You dont have javascript enabled! Please enable it!

১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ খুলনা নৌ ঘাটি দখল প্রচেষ্টা ও বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন

নৌ যান পদ্মার পূর্ব নাম ছিল অজয় জাহাজ নৌ যান পলাশের পূর্ব নাম ছিল অক্ষয়। ভারত সরকারের অনুদান সুত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রাপ্ত হন ( মতান্তরে ক্রয়) এবং প্রয়োজনীয় রুপান্তর করে কলকাতার মেয়র প্রফুল্ল কুমার ১২ অক্টোবর ১৯৭১ সালে কমিশন করান। সুন্দরবন এলাকায় এর আগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে এ দুটি নৌ যান। কম্যান্ডার লেঃ কঃ রায় চৌধুরীর কম্যান্ডে ভারতীয় নেভি ও বাংলাদেশী নৌ কমান্ডো সমন্বয়ে ‘পদ্মা’ কম্যান্ডার লেঃ শুনিল কুমার মিত্র ‘পলাশ’ এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একটি গানবোট পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা এবং কমান্ডার সামন্ত এর কম্যান্ডে ‘পানভেল’ খুলনা নৌ ঘাটি দখলের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এ ঘাটির বেশীরভাগ নেভি ৬ তারিখ কমান্ডার গুল জেরিনের সাথে পিএনএস যশোর / রাজশাহী যোগে পশ্চিম পাকিস্তানে পলায়ন করে। পানভেল এর কম্যান্ডার সামন্ত পুরা দলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয়( মতান্তরে এক সাথে) এবং পানভেল, পদ্মাও পলাশ সামনে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। কেউ কেউ বলে থাকেন পদ্মা ও পলাশ ভারতীয় বা বাংলাদেশের পতাকা বহন না করে পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে ছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজ দুটির শীর্ষে হলুদ কাপড়ের আচ্ছাদন দেয়ার কথা ছিল। ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে গানবোটগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এলে অনেক উচুঁতে তিনটি জঙ্গি বিমানকে উড়তে দেখা যায়। শত্রুর বিমান অনুধাবন করে ৪ টি গান বোট থেকে গুলি করার অনুমতি চাওয়া হয়।

কিন্তু অভিযানের সর্বাধিনায়ক সামন্ত ভারতীয় বিমান মনে করে গুলিবর্ষণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিমানগুলো অপ্রত্যাশিত ভাবে নীচে নেমে আসে এবং আচমকা গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রথম গোলা এসে পড়ে ‘পদ্মা’য় এবং পরবর্তীতে ‘পলাশে’। গোলা সরাসরি ‘পদ্মা’ এর ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে ইঞ্জিন বিধ্বস্ত করে। হতাহত হয় দু দেশের অনেক নাবিক। ‘পদ্মা’-র পরিণতিতে পলাশের অধিনায়ক লে. কমান্ডার রায় চৌধুরী নাবিকদের জাহাজ ত্যাগের নির্দেশ দেন। রুহুল আমিন এই আদেশে না মেনে উপস্থিত সবাইকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান করেন। কামানের ক্রুদের বিমানের দিকে গুলি ছুড়ঁতে বলে ইঞ্জিন রুমে ফিরে আসেন। কিন্তু অধিনায়কের আদেশ অমান্য করে বিমানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। বিমানগুলো উপূর্যপুরি বোমাবর্ষণ করে পলাশের ইঞ্জিনরুম ধ্বংস করে দেয়। । কিন্তু অসীম সাহসী রুহুল আমিন তারপর-ও চেষ্টা চালিয়ে যান পলাশকে বাঁচানোর। তবে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুন ধরে যায় এবং গোলার আঘাতে রুহুল আমিন আহত হন তিনি। অবশেষে পলাশের ধ্বংসাবশেষ পিছে ফেলেই আহত রুহুল আমিন ঝাঁপিয়ে পড়েন রূপসায়। তিনি স্রোতের টানে একটু দূরে পাড়েও এসে পৌছান। তিনি যেখানে পৌঁছেন সেখানে রাজাকারের দল খবর পেয়ে তাকে আটক করে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। স্থানীয় জনসাধারণ বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীর পাড়ে তাঁকে দাফন করেন। স্বাধীনতার পর অনেকেই এ বিষয়ে ওসমানীকে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি একে ফ্রেন্ডলি বা সেমসাইড বলেছিলেন। ৯ নং সেক্টরের লেঃ আরেফিনও একই কথা বলেছিলেন। এ ঘটনায় ১৮ জন ভারতীয় নৌ সেনা পাকিস্তানের হাতে বন্দী হয়েছিলেন। কম্যান্ডার সামন্ত পরে মহা বীরচক্র( বীর উত্তম) এবং অপর কম্যান্ডার গন বীর চক্র( বীর বিক্রম) পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!