লা লিব্র বেলজিক (ব্রাসেলস) | ১৮ অক্টোবর ১৯৭১ | পরাশক্তিগুলোর দায়িত্ব – সম্পাদকীয়
বাংলার লাখ লাখ শরণার্থীদের নাটকে যুদ্ধ যোগ হচ্ছে কি? প্রতিদিন কোলকাতার রাস্তা দিয়ে পূর্ব বাংলার দারিদ্র্যপিড়ীত পুরুষ, নারী ও শিশুরা দু:স্থ অবস্থায় ভারতে প্রবেশ করছে। সেনা শাসকেরা তাদের জায়গা শূন্য করতে চায় – তাদের জনগণকে ক্ষুধা আর রোগেশোকে শেষ করতে চায়। আগামীকাল কি আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে পাব। এই পরিস্থিতির কি শেষ আসবে?
বিশ্ব আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করা ১০ লক্ষ বাঙ্গালীর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। অবস্থা দিনে দিনে বাড়ছে। এই দুর্ভাগা মানুষকে সাহায্য করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে এবং কেউ নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। এখানে এবং অন্য জায়গা থেকে যে অর্থসাহায্য পাওয়া গেছে তা দিয়ে শরনার্থিদের নিজেদের দেশে পুনর্বাসন ও নিজেদের স্থাপনা পুনঃমেরামতে ব্যাবহার করা যেতে পারে। এখানে মূল সমস্যা রাজনৈতিক। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি পাকিস্তানের মত দেশকে ক্রমাগত ভারতে লোক পাঠিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে দিতে পারি? এটা কি গ্রহণযোগ্য যে গ্র্যান্ড আন্তর্জাতিক কৌশলের নামে মার্কিন সরকার একদিকে পাকিস্তানি নেতাদের অস্ত্র দিচ্ছেন এবং অন্যদিকে উদ্বাস্তুদের নির্বাসিত হয়ে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য দিচ্ছেন?
ওয়াশিংটন উত্তর দিয়েছে যে এশীয় উপ-মহাদেশের পাকিস্তানের আঞ্চলিক গুরুত্ব রয়েছে এবং পিকিং তাদের সমর্থন করে। মস্কো ভারতের সাথে ২০ বছরের বন্ধুত্ব চুক্তি করেছে। অতএব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা পালন করবে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন কি চীন এবং সোভিয়েতের মধ্যে সংলাপের সুযোগ সৃষ্টি করেন নাই? এবং এই আলোচনার লক্ষ্য কি বর্তমান এবসার্ড খেলা বন্ধ করার জন্য নয়? – যে খেলার জন্য বিশ্বশক্তিমানদের ক্ষমতার লড়াইয়ে লক্ষ লক্ষ শরনার্থি আজ ভোগান্তির সম্মুখীন।