্তাব মতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে পৃথক দুটি রাষ্ট্র থাকবে এবং এ দুটি রাষ্ট্র নিয়ে আবার একটি রাষ্ট্র গঠিত হবে। তাদের এ কার্যক্রম ভাসানীর ঘোষণা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। আতাউর রহমান ৯ মাস পাকিস্তানীদের তাবেদার ছিল।
৫ জানুয়ারি ১৯৭১ঃ ন্যাপ থেকে হাজী দানেশের পদত্যাগ
এক বছরে ভাসানী ন্যাপ এ ২য় দফা ভাঙ্গন হয়েছে। ৬ মাস আগে তোহায়া এর নেতৃত্ব এ একটি অংশ ন্যাপ ভাসানী থেকে বের হয়ে যায়। হাজী দানেশের অংশ একটি অংশের পৃথক কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে হাজী দানেশ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বহাল রেখেছিলেন। ভাসানী নির্বাচন বর্জন করলেও দানেশের অংশ ন্যাপের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়াছিল। নির্বাচন ইস্যু ছাড়াও দানেশের গ্রুপ ন্যাপের পাকিস্তান কমিটি ও জেলা কমিটি গুলি ভাসানী একক ক্ষমতাবলে বাতিল করাও দল ভাঙ্গনের অন্যতম কারন। দানেশ দিনাজপুর থেকে এক বিবৃতিতে বলেন ন্যাপ এখন ভাসানীর পকেট সংগঠনে পরিনত হয়েছে। হাজী দানেশ ও করাচীর কানিজ ফাতেমা ব্যাতিত ন্যাপের সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। দানেশ ছাড়াও দল ত্যাগ করেছেন নুরুল হুদা কাদের বক্স, আনোয়ার জাহিদ, প্রাদেশিক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম, ঢাকা শহর ন্যাপের সম্পাদক মোঃ সুলতান, ঢাকা শহর ন্যাপের সহ সভাপতি মনটু খান এবং আবু সাইদ খান, ঢাকা শহর ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ লুতফে আলম, ঢাকা শহর ন্যাপের যুগ্ন সম্পাদক মিজানুর রহমান।
নোটঃ হাজী দানেশ ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়দফা কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। হাজী দানেশ মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন।
৫ জানুয়ারী ১৯৭১ঃ ৬ দফা প্রসঙ্গে বেলুচিস্তান ওয়ালী ন্যাপ প্রধান
বেলুচিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সভাপতি হাসেম গাজী করাচীতে বলেছেন বলেছেন শেখ মুজিবের ৬ দফা সকল সমগ্র পাকিস্তানের জন্যই মঙ্গলজনক। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশেই শেখ মুজিবের ৬ দফা গ্রহন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন তার দলের অধিকাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের সহিত কাজ করে যেতে আগ্রহী। তিনি বলেন তার দল বেলুচিস্তানে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে এবং খরচ সাশ্রয়ের জন্য তার দল মাত্র তিনজন মন্ত্রী নিয়োগ দেবে। তিনি বলেন প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার পদের জন্য আব্দুস সামাদ আচেকজাই হলেন উপযুক্ত নেতা।