You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.14 | শরণার্থীদের আশ্রয়দানে সরকারের চরম ব্যর্থতা দুর্নীতি, দলবাজি, মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির হুঁশিয়ারি | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

শরণার্থীদের আশ্রয়দানে সিংহ সরকারের চরম ব্যর্থতা
দুর্নীতি, দলবাজি, মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির হুঁশিয়ারি

গত ১১ মে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে লে. গভর্নর ডায়াসের নিকট এক স্মারকলিপিতে বলা হয়, ৫ লক্ষ শরণার্থীর সেবাকাজে ত্রিপুরা সরকার চরম অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছেন। মুনাফাখখারেরা এই সুযােগে স্থানীয় জনগণকেও লুট করতে শুরু করেছে। এই অসহনীয় অবস্থার বিরুদ্ধে পার্টি একটি বলিষ্ঠ কর্মসূচি গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে:
এরই মধ্যে ৫ লক্ষের মতাে শরণার্থী স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এসেছেন এবং আরাে আসবেন। গত ২৫ মার্চ পাক সামরিক হানাদাররা পূর্ব বাংলার যেসব অঞ্চল দখল করেছে, সেখানে বােমা নিক্ষেপ, আগুন লাগানাে বা লুটতরাজ এক সাধারণ ঘটনায় দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেক শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের জনগণ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের ফেলে আসা সমস্ত সম্পত্তি পাক সামরিক বাহিনীর প্রহরায় মুসলিম লীগের গুণ্ডারা লুট করেছে। এমনকি যারা ত্রিপুরা সীমান্তের দিকে আসছিলেন তাদের সঙ্গের সমস্ত সম্পত্তিও তারা কেড়ে নিয়েছে। এই সমস্ত উদ্বাস্তুরা ত্রিপুরার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এসেছেন এবং এখন পর্যন্ত সবারই নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। ইতিমধ্যেই বিলােনীয়া এবং সাব্রুম মহকুমায় শরণার্থীদের সংখ্যা ২ লক্ষ অতিক্রম করে গেছে।

২. সরকারের ভূমিকা ন্যাক্কারজনক
যদিও পূর্ব থেকেই ত্রিপুরা সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল কিন্তু ত্রিপুরা সরকার শােচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এক সক্ৰমেই আগত ২৫ হাজার ছিন্নমূলের বর্ষা থেকে বাঁচার কোনাে ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত যানবাহনের অভাবে তাদের স্থানান্তরে পাঠানোের কোনাে ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না।
আশারাম বাড়ি এবং খােয়াইতে শত শত চা-শ্রমিক রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন। ছিন্নমূলদের এক বিরাট অংশ তাদের দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের আশ্রয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন কিন্তু সরকার তাদের কোনাে প্রকার আর্থিক সাহায্য দেয়ার দাবি অগ্রাহ্য করেছেন। মাত্র কিছু সংখ্যক শরণার্থী স্কুল ঘর বা অন্যান্য শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু তাদের যে সামান্য সাহায্য দেয়া হচ্ছে তাও অনিয়মিত। শিশুদের কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়ােজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যাদের সামান্যতম বস্ত্র বা বিছানা নেই তাদেরকেও এরূপ কোনাে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে না। শরণার্থী শিবির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ অসাধু ব্যক্তিদের হাতে এবং এরা খােলা বাজারেই রেশন ইত্যাদি চুরি করে বিক্রি করছে। সাব্রুম শরণার্থীদের রেশন নেওয়ার জন্য ১৫/১৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং প্রায়ই রেশন না পেয়ে ফিরে আসতে হয়।

শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ
মধুপুর: এখানকার শরণার্থী শিবিরের ভারপ্রাপ্ত অফিসারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শরণার্থীদের বিক্ষোভ ফেটে পড়ছে। তিনি শরণার্থীদের রেশন কম দেন, সবজি, মশলা প্রভৃতি থেকেও চুরি করেন, মদ খেয়ে রাতে অমানুষিক ব্যবহার করেন, সামান্য কারণে ডােল কেটে দেন।
শিবিরে একজন যুবক ও একজন বৃদ্ধা মহিলাকে মারপিট করায় শিবির বাসীরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভপ্রতিবাদ জানান।

মুনাফাবাজদের অটের রাজত্ব চলছে
ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাস থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য যারা পথে এসে দাঁড়িয়েছেন এ দেশেও তাদের এক শ্রেণীর সমাজ বিরােধী মুনাফাবাজ ইতিমধ্যেই লুট করতে শুরু করে দিয়েছে। এদের হাত থেকে স্থানীয় জনসাধারণও রেহাই পাচ্ছে না। পূর্ব বাংলা থেকে হাজার হাজার কুইন্টাল ধান…।

সূত্র: দেশের ডাক
১৪ মে, ১৯৭১
৩০ বৈশাখ, ১৩৭৮