বাল্টিমোর সান, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা
পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণের ছয় মাস হয়ে গেছে। এই বর্বরতার ফল প্রবল ভাবে অনুভূত হচ্ছে, এবং অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এই অভ্যন্তরীন জটিলতা জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। ব্যাপারটি তাদের আলোচ্যসূচিতে স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি সাধারণ সভার অন্যতম মূল বিতর্ক হিসেবে আবির্ভূত হলো।
সোমবার বিতর্ক রীতিমত বাকযুদ্ধে রূপ নিলো ইন্ডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিং এবং পাকিস্তানের আগা শাহী ও মোহাম্মদ আলির মধ্যে। সরণ শিং তীব্রভাবে আক্রমণ করলেন তাদের। পশ্চিম পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলায় (আদতে তখন সেটা ছিলো পূর্ব পাকিস্তান) ভয়াল এবং কড়াল এক পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে দায়ী করলেন, এবং তাদের ভয়ানক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিলেন। পূর্ব বাংলার জন গণ নির্বাচিত সরকারকে মেনে না নেয়া, এবং জনপ্রতিনিধি শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাসন দণ্ড দেয়া পশ্চিম পাকিস্তানী সরকারকে তিনি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অবিহিত করেন, এবং যথারীতি পশ্চিম পাকিস্তানী মহল তা মেনে নিতে অস্বীকার করে।
আগা শাহী দাবী করেন সরণ সিংয়ের বক্তব্য বাতিল করা হোক, কারণ তিনি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। এদিকে মোহাম্মদ আলি তা বলেন আরো কেতা মেনে, আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে। তার অভিযোগ ছিলো ইন্ডিয়া পূর্ব বাংলাকে একটি সুপরিকল্পিত সামরিক প্রচেষ্টা দ্বারা বিভক্ত করতে চাচ্ছে।
এসব কথার মাধ্যমে প্রকারান্তরে পশ্চিম পাকিস্তান নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করছিলো। এ কথা সত্য যে, মার্চের ঘটনার পর ইন্ডিয়ার কিছু অংশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ করেছিলো। এও সত্য, পরবর্তী মাসগুলোতে কিছু আকস্মিক সামরিক পরিকল্পনাও তাদের তরফ থেকে এসেছিলো। কিন্তু এসব কিছু থেকে ইন্ডিয়াকে পাকিস্তানের সরকার পতনের চক্রান্তে লিপ্ত বলে দাবী করাটা ছিলো একদমই অর্থহীন । প্রায় আশি লক্ষ উদ্বাস্তু পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়ে নিরাপত্তার আশায় ইন্ডিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলো; এটাই ছিলো তাদের পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানের প্রধান কারণ।
এসব কারণেই ইন্ডিয়া এবং বহির্বিশ্বের আরো অনেক দেশের কাছে পাকিস্তানের পরিস্থিতি স্রেফ “অভ্যন্তরীণ দন্দ্ব” হিসেবে গণ্য হয় নি, এবং পশ্চিম পাকিস্তান সরকার তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনাপ্রবাহকে বদলাতে পারে নি।