You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ নিরাপত্তা পরিষদে পোলিশ প্রস্তাব এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো

১৩ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত যুদ্ধ প্রশ্নে ফের আলোচনা শুরু হলে মার্কিন ২য় প্রস্তাব, ইতালি জাপান প্রস্তাব এবং পরে পোলিশ প্রস্তাবের উপর আলোচনা হয়। পোল্যান্ড খসড়া আকারে একটি প্রস্তাব রাখে প্রস্তাব নং ১০৪৫৩ । তা পরে সামান্য রদবদল হয় প্রথম প্রস্তাব থেকে শেখ মুজিবের মুক্তি বাদ দেয়া হয় এবং যোগ হয় ভারতীয় সৈন্য যুদ্ধ পূর্ববর্তী অবস্থানে চলে যেতে হবে। অপর বিষয়গুলি হল তাতে বলা হয়, রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এই সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে এবং সেখানকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। দেশের অখণ্ডতা চাইলে পাকিস্তানের এই প্রস্তাব লুফে নেওয়ার কথা। ১৪ তারিখে ইয়াহিয়া জুলফিকার আলী ভুট্টো টেলিফোন আলোচনা হয় যখন ইয়াহিয়া পোলিশ প্রস্তাব মেনে নিতে বলেছিলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো তখন টেলিফোনে কিছু শুনছিলেন না বলছিলেন। মাঝে টেলিফোন অপারেটর বলে ফেলেছিলেন আমি স্পষ্ট শুনছি। জুলফিকার আলী ভুট্টো ধমক দিয়ে লাইন থেকে অপারেটরকে সরে থাকতে বলেছিলেন। ১৫ তারিখে পরিষদের সভা বসে। সকাল সাড়ে নয়টার পরিবর্তে ১১ টায় সভা শুরু হয়। এই সভায় যদি পোল্যান্ডের প্রস্তাবটি গৃহীত হতো, তাহলে বাংলাদেশ অধিকতর স্বায়ত্তশাসিত পূর্ব পাকিস্তান হিসেবেই থেকে যেত। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের প্রধান উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো তিনি ৮ তারিখে পাকিস্তান থেকে রওয়ানা হয়ে ১১ তারিখ নিউইয়র্ক পৌঁছেন ১২ বা ১৩ তারিখ অধিবেশনে যোগ দেন। ৪ দিন ধরে আলোচনায় তিনি খুব বিরক্ত হন। তিনি সভায় সোমালিয়ার প্রতিনিধি পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ভুলে বলেছিলেন ৫৬ মিলিয়ন পরে সংশোধন করে বলেছিলেন ৭৬ মিলিয়ন।

এ প্রসঙ্গে ভুট্টো বলেন প্রথমটি সঠিক কারন যুদ্ধে ইতিমধ্যে ২ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছে। সভায় তিনি বলেন তার ১১ বছরের ছেলে গতকাল ফোনে তাকে বলেছে সারেন্ডার ডকুমেন্ট নিয়ে যেন ফেরত না আসি। তাই আমি সারেন্ডার ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে চাই না। তিনি আরও বলেন একটি আগ্রাসন সমর্থনের ডকুমেন্টকে বৈধতা দিতে পারি না। তিনি জাতিসংঘ কে ফ্যাশন হাউজ নিনা রিকি নামে অভিহিত করেন। তিনি জাতিসংঘকে ভেটোর উপর একটি স্থাপত্য কীর্তি স্থাপনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন শেখ মুজিবের চেয়ে তার দলের ফলাফল ছিল আকর্ষণীয় তাই এই ফলাফলকে মুজিবের আমলে নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ভুট্টো ক্ষমতার নেশায় ছিলেন বিভোর। তার পিতা ছিলেন জুনাগর মানভাদারের মন্ত্রী বা সচিব। ভুট্টো ক্ষমতা খুব কাছে থেকে দেখেছেন। মাত্র ২৯ বৎসর বয়সে মন্ত্রী হয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন বারবার ভারতকে তাগাদা দিচ্ছিল তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করে ফেলতে কারন এত বার ভেটো দেয়া যায় না। সোভিয়েত ইউনিয়নের আর ভেটো দেয়া লাগেনি ভুট্টো নিজেই ভেটো দিলেন পোলিশ প্রস্তাব মানি না। বক্তৃতায় তিনি বলেন আমরা যুদ্ধ করব, আমরা নতুন পাকিস্তান বানাবো, আমরা বৃহত্তর পাকিস্তান বানাবো। তিনি বলেন জাতিসংঘে এটাই আমার শেষ পদার্পণ। আমি যাচ্ছি বলে সাথে থাকা সকল কাগজ ছিঁড়তে ছিঁড়তে বেড়িয়ে গেলেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!