১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ কাদেরিয়া বাহিনীর হটকারী কার্যক্রম
পল্টন ময়দানে জনসভা শেষ হওয়ার পর কাদের সিদ্দিকি ৫ বিহারী রাজাকার বা সন্ত্রাসীর বিচারে সাজা কার্যকর করেন। উপস্থিত ডজন খানেক বিদেশী সাংবাদিকদের সামনেই তাদের হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক এদের মধ্যে ছিলেন হর্সট ফাস, মাইকেল লরেনট এবং
অরিয়ানা ফেলাচি। এই ৫ জন হত্যার মধ্য দিয়ে কাদের সিদ্দিকি সারা পৃথিবীতে মুক্তিযোদ্ধাদের বদনাম ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। পৃথিবীর নামকরা পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় উক্ত ঘটনা ফলাও করে প্রচার করা হয়। কোন কোন সাংবাদিক ভিডিও (মুভি ফিল্ম) করেছিলেন। সেগুলিও টেলিভিশনে প্রচার হতে থাকে। শত শত ষ্টীল ছবি বিভিন্ন মহলে যেতে থাকে। পরবর্তীতে এর একটি ছবি পুলিতযার পুরস্কার পেয়েছিল। এখনও পাকিরা এই ৫ জনের উদাহরন দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের সাথে অবাঙালী হত্যার তুলনা করে। এমনকি দেশী বিজাতীয়রাও বিদেশে দেশের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই ঘটনার প্রচার করে থাকে।
কাদের সিদ্দিকি পরে তার প্রকাশিত বই স্বাধীনতা ৭১ এ লিখেছেন
তাদের গাড়ি যখন পল্টনে মোড় নিয়েছে এমন সময় বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা দুটো ডাটসান গাড়ির ভেতর থেকে কিশোরী কণ্ঠে আর্তচিৎকার শোনেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দুটো ঘিরে ফেলে মুক্তিবাহিনীর অন্য সদস্যরা। দুজন যুবক দৌড়ে পালায়, ধরা পড়ে চার জন। ভীত সন্তস্ত্র কিশোরী দু’জনের কাছে যা জানা গেল, তারা অবাঙ্গালী। এই ছয়জন তাদের বাসায় লুটপাট চালিয়ে, নগদ ৫০ হাজার টাকা ও দু বোনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের বৃদ্ধ মোটর মেকানিক পিতাকে বেধে রাখা হয়েছে গাড়ির পেছনের বনেটে। ঠিকই দেখা যায় সত্যি বলছে মেয়েরা।
এরপর দুস্কৃতিকারি ৪(৫) জনকে জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সদ্য স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত সে নিয়ে বক্তব্য রাখেন কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান এবং মঞ্চে তোলা হয় মেয়ে দুটোকে। তাদের বক্তব্য শোনার পর, জনতার কাছে রায় চাওয়া হয়- তারা সমস্বরে দাবি জানান মৃত্যুদণ্ডের। পরে চারজন (৫)কে একটি করে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে শাস্তি কার্যকর করে কাদেরিয়া বাহিনী।