শরণার্থীত্রাণে চৌরচক্র
(স্টাফ রিপাের্টার)
বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারা যখন দেশের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করতে দেহের শেষ রক্তবিন্দু ঢেলে দিচ্ছেন, ভারতের মানুষ যখন এক কোটি শরণার্থীর জন্য সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারে হাসি মুখে এগিয়ে এসেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্বদরবারে বাঙলাদেশের প্রশ্নে বিপুল জনমত সুষ্টিতে সফল হতে চলেছেন তখন এক দুষ্টচক্র শরণার্থীদের বঞ্চিত করে মুখের অন্ন চুরি করে খাচ্ছে, রােগের ঔষধ চুরি করছে বলে অভিযােগ উঠেছে। যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযােগ তারা হলাে একজাতীয় কন্ট্রাক্টর যারা ত্রাণ শিবিরে চাল ডাল সরবরাহের ঠিকা নিয়েছে আর কন্ট্রাক্টরদের মদত চিচ্ছে এক শ্রেণীর অফিসার।
শরণার্থীদের জন্য প্রত্যহ প্রয়ােজন হয় দেড় হাজার টন চালের, আনুপাতিক পরিমাণে ডাল, নুন, তেলের। কন্ট্রাক্টরচক্র এই চাল থেকে চুরি করছে বলে অভিযােগ উঠেছে। অভিযােগের গুরুত্ব বিবেচনা করে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের একজন অতি প্রবীণ ও পদস্থ অফিসার কলকাতা, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় তদন্ত করে গেছেন এবং অভিযােগের সত্যতার নিশ্চিন্ত হয়েছেন।
আরাে একটা বড় অভিযােগ উঠেছে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থীদের সহায়তা দেবার জন্য গঠিত একটি কমিটির বিরুদ্ধে। এই কমিটি বহু লক্ষ টাকা শরণার্থী ত্রাণে ও মুক্তিযুদ্ধ সহায়তায় ব্যয় করেছেন। সরকার থেকেও এই কমিটিকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দওেয়া হয়েছিল। এখন অভিযােগ উঠেছে, এই কমিটির পক্ষে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় সাবকমিটি যে বহু লক্ষ টাকার জিনিস কিনেছেন তার মধ্যে কারচুপি আছে। এই দ্রব্য ক্রয় সাবকমিটির অনুমােদন ছাড়াও কয়েকজন অতি উৎসাহী সদস্য বাজার থেকে বেশি দামে কিছু জিনিস কিনেছেন, এবং কেনা জিনিসের মধ্যেও কিছু গরমিল ধরা পড়েছে। এই কমিটিতে রাজ্যের বেশ কিছু নামকরা রাজনৈতিক নেতা যুক্ত আছেন, অভিযােগ সম্পর্কে তাদের কাছেও কথা উঠেছে। সকলেই এখন অভিযােগ সম্পর্কে তদন্তে তৎপর হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: সপ্তাহ, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১