You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৬ মার্চ ১৯৪৮। আহত শওকত আলীর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমান

শওকত আলীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটি ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের বলে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শওকত আলী ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচিতে পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাই ছবিটি ১৬ মার্চ বা তার পরবর্তী কোনাে সময়ের। শওকত আলী ১১ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি হননি, ওইদিন অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানাে হয়। তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে। এ সম্পর্কে অনেক অকাট্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরিতে ১১ মার্চ ১৯৪৮-এর ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘মুজিব, শামসুল হক, মাহবুব, অলি আহাদ, শওকত, আনসার ও অন্যান্য ৬৯ জনকে আটক করে জেলহাজতে রাখা হয়েছে।’ (প্রথম খণ্ড, পৃ. ২২৫) ১৬ মার্চের ঘটনা সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: ‘ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় … লাঠিচার্জে ১৯ জন মারাত্মকভাবে আহত হলাে। শওকত তাদের অন্যতম। (প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৩১; শওকত আলী নিজে বলেছেন : ১১ মার্চ ১৯৪৮। … শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী গােলাম মাহবুব এবং আরও কয়েকজনসহ আমাকে চক ঘুরে জেলখানায় নিয়ে গেল। (উদ্ধৃত, বদরুদ্দীন উমর, ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ : কতিপয় দলিল, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৪৯) তিনি আরও বলেছেন : ১৬ তারিখে … মেডিক্যাল কলেজের গেটের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে যখন পৌছেছি তখন পুলিশটি আমার পুরাে হাতের ওপর একটা জোরে বাড়ি মারল। তখন আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। … আমাকে সকলে ধরাধরি করে তারপর হাসপাতালে নিয়ে যায়। … সে (শেখ মুজিব) সব সময় আমার সাথেই ছিল।’ (ওই, পৃ. ২৫০) শওকত আলী আহত হওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন : শওকত মিয়া আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। তাড়াতাড়ি ছুটলাম তাকে দেখতে। সত্যই সে হাতে-পিঠে আঘাত পেয়েছে। পুলিশ লাঠি দিয়ে তাকে মেরেছে।’ (পৃ. ৯৭) কাজেই ছবিটি যে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের নয়, ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চের পরের, তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। কারণ শওকত আলী ১৬ মার্চ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং কয়েক দিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রিকশায় বসা ছবিটিতে শওকত আলীর মাথায় ব্যান্ডেজ আছে, হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাথায় ব্যান্ডেজ না থাকারই কথা। সুতরাং ছবিটি ১৬ মার্চের পরে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তােলা বলেই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

Reference:
ভাষা আন্দোলনে শেখ মুজিব কতিপয় দলিল – ড এম আবদুল আলীম, পৃষ্ঠা ২২৫-২২৬

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!