You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.29 | দি এজ, ক্যানবেরা, ২৯ মার্চ, ১৯৭১ সম্পাদকীয় পাকিস্তান ট্রাজেডি - সংগ্রামের নোটবুক

দি এজ, ক্যানবেরা, ২৯ মার্চ, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পাকিস্তান ট্রাজেডি

পাকিস্তানের সাংবিধানিক সংকটের একদিন আগে গৃহযুদ্ধ শুরু হল। সেখানে ছিল আশা যা তিক্তভাবে বিভক্ত হল। শান্তিপূর্ন রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে দুই জাতি একত্রে অবস্থান করতে পারত। এবং সম্ভবত খুব দ্রুত বেসামরিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থায় ফিরে আসতে পারত। কিন্তু সে আশা গত কয়েক দিনের ট্র্যাজিক ঘটনায় শেষ হয়ে গেছে। পূর্ব পাকিস্তানে হিংস্রভাবে আন্দোলনের মূল কারণ স্পষ্ট নয়। কঠোর সামরিক শাসন ও বিদেশি প্রতিনিধিদের সেখান থেকে বিতাড়নের ফলে সত্যটা ঢাকা পরে আছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সম্ভবত জনপ্রিয় বাঙালি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান – যিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাদের নির্মম শোষণের ফলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের দাবি করেছিলেন – তার প্রধান দাবিগুলো মেনে নিতে চেয়েছিলেন।

একটি আপস নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় যখন সবাই আশান্বিত ছিল ঠিক তখনি সেটা পুরো উল্টো দিকে মোড় নিল। যেমন কথা ছিল যে সেনারা ব্যারাকে ফিরে যাবে ও মার্শাল ল তুলে নেয়া হবে – তেমনটি না করে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ দমন নীতি অবলম্বন করা হল এবং শেখ মুজিবের দল আওয়ামীলিগকে অবৈধ ঘোষণা করা হল। শেখ একটি গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে তার অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। বাঙালির দির্ঘদিনের আশা প্রকাশিত হল। শেখ সামরিক বাহিনীর মুখোমুখি হবার জন্য যে কারো থেকে দক্ষ – তবে এটা হতাশার ব্যাপার হতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার কাছে এটা স্পষ্টতই দেশদ্রোহিতা এবং তিনি মনে করেন বিদ্রোহী বাঙালিকে বর্বর রক্তপাতের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হবে।

এমনকি রিপোর্ট যদি সত্য হয় যে সেনাবাহিনী বিদ্রোহকে চূর্ণবিচূর্ণ করতে চেষ্টা করছে – তবুই একটি শক্তিশালী যুক্ত দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে একত্রিত রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার যে লক্ষ্য সে আশা বাস্তবতা থেকে অতি দূর। তাঁর সৈন্যরা হয়ত পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় শাসনের জন্য একটি সাময়িক সামঞ্জস্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হতে পারে। তারা হয়ত আওয়ামী লীগকে দমন করতে সক্ষম হতে পারে, যে দলটি শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অসাধারণ সমর্থন নয় বরং পরবর্তীতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অএয়েছে – যারা প্রথম বারের মত ইলেক্টোরাল সুবিধা পেয়েছে যা পশ্চিম পাকিস্তানী সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির মত নয়।

কিন্তু একটি জাতি যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ও নিরস্ত্র মানুষ তারা অনির্দিস্টকালের জন্য একটি সামরিক দমন দ্বারা শোষিত হতে পারেনা। বর্তমানে নিদ্যমান জাতিগত, সংস্কৃতি, ভাষা এবং ভৌগলিক পার্থক্য শুধুমাত্র ঘৃণা এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। যদি গত কয়েকদিনের ঘটনাবলি ন্যায় ও শান্তির প্রচেষ্টাকে শেষ করে না দ্বিত্ব – ইয়াহিয়া যদি ফেডারেল ব্যাবস্থা গঠনের জন্য যে প্রস্তাব তা মেনে নেবার মত জ্ঞ্যান দেখাতেন – তাতে করে পূর্ব পাকিস্তান নিজেদের শাসন করার জন্য একটি ন্যায্য পথে খুঁজে পেত এবং এতে পাকিস্তান সম্পূর্ন বিভক্ত হত না। কিন্তু সবার আগে হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।