You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.17 | ওয়ার্কার্স প্রেস, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশের একটি মহান বিজয় - সংগ্রামের নোটবুক

ওয়ার্কার্স প্রেস, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশের একটি মহান বিজয়
– জন স্পেন্সর

গতকাল পাকিস্তান বাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী দুর্দান্তভাবে হর্ষধ্বনি দিয়ে সংসদে বলেছেন যে, ‘ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত রাজধানী’।

ভারত ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে যা এখন বাঙ্গালীর মনে স্বীকৃত রাষ্ট্রের অনুভব দিচ্ছে।

চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ হল বর্ধিত অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র দশ মিনিট আগে। ভারত হুমকি দিয়েছিল যদি তার আত্মসমর্পণের আহ্বান পালন না হয় তাহলে পরিস্থিতি ভালো হবেনা।

বাংলাদেশ সরকার আজ ঢাকায় অফিস নিয়ে যায়। বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতারা পরিবহন সমস্যার কারণে সেখানে গতকাল পৌঁছাতে পারেনি।

জয়

পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের থেকে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালির জন্য একটি অসাধারণ অর্জন। কিন্তু অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ।

আওয়ামী লীগ একটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে রক্ষণশীল এবং বুর্জোয়া প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে যাচ্ছে। ঘোষণাপত্রের বাইরে শ্রমিক ও কৃষকদের দেবার মত আপাতত কিছুই আর নেই।

আওয়ামী লীগ ভূমি মালিকানার ‘যৌক্তিকীকরণ’ এবং ভূমিহীন কৃষকদের অস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোন বাস্তব কৃষি সংস্কার প্রস্তাব দেয়নি।

এর ফলে দীর্ঘদিনের কৃষি সমস্যা দূর হবেনা যেখানে বেশিরভাগ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।

নতুন সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিল্পের একাধিপত্যবাদীতা থেকে ‘কার্যকরভাবে কাজ করার’ অবস্থা একইভাবে অস্পষ্ট ও জননেতাসুলভ।

বাঙ্গালী শ্রমিক ও কৃষকদের আওয়ামী লীগ ও গান্ধীর বুর্জোয়া নেতাদের প্রতিশ্রুতির উপর কোন নির্ভরতা স্থাপন করতে পারে না।

তাদের পুঁজিবাদী শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে হবে এবং তাদের নিরস্ত্র করার সব প্রচেষ্টা নিতে হবে।

পশ্চিম পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পন সম্পর্কে অবহিত ছিলোনা। যদিও সরকার রেডিওতে গত দুই সপ্তাহ ধরে মার্শাল ল’র কথা বলেছে। আর বলা হয়েছে পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি গুরুতর।

আত্মসমর্পণ

অবশেষে, ইয়াহিয়া খান রেডিওতে পূর্ব অঞ্চলে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিলেন এবং বললেন পশ্চিম অংশে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন ‘আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব’। তিনি জনগণকে ধৈর্যশীল হতে বলেন এবং আরও ত্যাগ স্বীকারের কথা বলেন।

তিনি চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলিকে তাদের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানান।

চীন গতকাল সিকিম সীমান্তে একটি আইন লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়ে নয়া দিল্লিতে একটি শক্ত নোট পাঠিয়েছে। একটি পৃথক ঘোষণায় চীন সংবাদ সংস্থা বলেছে চীন পাকিস্তানে বস্তুগত সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং অভিযোগ করে যে ভারত চেয়েছিল সমগ্র পাকিস্তান ধ্বংস করতে।

অ্যামেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থনকারী অন্যতম দেশে। তারা বঙ্গোপসাগরের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমান ক্যারিয়ার ‘এন্টারপ্রাইজ পাঠিয়েছে যেখানে ৯০ টি প্লেন ছিল।

যদি আমেরিকা একটি উদ্ধার অপারেশন করতে চায় সেক্ষেত্রে আসলে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেছে।