দৈনিক পয়গাম
২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
দক্ষিণপন্থীও নই বামপন্থীও নই ‘আমি দেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে’ : শেখ মুজিব
লাহোর, ২৪শে ফেব্রুয়ারী। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান অদ্য বলেন যে, লাহোর উপস্থিতির পর তথাকার অধিবাসীবৃন্দ তাহাকে যে আন্তরিক সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করিয়াছেন, তাহাতে তিনি অভিভূত হইয়াছেন।
শেখ মুজিব গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে রাওয়ালপিন্ডি যাত্রার পূর্বে লাহোর বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের বলেন যে, লাহোরের বীর নাগরিকদের ভালবাসা ও অনুরাগের কথা তিনি সর্বদাই স্মরণ রাখিবেন।
এয়ার মার্শাল আসরগ খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খান প্রমুখ স্বতন্ত্র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহিত তাহার আলোচনা প্রসঙ্গে শেখ মুজিব বলেন যে, তিনি তাহাদের সহিত আলোচনায় পুরাপুরি সন্তুষ্ট হইয়াছেন।
পূর্বাহ্নে শেখ মুজিবর রহমান এবং পিপলস পার্টি প্রধান জনাব জেড এ ভুট্টো একই বিমানযোগে ঢাকা হইতে লাহোের পৌঁছিলে বিমানবন্দরে তাহাদের বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। পিডিএম, পিপলস পার্টি এবং আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক কর্মী সম্বর্ধনায় অংশ গ্রহণ করেন। তম্মধ্যে মালিক গোলাম জিলানী, জনাব জে এ রহীম, জনাব মাহমুদ আলী কাসুরী, এয়ার মার্শাল আসগর খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আজম খান উল্লেখযোগ্য।
বিমানবন্দরে এত বিপুল জনসমাগম হয় যে, বিমানের পক্ষে পার্কিং বে’তে পৌঁছান একরূপ অসম্ভব হইয়া পড়ে। শেখ পর্যন্ত বিমানটি ট্যাক্সিওয়েতে থামিয়া যায় এবং জনাব ভুট্টো জনগণকে পিছনে সরিয়া যাইতে বলেন, কিন্তু জনতা তাহাকে সেখানেই অবতরণ করিতে বাধ্য করে এবং তাহার পার্টির একটি ট্রাকে উঠিয়া বসিতে বলে। তখন তাহাকে শোভাযাত্রা সহকারে বাহিরে লইয়া যাওয়া হয়।
অনুরূপভাবে শেখ মুজিবও সেখানেই বিমান হইতে অবতরণ করেন এবং তাহাকে শোভাযাত্রা সহকারে বাহিরে নেওয়া হয়।
এয়ার মার্শাল আসগর খান এবং লেঃ জেনারেল আজম খান তাঁহার কর্মসূচী সমর্থন করিবেন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে তাঁহার কোন “মন্তব্য নাই” বলিয়া জানান। তিনি বলেন, তাহাদের সহিত আলোচনায় আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হইয়াছি, এত আগে সে কথা বলা যায় না।
বামপন্থী কিংবা দক্ষিণপন্থী নই, স্বদেশপন্থী
জনৈক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ মুজিব বলেন, আমি বামপন্থীও নই, কিংবা দক্ষিণপন্থীও নই, আমি আমার স্বদেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহার দল নিরপেক্ষ এবং “সকলের সহিত বন্ধুত্ব কাহারও সহিত শত্রুতা নয়” –এই বৈদেশিক নীতিতে বিশ্বাসী।
দুর্নীতি প্রসঙ্গ
দেশে বিরাজমান দুর্নীতি প্রসঙ্গে শেখ মুজিব বলেন যে, উহা বর্তমান সরকারেরই অবদান এবং দুর্নীতি বিরোধী কমিটি ও কমিশন গঠনের দ্বারা উহা উচ্ছেদ করা যাইবে না। তবে জনগণের প্রতিনিধিত্ব ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে উহার অবসান ঘটিবে। তিনি বলেন যে, দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করিতে হইবে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব মুসলিম লীগকে বিরোধী দলে পরিণত করার যে প্রস্তাব করিয়াছেন, তিনি সেই সম্পর্কে কোন মন্তব্য করিতে বিরত থাকেন।
শেখ মুজিব পিণ্ডি অবস্থানকালে ‘ডাক’ নেতৃবৃন্দের সহিত “গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” আলোচনা করিবেন বলিয়া জানান। -এপিপি।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯