১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ গভর্নর ভবনে ভারতীয় বিমান হামলা এবং মালিক মন্ত্রীসভার পদত্যাগ
মিত্র বাহিনী পূর্ব দিক থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর আর্টিলারি রেঞ্জ এ চলে আসে। উত্তর থেকে টঙ্গি এবং সাভার রুটেও কাছাকাছি চলে আসে। আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভারতীয় বিমান হামলা শিথিল ছিল যা যে কোন সময়ে আবার শুরু হতে পারে। ইয়াহিয়া এবং নিয়াজি আগের প্রস্তাব নিয়ে টালবাহানা করায় আক্রমনের সময় টাও ঘনিয়ে আসছিল। তার উপর প্রদেশের উপর কারও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চোরাগোপ্তা হামলায় পাকিস্তানী এবং তাদের দোসররা নিহত বা আহত হচ্ছিল এমন পরিস্থিতিতে গভর্নর মালিক সেদিন সকালেই রাও ফরমান আলী এবং চীফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেনের প্ররোচনায় ‘সমগ্র পরিস্থিতি’ বিবেচনার জন্য গভর্নর হাউসে মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক ডাকেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে বেলা ১১টা নাগাদ। একটি পাকিস্তানী সিগন্যাল থেকে দিল্লীর বিমান সদর দফতর জানতে পারে, মাত্র ঘণ্টা খানেক বাদে ঢাকার গভর্নর ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তৎক্ষণাৎ ঐ বৈঠক চলাকালেই গভর্নর ভবন আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং ভারতীয় বিমান ঘাঁটি থেকে উড়ে এসে ৬ টি মিগ-২১ জঙ্গি বিমান বেলা এগারোটা বাইশ মিনিটে গভর্নর ভবনের উপর রকেট হামলা চালায়। এতে গভর্নর হাউজের ছাদ, দরজা, জানালা, আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়। গভর্নর ও তার সহকর্মীরা ট্রেঞ্চে আশ্রয় নেন। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন এই হামলায় কেউ নিহত না হলেও গভর্নর হাউজের একুরিয়ামের মাছ গুলি মারা যায়। সবচে আসল বিষয় হল এই হামলার ফলে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্তটা তড়িৎ হয়। বিমান হামলা শেষ হওয়ার পর গভর্নর মালিক সাঙ্গ পাঙ্গ সহ ট্রেঞ্চ থেকে ফিরে সকল মন্ত্রী সহ একযোগে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তারা ঢাকার আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রতিনিধিকে জানায় এবং নিরপেক্ষ জোন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় চায় এবং যথারিতি আশ্রয় পান।