১৪-১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ঃ ঢাকা লাস্ট পুশ
ভারতীয় ১৩ গার্ড এর একটি কোম্পানি নয়ারহাটে রেখে অবশিষ্ট বাহিনী সাভার রওয়ানা হয়। ১৫ ডিসেম্বর ভোরে সাভার সামরিক এলাকা এবং রেডিও ট্রান্সমিশন টাওয়ার দখল করে। বেলা ১১ টায় সাভারে ১৩ গার্ডের সামনের অংশ পাক বাহিনীর মুখোমুখি হয়। ব্রিগেড কম্যান্ডারের হাতে পর্যাপ্ত বাহিনী না থাকা সত্ত্বেও মাত্র এক কোম্পানি সৈন্য দিয়েই তিনি আক্রমন করলেন। এখানে পাক বাহিনীর ১৮ জন নিহত ২০ জন আহত হয়। ভারতীয় বাহিনীর ৮ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। এখান থেকে ৫৪ টি রাইফেল ১ টি রকেট লাঞ্চার ৬ টি এলএমজি সহ প্রচুর গোলাবারুদ আটক করে। সন্ত সিংহ এর এই সাফল্য লাভে ব্রিগেডিয়ার নাগড়া তার ২ প্যারার যে টুকু সৈন্য ছিল তা সন্ত সিংহ এর অধীনে দিয়ে দেন। রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরীয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। রাত দু’টায় মীরপুর ব্রিজের কাছে যৌথবাহিনী পাক সৈন্যের মুখোমুখি হয়। যৌথবাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাকবাহিনী মুহুর্মূহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় যৌথবাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারারাত তুমুল যুদ্ধ চলে।
যৌথবাহিনী ঢাকার অদূরে টঙ্গীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগের পাড়ে পাকবাহিনীর মুখোমুখি হয়। শত্রুসৈন্যরা এখানে ব্রিগেডিয়ার কাশিমের কম্যান্ডে আর্টিলারি সুবিধা সহ শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা গড়ে তুলেছিল। কয়েকটি ট্যাঙ্ক তাদের সাথে ছিল। এই বাহিনীর বেশীরভাগ এপকাফ এবং সাধারন সেনা। এখানে বিমান বাহিনীর সাহায্য নেয়া হয় বিমান বাহিনী পাক অবস্থানে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে। এখানে ৬ শিখ লাইট ইনফ্যান্ট্রি এবং ১ মারাঠা রাইফেলস এর এক কোম্পানি পাকিস্তানীদের মোকাবেলা করছে।
ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যার পাড়ে ডেমরায় যৌথবাহিনী পাক প্রতিরোধ ব্যুহের ওপর আঘাত হানে। সারেন্ডারের আগে ডেমরার যুদ্ধকে শেষ যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সারেন্ডার হওয়ার পর কোন কোন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন যে যুদ্ধ হয় তাকে যুদ্ধ বলা যায় না সে গুলি ছিল নিয়ন্ত্রণে আনা। আর একটি দল শীতলক্ষ্যা পার হয়ে নাওরায় অবস্থান নেয়। এদিকের বাহিনীটা ছিল ৩ নং সেক্টরের ২ ইস্ট বেঙ্গল।