You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.21 | ৪ শ্রাবণ, ১৩৭৮ বুধবার, ২১ জুলাই ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৪ শ্রাবণ, ১৩৭৮ বুধবার, ২১ জুলাই ১৯৭১

-পশ্চিম পাকিস্তানে মিঃ ভুট্টো বললেনঃ গণ্ডগোল ক্ষমতা হস্তান্তরের অজুহাত হতে পারে না। যখন ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল, পৃথিবীর ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাস্তুত্যাগ চলছিল, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তবু ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল।

-কুমিল্লা শহরে পাকসেনাদের অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনীর গোলাবর্ষণে ৭জন হতাহত হয়। অন্যান্য ব্যাপক সড়ক শালদানদী, সিলেট, রাজশাহী, মেহেরপুর, মনোহরদি প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক সড়ক যোগাযোগের ক্ষতি সাধন করে। বহু খানসেনা নিহত হয়।

-ভারত সরকার এদিন প্রথম পরিষ্কার ঘোষণা করেন, প্রয়োজন হলে মুক্তিবাহিনী অস্ত্র সরবরাহ করা হবে। উল্লেখ্য, এই ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর ভাবে অনুপ্রেরণা দেয়। পক্ষান্তরে অবরুদ্ধ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে সহয়তা করার জন্য বিভিন্ন স্থানে দালালরা অভিযোগ এন অনেক শান্তি প্রিয় নিরাপরাধ ব্যক্তিগত আদালতে হাজির হওয়ার নির্দ্দেশ জারি হয়। সম্পতি বাজেয়াপ্ত হয়।

-ঢাকায় পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধা গেরিলাদের গোপন আস্তানায় হামলা চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেফতার করে এন্ট্রি পার্সোনাল মাইনসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আটক করে।

-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী এম.মনসুর আলী স্বাধীন বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে, তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সাহায্য সংস্থা থেকে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করায় অভিনন্দন জানা। তিনি বলেন, একমাত্র সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমেই বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্য আসতে পারে। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ইয়াহিয়া সরকারকে সাহায্য করার অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে গণহত্যায় সক্রিয় অংশ নেয়া।

-পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ জাতীয় পরিষদ সদস্য দেশত্যাগ করায় এই পরিষদের গুরুত্ব ও প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানের জাতীয় পরিষদ আঞ্চলিক পরিষদে পরিণত হয়েছে।

-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং পার্লামেন্টে বলেন, পাকিস্তান যদি আক্রমণাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তাহলে ভারত নিজেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

-ভারতের সীমান্ত জাতিসংঘ পরিদর্শক প্রেরণের এদিন প্রত্যাখান করে। এটা এক অবন্ধু সুলভ পদক্ষেপ’ হিসেবে ভারত মনে করে। উল্লেখ্য জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. হেনরী কিসিঞ্জার পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাঞ্জাবী সৈন্য প্রত্যাহার ও সেক্ষেত্রে জাতিসংঘ বাহিনী অবস্থান নেয়ার প্রস্তাবের মূল মন্ত্রদাতা। এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয় শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সুযোগ থাকবে। মূলকারণ অন্যত্র তা হল মুক্তিবাহিনী তীব্র আক্রমণ ও গেরিলা দলের যোগাযোগ ব্যবস্থা করার ফলে সংকীত পাকবাহিনীকে রক্ষা করা তথা বাংলাদেশ স্বাধীনতা ভারত-পাকিস্তান সমস্যায় রূপান্তর করা।

–ইসরাইলের সংসদে (Knesset) এ পররাষ্ট্র বিষয়ক ও নিরাপত্তা কমিটি পূর্ব বাংলায় পাকসেনাদের গণহত্যার তীব্র সমালোচনা করে। এ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ The slaughter, destruction and brutality committed by the Pakistan Army in Bangladesh arouses deep shock and bitter protest in Israel  and recalls the experience of the people of Israel who were themselves a victim of genocide.”

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী