You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশ আন্দোলন সম্পর্কিত বিবিধ প্রতিবেদন, বি বি সি , লন্ডন, এপ্রিল- ডিসেম্বর ১৯৭১

পাকিস্তানকে সহায়তা (টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস )
পূর্ব পাকিস্তানকে সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করতে গতকাল ব্রিটিশ ত্রাণ সংস্থা ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’-এর প্রধানগণ মিলিত হন। ওয়ার অন ওয়ান্ট, খ্রিস্টান এইড এবং অক্সফাম-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির সমন্বয়কারী ইয়ান ম্যাকডোনাল্ড এক সাক্ষাৎকারে বিবিসি টেলিভিশনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি জানান, “আমরা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় দেড় মিলিয়ন মানুষ পেয়েছি যারা নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত নিজেদের মুখের আহার যোগাতে আক্রান্ত এলাকার বাইরে থেকে নিয়মিত আসা খাদ্য শস্যের ওপর নির্ভর করছে। দ্বিতীয়তঃ সেই ফসল তারা তখনই ফলাতে পারবে যখন তাদের বীজের যোগান থাকবে, যন্ত্রপাতির মধ্যে জ্বালানি এবং ট্র্যাক্টর থাকবে। পূর্ব পাকিস্তানে চলমান যুদ্ধ এসব যোগান ব্যাহত করবে এবং চাষাবাদ বন্ধ করে দেবে।”

তিনি বলেন যে, ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাবাসী শস্য ঘরে তুলতে পারেনি আর তারা আহার জোটাতেও পারবে না। তিনি জানান, “আমরা এরপর পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য এলাকায় দেখলাম যে মানুষজন আমদানি করা খাবারের উপর নির্ভরশীল। কারণ, ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকা গুলোতে খাদ্য শস্যের অভাব–যা ঘূর্ণিঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে, চট্টগ্রামে খাদ্যশস্য আটকা পড়ে আছে এবং গত এক মাস যাবত সেখান থেকে চালান আসতে পারেনি।” সমন্বিত ত্রাণ বিষয়ক বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জনাব ম্যাক ডোনাল্ড বলেন, “আমরা এখন যেটা চেষ্টা করছি সেটা হলো, যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যাতে পরিস্থিতি পুরোটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই পাঠানোর মতো লোকবল ও ত্রাণ সামগ্রী তৈরি থাকে। আমরা পাকিস্তান সরকারকে তাদের মতের বিরুদ্ধে আমাদের ঢুকতে দিতে রাজি করাতে পারবো না, তবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক খাদ্য কর্মসূচী চালু করতে চাইতে পারি, যাতে সেইসব এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হয়।”

পাকিস্তানে মাইকেল স্টুয়ার্ট
১০ এপ্রিল, ১৯৭১
ইভান শারল্টন সম্পাদিত

জনাব মাইকেল স্টুয়ার্ট, ব্রিটেনের সমাজতন্ত্রী সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেন।
ঘটমান পরিস্থিতি নিয়ে কেনেথ অ্যালসপ-এর অনুষ্ঠান ‘ টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস’-এ জনাব মাইকেল স্টুয়ার্ট বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকার দেন।
জনাব স্টুয়ার্টকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, বিয়াফ্রা পরিস্থিতি এবং পূর্ব পাকিস্তানে চলা ঘটনাসমুহের মধ্যে কোন সরাসরি তুলনা করছেন কি না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অবস্থা খুবই ভিন্ন, অবশ্য দুই ক্ষেত্রেই আমরা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছি। তিনি আশা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার এবং সকল কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, এবং ত্রাণ প্রদান ও সংগঠনে সাহায্য করতে সক্ষম হবে। যদি রেড ক্রস, ত্রাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে পাকিস্তান সরকারের কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়, তাহলে ব্রিটিশ সরকার হয়তো সাহায্য করতে পারবে, যেমন করেছিল যখন রেড ক্রসের সাথে নাইজেরিয়ান সরকারের সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

ব্রিটিশ সরকার সত্যি সত্যি এমন কোন পদক্ষেপ নেবে কি না–এ প্রশ্নের জবাবে জনাব স্টুয়ার্ট বলেন, ত্রাণের ব্যাপারে এমন সহায়তা করতেই পারে। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা প্রধানতঃ জোর দিয়েছে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে, পাকিস্তানের গোলযোগের রাজনৈতিক উত্তর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে না।

জনাব স্টুয়ার্ট স্বীকার করেন যে, এ ক্ষেত্রে (ব্রিটিশ সরকারের) অন্য একটি দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, এবং তিনি এও বলেন যে এ ব্যাপারটা গ্রাহ্য করাই হবে বিচক্ষণতা। একটা বিবেকবর্জিত কাজ বা কথা দিয়ে কেউ সম্পর্ক তিক্ত করতে বা ত্রাণকার্য আরো কঠিন করে তুলতে চাইবে না। তবে তিনি মনে করেন, ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারটিকে অনেক স্বচ্ছ করতে পারে যে, আসলে এটা মানুষের দুর্ভোগ বা কিসের সাথে সংশ্লিষ্ট, আর সব কমনওয়েলথ কাঠামোর ভেতর দিয়েই এটা হতে পারে, যাতে করে এমন মনে না হয় যে ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানকে বলার চেষ্টা করছে তার বিষয়গুলো কিভাবে চালাতে হবে, বরং পাকিস্তানী জনগণের বন্ধু হিসেবে কমনওয়েলথ তার শুভেচ্ছা ও মধ্যস্থতা প্রদান করছে।

জনাব স্টুয়ার্ট আশংকা করেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তবে তিনি জানতে উৎসুক যে দিগন্ত খানিক বিস্তৃত করে, শত প্রতিকূলতা স্বত্বেও ভারত এবং পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের জনতা ও সরকার, সমগ্র উপমহাদেশের সাধারণ প্রয়োজনগুলো এক করে দেখতে পারে কি না। জনাব স্টুয়ার্ট জানতে আগ্রহী যে, কোন পরাশক্তি সংশ্লিষ্ট হলে সেটা কতখানি ভয়াবহ হবে তা বিবেচনা করে, এবং সাময়িক ঘূর্ণিঝড়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, গৃহযুদ্ধের মানবিক বিপর্যয় বিবেচনা করে তাদের নিজেদের স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করা কতখানি প্রয়োজন সেটা বুঝতে পারে কি না।

দেশভাগ অনিবার্য মনে করেন কি না–এমন প্রশ্ন করা হলে জনাব স্টুয়ার্ট বলেন, তিনি এখানে দেশভাগ শব্দটি ব্যবহার করতে চান না, তবে মনে করেন সমঝোতা হওয়াটা আপাতদৃষ্টিতে কঠিন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, গৃহযুদ্ধ এবং ছিন্ন পাকিস্তান ব্রিটিশ ও পশ্চিমা স্বার্থের উপর ঠিক কতখানি হুমকি। উত্তরে তিনি বলেন, পাকিস্তান দুইভাগ হলে সেটা হবে দুঃখজনক, কারণ এতে দারিদ্র্য বিমোচন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মতো মুখ্য বিষয়গুলো সামলে উঠতে সরকারের শক্তি হ্রাস করবে। এসব সমস্যা সমাধান করা আরো জটিল হবে। ব্রিটেনের প্রধান আগ্রহ হলো একটি সমৃদ্ধিশালী পাকিস্তান।
পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা কী?-জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সবচেয়ে খারাপ হবে ধরুন পাকিস্তানকে জোর করে এক করে রাখা হলো অথচ সেখানে কোন সদ্ভাব থাকবে না এবং সার্বক্ষণিক তিক্ততা ও সংঘর্ষ লেগে থাকবে। তথাপি তিনি আশার সুরে তাঁর সাক্ষাৎকার সমাপ্ত করেন। “মানুষ চরম দুরাবস্থার আশংকার মাঝেও কখনো উঠে দাঁড়ায়। কেবল পূর্ব পশ্চিম পাকিস্তানেই নয়, হয়তো পাকিস্তান ভারতের মধ্যেও একটা ভালো সমঝোতা হতে পারে।”

১৬ এপ্রিল, ১৯৭১
টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স-এ জনাব জাকারিয়া চৌধুরী

বিবিসি টেলিভিশনের দর্শকরা গতরাতে সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠান ” টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স”-এ একটি সাক্ষাৎকার উপভোগ করেন জনাব জাকারিয়া চৌধুরীর–যিনি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক গুপ্তচর হিসেবে পরিচয় দেন।

জনাব চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদেরকে প্রতিরোধ করার সামর্থ্য ভেঙ্গে পড়ছে’–এমন খবরে তাঁর প্রতিক্রিয়া কি। তিনি এ সংবাদ অস্বীকার করেন এবং পূর্ব বাংলার তিন চতুর্থাংশ গ্রামে প্রতিরোধ শক্তির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, যদিও শহরের বেশিরভাগ সৈন্যদের দখলে, গ্রামে তাদের কঠিন মাটিতে চলতে হয়। তিনি আন্দাজ করেন আগামী বর্ষায় পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদল নিজেদের ক্যান্টনমেন্টেই জলাবদ্ধ হয়ে থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বীকৃতির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জনাব চৌধুরী জানান যে, তিনি আশা করেন সকল রাষ্ট্র ধীরে ধীরে তাদের দাবীর যথার্থতা বিশ্বাস করবে। বাইরে থেকে অস্ত্র আসুক আর না আসুক তাদের লড়াই করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী তাঁকে প্রশ্ন করেন এত কষ্ট স্বত্বেও তিনি কেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, তিনি উত্তর দেন, পূর্ব পাকিস্তানীরা পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাক এমনটা চায় নি, এই যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।

১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
সাপ্তাহিক পত্রিকায় পাকিস্তান

বামপন্থী সাপ্তাহিক, দ্য নিউ স্টেট্ম্যান, পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দ্য নিউ স্টেট্ম্যান বলে যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দৃঢ়ভাবে তাদের ইচ্ছের কথা জানিয়েছে। অবশ্য, দ্য নিউ স্টেট্ম্যান পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের বহরের আশা রাখে না । দ্য নিউ স্টেট্ম্যান মনে করে যে, অর্থনৈতিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন স্বত্ত্বা হিসেবে অধিকতর টেকসই, আর এক সময় স্বাধীন হয়েই যাবে, যেহেতু দ্য নিউ স্টেট্ম্যান-এর চোখে জোটবদ্ধ পাকিস্তান একটি কৃত্রিম কাঠামো।

দ্য স্পেকটেইটর–যা দ্য নিউ স্টেট্ম্যান এর চেয়ে ডানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি রাখে–তার প্রধান প্রতিবেদনও পূর্ব পাকিস্তানকে নিয়ে। দ্য স্পেকটেইটর বিশ্বাস করে যে, পাকিস্তান প্রাকৃতিকভাবে এক থাকার মতো রাষ্ট্র নয়। পত্রিকাটি বোধ করে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের ভারতের সাথে রেষারেষি এর দুই পক্ষের মধ্যে আরো টানাপড়েন সৃষ্টি করেছে; আর রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অধীনে পশ্চিম পক্ষ পূর্ব পাকিস্তানকে অবহেলা করেছে। দ্য স্পেকটেইটর মনে করে যে, সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ তৈরিতে সক্ষম হবে, কিন্তু সাথে এও আশংকা করে যে, সেই নিয়ন্ত্রন স্বৈরাচারে রূপ নেবে। পরিশেষে দ্য স্পেকটেইটর বলে, সেনাবাহিনী পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা ঐক্যবদ্ধ করে ফেলবে। দ্য স্পেকটেইটর আশা করে, হয়তো এর মধ্যবর্তী সময়ে ব্রিটেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করবে এবং যতদিন সৈন্যরা ত্রাণকার্য শুরু না করছে ততদিন পর্যন্ত সকল প্রকার সাহায্য সহায়তা স্থগিত করবে। তবে পত্রিকাটি আশংকা করে, ব্রিটেন এই অবস্থান গ্রহণ করবে না।

ইকনোমিস্ট পত্রিকায় এশিয়ার পরাশক্তির ভূমিকা নিয়ে লম্বা একটা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। ইকনোমিস্ট রাশিয়া এবং চীনের এশিয়ার প্রতি আগ্রহের কারণগুলো তুলে ধরেছে, এবং লিখেছে যে, স্বার্থের সংঘাত এশিয়ার অনেকগুলো দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতার জন্য আংশিকভাবে দায়ী। দ্য ইকনোমিস্ট মনে করে পশ্চিমা শক্তিগুলোর এশিয়ার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত, এবং যেসব দেশে এখনো কোন না কোনভাবে গণতান্ত্রিক শাসন চলছে তাদের সহায়তা করা উচিত।
ইকনোমিস্ট-এ নির্দিষ্ট করে পাকিস্তান নিয়েও একটি প্রতিবেদন রয়েছে। দ্য ইকনোমিস্ট মনে করে যে, প্রতিরোধ আন্দোলন (পূর্ব পাকিস্তানের) শহরগুলোতে লড়াই হেরে গিয়েছে। পত্রিকাটি জানায় যে, অন্যান্য দেশ স্বীকৃতি দিতে নাও পারে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে–যেটাকে বানোয়াট বলা হচ্ছে যেহেতু কোন এলাকার উপর এর দৃঢ় দখল নেই। ইকনোমিস্ট-এর আশংকা হলো সীমান্তের ঘটনা ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত করতে পারে। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ প্রয়োগ করার একমাত্র উপায় হলো, দ্য ইকনোমিস্ট উল্লেখ করেছে, সাহায্যের জন্য তার বর্তমান অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করা যতক্ষণ না তিনি সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করেন। উপসংহারে ইকনোমিস্ট সতর্ক করে যে, খাদ্যাভাব, ব্যাপক হতাহতের সংখ্যা, এবং সম্ভাব্য বন্যা পূর্ব পাকিস্তানে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যদি না এর মধ্যেই কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা না আসে।

১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
পাকিস্তানের প্রতি বহির্বিশ্বের মনোযোগ
নিকোলাস ক্যারোল

পাকিস্তান প্রেস এবং পাকিস্তান সরকার অভিযোগ করেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাসমুহ সংবাদে ভুলভাবে পরিবেশিত করা হয়েছে, এবং অন্যান্য দেশ পূর্ব পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে । ‘সানডে টাইমস’-এর নিকোলাস ক্যারোল এসব অভিযোগ পর্যালোচনা করেছেন।

যে মুহূর্তে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে সেনাবাহিনী ব্যবহার শুরু করেছে, সমগ্র পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে প্রেসের ওপর কঠিন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তাই প্রত্যেক দেশের সাংবাদিককে, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও ভারতীয় সাংবাদিকদের, নিজেদেরই সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হয় জানার জন্য আসলে কি হচ্ছে। এটা যখন হয়েছে, পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার আন্তর্জাতিক সীমানায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি, তাই অনেক সাংবাদিক পূর্ব বাংলায় প্রবেশ করতে পেরেছেন।

ফলশ্রুতিতে, কি ঘটেছে তার কিছু নিরপেক্ষ চিত্র বিশ্ব পেয়েছে। সেটা মর্মভেদী এক চিত্র, আর এরই ভিত্তিতে সবখানে পত্রিকার সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাড়া উঠেছে, যার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ভারতীয় ও ব্রিটিশ পত্রিকায়।

যে স্বৈরাচার নেতৃত্ব নিজের জনগনের একটা বিদ্রোহী অংশের ওপর সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে গোপনে নৃশংসভাবে শৃঙ্খলিত করতে চায়–তার চেয়ে সমালোচনার প্রতি সংবেদনশীল বোধ হয় আর কিছু নেই। পাকিস্তানী প্রেস এবং তার সরকারী মুখপাত্রের বিবরণ বিবেচনা করলে, বিদেশী সমালোচনা ঘরেও শুরু হয়ে যায়। এটার একটা নমুনা হলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী সরকারের হস্তক্ষেপের অলীক অভিযোগ–যার প্রধান দোষ দেয়া হচ্ছে ভারতের প্রতি।

এখন যদি একটা কাজ থাকে যা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই করতে চাইবে না– তা হলো পূর্ব পাকিস্তানের বিপর্যয়ে সরাসরি যুক্ত হওয়া। মিসেস গান্ধির নতুন সরকার যথেষ্ট সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত–এমতাবস্থায় ভারত সীমান্তের ওপারের সমস্যায় জড়িয়ে পড়ার কোন অর্থ হয়না। মানবিক সহানুভূতি পেতে নিজেদের মতো জনগোষ্ঠী যখন দোরগোড়ায়, তাদের কঠিন দুর্ভোগ লাঘব আর সরকারী কর্মপন্থার মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা অবশ্যই টানা প্রয়োজন ।

এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের সদস্যবৃন্দ, মিসেস গান্ধী স্বয়ং, এবং বিশেষ করে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী জনাব সোয়ারান সিং, দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তবে পাকিস্তানী কর্মকাণ্ডের মধ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপের তুলনায় তা একটু ভিন্ন বটে। সবার কাছে সুস্পষ্ট যে, ভারতের প্রধান আগ্রহ নিহিত একটি শান্তিপূর্ণ পাকিস্তানে–যেখানে এর দুই ভাগই স্বাভাবিকভাবে এক সাথে কাজ করছে।
একই যুক্তি পশ্চিমা পরাশক্তিদের ক্ষেত্রেও খাটে। ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়া আজ অবধি নিঃশব্দ। এটা পরিষ্কার করতেই পররাষ্ট্র সচিব হাউজ অব কমন্স-এ পিছু হটেছেন। ব্রিটেন মানে যে চলমান দুর্দশা আসলে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং আশা করে এর মিটমাট হয়ে যাবে। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদের পক্ষে কোনোভাবে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের অর্থ হয় না। কিভাবে বাঙালীদের সাহায্য হবে? এতে ব্রিটেনের লাভটাই বা কোথায়?

প্রাথমিক মানবতার প্রেক্ষিতে, অর্থনৈতিক এবং অনুধাবনযোগ্য যে কোন পরিপ্রেক্ষিতে, ব্রিটেন এবং বিশ্ববাসী চায় একটা শান্তিপূর্ণ অবিভক্ত পাকিস্তান।

পরষ্পর দোষারোপের সময় শেষ। ভারত সরকারের মতো ব্রিটেনও চায় সামরিক কর্মকাণ্ডের অবসান হোক এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসক এবং পূর্ব বাংলার জনপ্রতিনিধির মধ্যে–তিনি যেই হন না কেন–পুনরায় আলোচনার সূচনা হোক ।

১১ মে, ১৯৭১
পাকিস্তানের সম্পর্কে হোম
অ্যান্ড্রু ওয়াকার

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব, স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম, প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে, পাকিস্তান সরকার একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলকে পূর্ব পাকিস্তানে কি ধরনের ত্রাণ লাগতে পারে তা দেখার অনুমতি দেবে। খবর জানিয়েছেন অ্যান্ড্রু ওয়াকার, বিবিসি কমনওয়েলথ।

স্যার অ্যালেক সংসদে বক্তব্য রাখছিলেন, তিনি যে প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তা সকল দলের সদস্যদের (পূর্ব পাকিস্তানে) নজিরবিহীন মানবিক দুর্দশায় উদ্বেগ প্রকাশের কারণে উত্থাপিত হয়। তিনি বলেন যে, তিনি এবং মার্কিন পররাষ্ট্র বিষয়ক সচিব, জনাব রজারস, যুগ্মভাবে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব উ থান্ট-এর প্রতি একটি বার্তা পাঠিয়েছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব নবায়ন করতে বলা হয়েছে । উ-থান্ট পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ রেখে ছিলেন, তাই (স্যার অ্যালেক বলেন,) “আমি আশা করি তারা (পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ) একটি বিশেষজ্ঞ দলকে কি প্রয়োজন তার বস্তুনিষ্ঠ হিসেব তৈরি করতে দেবে, এবং যদি তা আন্তর্জাতিক মহলে আসলেই প্রয়োজন বলে বিবেচিত হয় তাহলে (পূর্ব পাকিস্তানে) সহায়তা গ্রহন করতে প্রস্তুত থাকবে।” তিনি আবারো বলেন, ব্রিটেন যে কোন আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টায় অংশ নিতে প্রস্তুত, যেটা সবচেয়ে ভালোভাবে সংগঠিত হবে যদি জাতিসংঘের মাধ্যমে হয়।

পররাষ্ট্র সচিবের যুক্তি ছিল যে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার কারণে পূর্ব পাকিস্তানে এ বছরের শেষ নাগাদ চরম খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। অধিকিন্তু সেখানে শরণার্থী সমস্যাও রয়েছে যারা ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়ছে। সর্বশেষ প্রাক্কালন অনুযায়ী সে অনুপ্রবেশের হার হলো প্রতিদিন ত্রিশ হাজার করে মানুষ। ব্রিটিশ ত্রাণ সংস্থাগুলো সেখানে রসদ উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্যার অ্যালেক সেই সরবরাহে সহায়তা করার জন্য নগদ অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন।

লেবার পার্টির পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র, জনাব ডেনিস হেলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, পাকিস্তানে একটা রাজনৈতিক মিমাংসা হওয়া প্রয়োজন। স্যার অ্যালেক উত্তরে বলেন, আমরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। তবে এটা (মিমাংসা) আসতে হবে দেশের মানুষের খাতিরে, বাইরে থেকে তো আর এটা চাপিয়ে দেয়া যায় না।

বার্মিজ অংশ
৬ জুন, ১৯৭১
পাকিস্তান প্রেস পরিক্রমা
বেসিল ক্লার্ক

আজ ব্রিটেনে রবিবারের পত্রিকাগুলো পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী প্রসঙ্গে ক্রমবর্ধনশীল উদ্বেগের নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে। প্রধান প্রধান রবিবারের পত্রিকাগুলোর মধ্যে তিনটি শরণার্থীদের দুরাবস্থা হেডলাইন করেছে। দ্য অবজারভার বলেছে “বাংলার বেদনা”, দ্য সানডে টাইমস বলেছে শরণার্থীরা “লাখে লাখে মারা পড়তে পারে”, যেখানে দ্য সানডে টেলিগ্রাফ জনাব গান্ধীর নেয়া পদক্ষেপ “ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা” হেডলাইন করেছে ।

পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্বেগও সম্পাদকীয়তে প্রতিফলিত হয়েছে।

দ্য সানডে টাইমস শরণার্থী সমস্যাকে দুইভাগে ভাগ করেছে। প্রথমতঃ কিভাবে তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত রসদ সরবরাহ করা যায়। এবং দ্বিতিয়তঃ পূর্ব পাকিস্তানে কিভাবে পরিস্থিতি অনুকূলে আনা যায় যাতে শরণার্থীদের সেখানে নিরাপদে ফেরত যাওয়া সম্ভব হয়। শরণার্থীদের রসদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সানডে টাইমস এর মতে আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। পত্রিকাটি নির্দেশ করে যে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের উচিত সমন্বিত ত্রাণের ব্যবস্থা করা।

কিন্তু বড় সমস্যার কী হবে? শরণার্থীদের কিভাবে নিরাপদে বাড়ি পাঠানো যায়? দ্য সানডে টাইমস বলে, একটা আলোচনা চলছে পাকিস্তান সরকার যতদিন না পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করছে ততদিন বিদেশী অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ রাখা হবে। পত্রিকাটি স্বীকার করে যে, এটি হবে রাজনৈতিক লক্ষ্যে সহায়তার ব্যবহার।

দ্য অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে যে সমাধান দেয়া হয়েছে তার সাথে দ্য সানডে টাইমস এর প্রস্তাবের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে, তবে অবজারভার জাতিসংঘের ওপর আরো বড় ভূমিকা আরোপ করে। অবজারভার জানায়, দুইটি সম্পূরক পদক্ষেপ সম্ভব হতে পারে। প্রথমতঃ পাকিস্তানকে সতর্ক করা হবে যে, তার বৈদেশিক সাহায্য স্থগিত থাকবে যতদিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে মনে হয় যে শরণার্থীদের দেশে ফেরা নিরাপদ। দ্বিতীয়তঃ পত্রিকাটি প্রস্তাব করে যে, নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি সংকল্প নেয়া উচিত যেটা জাতিসংঘের একটি দলকে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চলাচলের অনুমতি দেবে, যাতে করে তাদের মধ্যে আপস-রফা করা যায়–যেমনটা মধ্য প্রাচ্যে অনৈক্যের ক্ষেত্রে করা হয়েছিল । অবজারভার জোর দিয়ে বলে যে, এই সমাধান কেবল পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রশ্নই সমাধান করে না, বরং চল্লিশ লাখ শরণার্থীকে ফেরত পাঠায় এবং পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমন করে।

১৬ জুলাই ১৯৭১
পাকিস্তান প্রসঙ্গে সাপ্তাহিকসমূহ
উইলিয়াম ক্রলী সম্পাদিত

এ সপ্তাহে দ্য নিউ স্টেটম্যান পত্রিকা জনাব রেগ প্রেন্টিসের একটি প্রতিবেদন ছাপে, যিনি চলমান সংকট নিরসনে পাকিস্তান ভারত ভ্রমণকারী চার সদস্য বিশিষ্ট ব্রিটিশ সাংসদীয় প্রতিনিধিদের একজন। জনাব প্রেন্টিস জানান যে, প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আশ্বস্ত হয়েছিলেন যে তারা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন, এবং তাদেরকে কোথাও আটকানো হয়নি। অবশ্য তারা কেবল সরকারী পক্ষের মতামতই শুনছিলেন এবং সংবাদদাতারা প্রশ্নের উত্তর দিতে অনিচ্ছুক ছিল। তারা একটা দেশকে আতংকের কবলে থাকার নমুনা দেখেছেন। এমন মনে করার কারণ হলো, জনাব প্রেন্টিস বলেন, অনেক লোক প্রতিনিধিদেরকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু তথ্য দেন। এসব গোপন তথ্য নির্দেশ করে সেনাবাহিনী মার্চ এবং এপ্রিল মাসে ব্যাপক হত্যা- নির্যাতন চালিয়েছে এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, লিখেছেন জনাব প্রেন্টিস। দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিক, যারা গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তারা এখনো শহরে ফিরে আসেন নি।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিনিধিদের বলা হয়েছিল যে, কোন শরণার্থী ভারতে পালিয়ে যায় নি; কিন্তু তাদের পরিদর্শনের সময় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে যে কিছু শরণার্থী গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে শরণার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২ লাখ, এবং ভারতীয়রা শরণার্থীদেরকে বাড়ী (পূর্ব পাকিস্তানে) ফিরে আসতে বাধা দিচ্ছে। অবশ্য জনাব প্রেন্টিস বলেন যে, প্রতিনিধিদল তথ্যের এই পাকিস্তানী সংস্করণ বিশ্বাস করতে পারেন নি যখন তারা সীমান্তের ভারতীয় অংশে শরণার্থীদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। তারা দুই দিন ধরে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শরণার্থীরা বলেন যে তারা ফিরে যেতে চান যখন সেটা নিরাপদ হবে। শরণার্থীদের সংস্থান করতে কি বিরাট সমস্যা সেটা জনাব প্রেন্টিস লিখেছেন, এবং প্রশ্ন করেছেন (ভারতীয়) স্থানীয়দের সাথে শরণার্থীদের সাংঘাতিক রেষারেষি শুরু হতে কি দেরি আছে? জনাব প্রেন্টিস বলেন, ভারত পাকিস্তানের মধ্যে আরো বিপর্যয় এড়ানো যাবে শুধুমাত্র পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে।

দ্য ইকনোমিস্ট পত্রিকার ভারতীয় প্রতিনিধি পর্যালোচনা করেছেন যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর ওপর পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে তৎপর হতে চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশের স্বাখ্যাত নির্বাসিত সরকার অনুযোগ করেছে যে, এটি ভারত থেকে যথেষ্ট অস্ত্র পাচ্ছে না। যেসব ভারতীয় বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবি করছেন তারা গেরিলা যোদ্ধাদের বর্তমান সহায়তার পরিমাণে সন্তুষ্ট নন, জানিয়েছেন ইকনোমিস্টের মুখপাত্র । তিনি বলেন যে, রাজনৈতিক দল্গুলো তাদের বক্তব্য সহনীয় করতে সহযোগিতা করছে, এবং আসামে ছাড়া আর কোথাও কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা দেখা দেয় নি, কিন্তু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। একটা অদ্ভুত কথাও চলছে যে, লাখ লাখ শরণার্থীকে খাওয়ানোর চেয়ে (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত) যুদ্ধ করলেই অনেক কম খরচে হয়ে যেত! ভারত সরকার যদিও এ আলোচনায় অংশ নেয় নি, তবু মনে হচ্ছে তারা ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না যে কি করা উচিত। দ্য ইকনোমিস্ট মন্তব্য করেছে যে, গেরিলাদের আরো অস্ত্র সাহায্য করলে শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে ভারত যা সুনাম কুড়িয়েছে, তাকে বিপন্ন করবে।

ইন্দো- পাকিস্তান যুদ্ধ সম্পর্কে প্রেস
৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
মার্ক টুলী

ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ আজকের সবগুলো পত্রিকায় উঠে এসেছে। সেখানে ঘটনার সর্বশেষ সংবাদ, পর্যালোচনা, প্রতিবেদন এবং সম্পাদকীয় বিদ্যমান। দ্য সানডে টাইমস এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যুদ্ধ কে শুরু করেছে এ নিয়ে তর্ক করে বিশেষ লাভ নেই। পত্রিকাটির আশংকা যে, এ যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফল হবে বিভেদ, বিশৃঙ্খলা এবং ব্যাপক দুর্ভোগ। সানডে টাইমস সরবোচ্চ আশা করে যে, পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের ব্যাপারে শেখ মুজিবের সাথে সমঝোতায় পৌঁছবে, এ পদ্ধতিতে শরণার্থীদের দেশে ফেরার পথ সুগম হবে। এর অর্থ হবে, পত্রিকাটির মতে, যে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে রাষ্ট্রপতির পদ অন্য কাউকে হস্তান্তর করে যেতে হবে। কিন্তু প্রথমেই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া জরুরী। নিরাপত্তা পরিষদে এ দ্বন্দের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার ঘটনাকে দ্য সানডে টাইমস স্বাগত জানিয়েছে।

দ্য অবজারভারের সম্পাদকীয়তে এ যুদ্ধকে ‘সীমাহীন দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আরো দুঃখজনক হলো, সারা বিশ্ব এই পাগলামি তৈরি হতে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। অবজারভারের মতে, পাকিস্তান সরকারের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানে সমাধান খুঁজতে যাবার সময় থেকেই পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনীর খোলাখুলি জড়িয়ে পড়ার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ আন্তর্জাতিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়।

সবচেয়ে বিচক্ষণ আন্তর্জাতিক লক্ষ্য হবে, অবজারভার জানায়, আলাপালোচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের উভয় অর্ধে জাতীয় সৌহার্দ্য পুনরুদ্ধার করা, সেই সাথে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ভারত এবং পাকিস্তানের থেকে স্বাধীন একটি পূর্ব পাকিস্তান হবে দ্বিতীয় সেরা সমাধান। এর দিকে এবং নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধাবসানের বৈঠকের প্রতি ইঙ্গিত করে পত্রিকাটি বলে, আন্তর্জাতিক সমাজের শরণার্থীদেরকে সহায়তা প্রদানের প্রতি আরো বড় অবদান রাখা উচিত।

দ্য সানডে টেলিগ্রাফ-ও মনে করে যে, সংকটের সবচেয়ে সেরা সমাধান হবে রাজনৈতিক আপস যেখানে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করবে, অবশ্য পত্রিকাটি এটাও সন্দেহ প্রকাশ করে যে, বিশ্বের পরাশক্তিরা গোপনে দেশদুটির সাথে যোগাযোগ করে এমন আপস করতে পারবে কি না। যদি কুটনীতি কিছু করতে না পারে, টেলিগ্রাফ মনে করে যে, সেরা সমাধান হবে পূর্বে ভারতের বিজয় এবং গঙ্গা ব-দ্বীপের নতুন যাত্রা। তবে পত্রিকাটি গুরুত্ব আরোপ করে যে, একটি কুটনৈতিক সমাধান হবে অনেক বেশি সন্তোষজনক। যদি পরাশক্তিদ্বয় কোনো কুটনৈতিক সমাধান প্রস্তুত করতে না পারে, টেলিগ্রাফ বিশ্বাস করে যে তাদের উচিত হবে যুদ্ধরত দুই পক্ষের কোনো পক্ষে অস্ত্র সরবরাহ না করা।

জনপ্রিয় অন্যান্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে, দ্য সানডে মিরর আক্ষেপ করে যে ধনী দেশগুলো এ দুর্যোগ এড়াতে সামান্যই কাজ করেছে। তবে পত্রিকাটির ভাষ্য মতে, ধনী দেশগুলো ক্ষমতাহীন এবং যুদ্ধ থামাতে অক্ষম। তথাপি, সানডে মিরর আশা করে যে একটি দ্রুত সমাধান পাওয়া যেতে পারে হয় জাতিসংঘ বা চীন যদি পাকিস্তানকে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়। দ্য নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এবং সানডে এক্সপ্রেস উভয়েই মনে করে যে, ব্রিটিশ সরকারের মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব দেয়া উচিত কারণ ভারত ও পাকিস্তান দুটোই কমন ওয়েলথভুক্ত দেশ।
অবজারভারে আরো আছে বর্তমান যুদ্ধের পটভূমি সম্পর্কে সিরিল ডান কর্তৃক দীর্ঘ একটি পর্যালোচনা– যিনি পত্রিকাটির ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা। ডান-এর দৃষ্টিতে, উপমহাদেশ যখন প্রথমত দুইভাগ হয়েছিল তখনই সমস্যার গোড়াপত্তন হয়।

তবে জনাব ডান মনে করেন, যদি কাশ্মীর পাকিস্তানের অংশে যেত, তাহলে দুই দেশই একসাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। তার মতে, পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে ভারত সরকারের বর্ণিত অভিপ্রায়কে কিছুটা সন্দেহের চোখে না দেখা কঠিন। অবশ্য তিনি মানেন যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পাকিস্তান ছাড়তে চাইবার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। ডান আশংকা করেন যে, যদি চলমান লড়াই চলতে থাকে এবং পরিশেষে একটি নতুন মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তাহলে হিন্দু শরণার্থীরা আর বাংলাদেশে ফেরত যেতে পারবেন না, এবং বাংলাদেশও বেশিদিন স্বাধীন থাকতে পারবে না।

সানডে টাইমস এ জন গ্রিগ লিখেছেন যে, সবচেয়ে বেশি মনে রাখা প্রয়োজন যে, এ যুদ্ধের পটভূমি হলো ভারতের ওপর শরণার্থীদের বিশাল বোঝা। তিনি বিশ্বাস করেন যে, শরণার্থীদের কারণে আর্থিক ক্ষতি প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে এবং তারা যে সামাজিক উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে তাও প্রায় অসহনীয়। গ্রিগ বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে নিয়মিত সৈন্য ব্যবহার করতে মিসেস গান্ধী ছিলেন সবচেয়ে অনিচ্ছুক, এবং তিনি এটা শুধু এ কারনেই করেছেন যে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন পরাশক্তিরা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে তার নীতি পরিবর্তন করাতে পারবে না বা করবে না। জন গ্রিগ আরো বলেন যে, মিসেস গান্ধীর এখন ব্রিটেনের সমর্থন প্রাপ্য।

সানডে টাইমস এ অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের আরেকটি দীর্ঘ প্রতিবেদন রয়েছে যিনি খুব সম্প্রতি ভারত পরিদর্শন করে গিয়েছেন। মাসকারেনহাস বিশ্বাস করেন যে, গত আট মাসে হতাশাজনক আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়ে ভারত অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে, শরণার্থী সমস্যা সমাধানে যুদ্ধের কোনো বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন, ভারত বিশেষ করে হতাশ হয়েছিলো মার্কিন সরকারের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হওয়ায়। তিনি ভারত সরকারের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দেন, “আমরা আমেরিকায় গিয়াছিলাম সাহায্য চাইতে, আর যা পেলাম তা হলো ধৈর্য এবং ক্ষমার পরামর্শ!” মাসকারেনহাস জানান যে, ভারত সরকার একটি সম্ভাবনার কথা ভেবেছিল যে হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়া হবে। কিন্তু রাজ্য সরকারসমূহ তাদের গ্রহন করতে ইচ্ছুক ছিলো না, কারণ তারা এ বাড়তি বোঝা নিতে চায় নি ।

মাসকারেনহাস বলেন যে, এখন ভারতের উদ্দেশ্য হলো একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা যাতে করে শরণার্থীরা ফিরে যেতে পারেন, এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান যাতে আর কখনো ভারতের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে না পারে।

পাল্টা আঘাত হিসেবে পাকিস্তান কেবল আশা করতে পারে পশ্চিমে আরেকটু জায়গা জয় করার। মাসকারেনহাস বলেন যে, যদিও একটা যুদ্ধ শুধু দুই দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাই বাড়িয়ে তুলবে, এটা দেখা কঠিন যে আর কোনভাবে ঘটনা এগোতে পারতো, কারণ পাকিস্তান সরকার যে কোনো মুল্যে পূর্ব পাকিস্তান ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

১২ ডিসেম্বর ১৯৭১
ভারত ও পাকিস্তান প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রেসের পর্যালোচনা
বেসিল ক্লার্ক

আজ ব্রিটেনে, রবিবারের পত্রিকাগুলো ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে চারটি সম্পাদকীয় ছাপিয়েছে। সম্পাদকীয় গুলো ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন– সকলেরই জিজ্ঞাসা কি হতে যাচ্ছে। পত্রিকার তিনটি– দ্য সানডে টেলিগ্রাফ, দ্য সানডে টাইমস, এবং দ্য পিপল ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কি ভাবে গড়ে উঠবে তাই নিয়ে উৎকণ্ঠিত। আবার দ্য অবজারভার ভবিষ্যত দেখছে সমগ্র অবকাঠামোর ওপর যুদ্ধের প্রভাব, এবং বিশ্বজুড়ে বিদেশী সম্পর্কের প্রেক্ষিতে।

দ্য অবজারভার অনুমান করছে যে, ভারত সেনাদল শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তানে তাদের বিজয় সম্পন্ন করবে, আর এর পর তারা সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। একমাত্র চীন অথবা (হয়তো) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপই একে প্রতিহত করতে পারে, অবজারভার জানায়, –যদিও তার সম্ভাবনা খুব কম। দ্য অবজারভার লিখেছে, জাতিসংঘের সদস্য অপর একটি দেশের রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করতে ভারতের পদক্ষেপ যতটাই নীতি বহির্ভূত হোক না কেন, এটা মানতেই হবে যে, যেকোনো শান্তিপ্রসূ সমাধানের সূচনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণই নিরূপণ করবে। এটা, পত্রিকাটি বলেছে, হয়তো স্বল্প মেয়াদে পরিস্থিতি ঠান্ডা করবে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য এর পরিণতি হবে সূদুর প্রসারী। এর মধ্যে প্রধান তিনটি ফলাফল হলো; প্রথমতঃ এ যুদ্ধ দেখিয়েছে পরাশক্তিদের যেকোনো ঘটনা প্রভাবিত করার ক্ষমতা কতটা সীমিত। প্রকৃতপক্ষে, এ যুদ্ধ তুলে ধরেছে যে এশিয়াতে রাশিয়া চীন দ্বন্দ্ব সত্তরের দশকের মতো নতুন শীতল যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। দ্বিতিয়তঃ ইসরায়েলের মতো ভারতও দেখিয়েছে যে মধ্যশক্তি অথবা ক্ষুদ্র শক্তির দেশও সফলভাবে লড়াই জয় করতে পারে, যদি না পরাশক্তিরা হস্তক্ষেপ করে। পরিশেষে, দ্য অবজারভার যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্কের প্রতি আলোকপাত করেছে।

বাকি তিনটি সম্পাদকীয় বাংলাদেশের কি হবে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ কি ভারতের একটি পুতুল রাজ্যে পরিনত হবে? প্রশ্ন সানডে টাইমস এর। কতদিন পর্যন্ত ভারতীয় সেনাদের সেখানে অবস্থান করতে হবে? কী ধরনের রাজনৈতিক ধারা পুনর্গঠিত হবে? দ্য সানডে টাইমস মনে করে যে, (বাংলাদেশকে) ব্রিটেনের স্বীকৃতি প্রদানের সম্ভাবনা তৈরি হবার পূর্বেই এ সকল প্রশ্নের উত্তর বাঞ্ছনীয়। তবে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর নতুন সমস্যার উদ্রেক করবে বলে জানিয়েছে সানডে টাইমস। যেমন, যদি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘জনগণের সিদ্ধান্ত’ চূড়ান্ত হয়, তবে কাশ্মিরের ক্ষেত্রেও তাই প্রযোজ্য। পরিস্থিতির ভয়াবহতার ফলে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এবং চীনের মধ্যেকার সম্পর্কে কি প্রভাব পড়বে তাও সানডে টাইমস গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। পত্রিকাটির ভাষ্যমতে, যদিও পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছেদ ভৌগোলিকভাবে যৌক্তিক, এটি স্থিতিশীল কোনো ঘটনা নয় যেহেতু বিজয় কেবল ভারতেরই নয় বরং রাশিয়ারও। এর অর্থ দাঁড়ায় চীন আগের চেয়েও বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তদুপরি, মার্কিনীরা এই এলাকায় তাদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে নিজের পাকিস্তানপন্থী অবস্থান (যেমনটা পত্রিকায় আখ্যা দেয়া হয়) থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অধীর হয়ে উঠবে। সানডে টাইমস ইতি টানে এই বলে যে, যদিওবা পরাশক্তিরা যুদ্ধের ময়দান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলো, এ যুদ্ধের কারণে সুয়েজ এবং সাইগোন-এর মধ্যে একটি চরম সংবেদনশীল অঞ্চল উন্মোচিত হয়েছে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!