এডভান্স | মাউরিটিয়াস, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | সম্পাদকীয় – পূর্ব বাঙলা শরনার্থী – একটি বিশ্ব সমস্যা
ভিয়েতনামের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড শেষ হতে না হতেই পূর্ববাংলাতে তার চাইতেও ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড শুরু হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে আট মিলিয়ন মানুষ তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে তাদের সর্বস্ব ত্যাগ করে চলে গেছে এবং তাবুতে বসবাস করছে – শুধুমাত্র বেঁচে থাকার আশায়।
মার্চ থেকে যখন ট্রাজেডি শুরু হয় তখন থেকেই উদ্বাস্তুরা ভারতে পালাতে শুরু করে।ইতিমধ্যে এটি খুবজনবহুল। প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার লোক সীমান্ত পেরিয়ে আসছে। এখানকার জনসংখ্যা এখন লন্ডন বা প্যারিসের থেকে বেশি। প্রথম দিকে বিশ্ব ভাবেনি যে দেশটির অর্থনীতিতে এটি এমন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাধীনতার পড় থেকেই এই দেশ প্রতি বছর বন্যা, খরা, ক্রমবর্ধমান জন্মহার এবং বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সকল অংশের ব্যক্তিদের ধন্যবাদ যারা মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্ববৃহৎ স্থানত্যাগের এই ঘটনাকে প্রচার করেছেন, গণহত্যাকে সংবাদপত্রে প্রকাশ করেছেন। জনমত সৃষ্টি করেছেন। নানা ধর্মের ও সমাজের মানুষেরা এসেছেন যাদের থেকে জানা যায় নারী ও শিশুদের নানা বীভৎস মৃত্যুকাহিনী – যা ক্রমাগত সীমান্তের ওপারে ঘটে চলেছে। এত বিপুল পরিমাণ শরণার্থীদের উপস্থিতি কেবল এই রাজ্যের অর্থনীতি ও জীবনকেই প্রকাশ করেনা বরং এই এলাকাটির শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য একটি ঝুঁকি। যেকন মুহুর্তে এখানে বস্তুগত দ্বন্দ্ব এবং দাঙ্গা বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।
যতক্ষণ না বিশ্বের দেশগুলি একত্রিত হয় এবং এটি সম্পর্কে কিছু করে তার আগ পর্যন্ত এটি আরেকটি ভিয়েতনাম হতে যাচ্ছে। একমাত্র পার্থক্য হল যে এটির প্রভাব আরো মারাত্মক হবে এবং এর ফল আরো বিপজ্জনক হবে। তখন এটি কোন স্থানীয় সমস্যা হিসেবে আর থাকবে না। এটা হয়ে যাবে সমস্ত বিশ্বের সমস্যা – কারণ বিশ্ব তাদেরকে তাদের ঘর ছাড়া করেছে।
তার বয়স হওয়া সত্ত্বেও, আন্দ্রে মালরুয়েক্স সেখানে যেতে চান এবং তাদের জন্য যুদ্ধ করতে চান। তাঁর মতো, বিশ্বব্যাপী লেখক ও শিল্পীগণ সবার কাছে মানবিক আবেদন করেছেন এইসব লাখ লাখ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যারা ক্ষুধা ও ঠান্ডার সাথে লড়াই করছে। কলকাতার কাছাকাছি শরণার্থীদের ক্যাম্পে যাওয়ার সময় সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি অশ্রুতে ভেঙে পড়েন। প্রতিটি দেশের প্রেস আরও সাহায্য পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে আহ্বান জানাচ্ছে। বিশ্ববিবেকের জাগরণের জন্য সুইস স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায় অনশন ধর্মঘট করে যাচ্ছেন। এবং শুধুমাত্র গতকালই, কারিতাস সমস্ত বিশ্বের কাছে বাংলার গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আবেদন জানিয়েছেন।