গ্লোব এন্ড মেইল, (টরন্টো)| ২০ অক্টোবর ১৯৭১ | সম্পাদকীয় – এশিয়া বিস্ফোরন্মুখ
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক এখন ফ্ল্যাশ পয়েন্টে রয়েছে, এবং দুই দেশের সীমানায় বিপজ্জনক যুদ্ধ ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ধরনের যুদ্ধে এশিয়ায় দুটি সুপার পাওয়ারের ক্ষমতা হ্রাস করবে। রাশিয়া এবং চীন। এমনকি যদি চরম বিপদ এড়িয়ে যাওয়া হয় – তবে ভারতীয় উপমহাদেশের এই প্রাদেশিক দেশগুলির পরিণতি এবং তাদের জনগণের যুদ্ধের পরিণতিগুলি বর্ননাতিত হবে। এই বিয়োগান্ত নাটক কি কিছুতেই বন্ধ করা যাবে না?
এই পর্যায়ে উভয় দেশের মধ্যে দোষারোপের কোন বিন্দু নেই। ব্রিটিশদের বিভাজনের সময় থেকে তাদের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান; তাদের সমস্যাগুলি শুধুমাত্র ভারত পাকিস্তানের নেতৃত্বের নৃশংসতার জন্য নয়। এটা স্পষ্ট যে বর্তমান সংকট সমাধান করা উভয় দেশের ক্ষমতার বাইরে। ভারতের জন্য এখন বড় সমস্যা পূর্ব পাকিস্তানের থেকে আসা শরণার্থীদের বন্যা। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মোট নয় মিলিয়ন হিসেব করেছেন। এমনকি পাকিস্তানের মুখপাত্ররা চার বা পাঁচ লাখেরও বেশি স্বীকার করেন। উভয় ক্ষেত্রেই তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ভারতীয় অর্থনীতিতে অবিশ্বাস্য বোঝা চাপিয়ে দেয়, যার পরিমাণ সরকারি ব্যয়ের ৫ শতাংশেরও বেশি এবং তা ভারতের প্রাপ্ত সমস্ত বৈদেশিক অর্থনৈতিক সহায়তা থেকে অনেক বেশি।
শরণার্থীদের প্রবাহ অব্যাহত, এবং তাদের মধ্যে কেউ বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ফিরে আসার চিন্তা করবে না। ভারত হতাশ হয়ে উঠছে এবং ক্রমশঃ কাছাকাছি চলে আসছে – সাধারণ বৈদেশিক নীতির কারণেই তারা পাকিস্তানের বিভক্তি এবং পূর্ববাংলাতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের দিকে তাদের অবস্থান।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান স্পষ্টতই তাঁর সরকারকে একটি অসম্ভব অবস্থানে নিয়ে এসেছেন যাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে স্বায়ত্তশাসিত আন্দোলনকে দমন করার জন্য সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে হয়। তবে এটাও সত্য যে বিপথগামীদের থামানোর জন্য কিছুটা বাহিনীর প্রয়োজন ছিল – প্রাথমিক সমস্যা দূর করার জন্য। এখন তারা আবার একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন। এটি সন্দেহজনক যে আসলে কোন সমাধান পাওয়া যাবে কিনা যাতে করে পূর্ব পাকিস্তানের শান্তি অ নিরাপত্তা পুনস্থাপিত হয় এবং সমসগ্র দেশে কিছুটা স্থিতি আসে। কিন্তু অবশ্যই অনেক বেশি সময় প্রয়োজন, এবং বর্তমানে একটি যুদ্ধ সকল আশা ধ্বংস হবে।
এই মুহুর্তে যা দরকার তা হল চূড়ান্ত দুর্যোগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ভারতকে সাহায্যের জন্য শরণার্থী ভার বহন করার কিছু উপায় বের করা। এক্ষেত্রে ১৩-জাতি বিশ্বব্যাংক কনসোর্টিয়াম (কানাডসহ) আছে যারা ভারতে অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারে। প্যারিসে ২৬ শে অক্টোবর একটি সভায়, কন্সোর্টিয়ামে ভারতের উদ্বাস্তু কর্মসূচির জন্য অর্থ প্রদানের জন্য ৭৫০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে বলা হবে। দামটা অনেক বেশি তবে তার বিকল্প পথে অপচয় হবে গণনার অযোগ্য।