অমৃত বাজার পত্রিকা, ২৮ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বান
– স্টাফ রিপোর্টার
শনিবার সভায় সংযুক্ত বামফ্রন্ট সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে এবং সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার অধিকার রক্ষার জন্য ‘সহায়তা প্রদান’ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি করে।
এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি, ULF শহীদ মিনার ময়দানে সোমবারে এক গণ সমাবেশে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। ULF অবিলম্বে সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত মানুষের হাত শক্তিশালীকরণের জন্য সংগঠনের আপামর সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
ULF বাংলাদেশের মানুষের সমর্থনে তার ছাত্র শাখাকে মিটিং করার নির্দেশ দেয়।
এদিকে আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক, জনাব ত্রিদিব চৌধুরী রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব শরণ সিং কে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুরোধ করেছেন এবং বাংলাদেশকে অবিলম্বে স্বীকৃতির জন্য চাপ দিয়েছেন।
সমাজতান্ত্রিক ইউনিটি সেন্টারও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানিয়েছে। তাছাড়া, বাম ও গণতান্ত্রিক দল ও গণসংগঠনের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের হাত শক্তিশালী করার জন্য একটি গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি প্রণয়ন করতে বলেছেন।
অধ্যাপক হরিপদ ভারতী, রাজ্য জন সংঘের চেয়ারম্যান, এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা জন্য ইসলামাবাদের সামরিক স্বৈরশাসকের নিন্দা করেন এবং ভারতের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান অলস দর্শক না হয়ে থাকতে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া। প্রফেসর ভারতী সব রাজ্যে তার দলের ইউনিটকে বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করেন।
CITU বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন বাড়ানো এবং সীমান্ত জুড়ে মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য শ্রমিকশ্রেণির প্রতি আহ্বান জানায়। এছাড়া তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ১৪৪ ধারা উঠিয়ে নেবার অনুরোধ করে যাতে শহরের জনগণ রাস্তায় নেমে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারে।
সম্প্রীতি সমিতি
পূর্ব ও পশ্চিম বাঙলা সম্প্রীতি সমিতির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে যারা দুই বাংলার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য কার্যকরভাবে অবদান রাখতে চান তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী হলেন মেসার্স তারাসংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, তুষার কান্তি ঘোষ, আনন্দ শংকর রায়, অশোক কুমার সরকার, মনোজ বসু, প্রমোদ কুমার স্যানাল, হিরময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শংকর প্রসাদ মিত্র ।
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র পরিষদের সভাপতি, কংগ্রেসের (ও) ছাত্রশাখার সুবীর চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে একটি টেলিগ্রামে বলেন এক হাজার ছাত্র পরিষদ কর্মী বাংলাদেশের মানুষকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছে। “দয়া করে আমাদের পূর্ববঙ্গে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার অনুমতি দিন।’
অধ্যাপক সমর গুহ, এমপি. এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নতুন সামরিক আইন জারির পর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে বিপ্লবী ঘটনা। সমগ্র বাংলাদেশে মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।