ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ | ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ | বাঙ্গালিদের পরিকল্পনা- টি জে এস জর্জ
হংকং: বাংলার আকাশ আগামী মাসে আবার শুষ্ক থাকবে। ট্যাংক আবার চলবে, বিমান উড়তে পারবে এবং সৈন্য আসতে পারবে। বর্ষা শুরুর আগে সামরিক কর্তৃপক্ষ সীমান্তর সুরক্ষার জন্য জেঁকে বসেছে। দ্রুত সীমান্ত শহরগুলো যা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল সেগুলো নিরাপদ করার জন্য ব্যাবস্থা নেবে। যখন বর্ষা শেষ হবে তখন সম্ভবত তারা সমান গতিতে অন্যান্য অঞ্চলে অপারেশন শেষ করবে।
এই সম্ভাবনা দাবি করেছেন একজন সরকারিভাবে করেছেন – আওয়ামী লীগের পার্লামেন্ট সদস্য বা কূটনীতিকদের মতে তাদের আন্দোলন বছরের শেষ দিকে মিলিটারি একশনে শেষ হবে। একটি কথাই তারা বলেছেন – তা হল – হয় আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে তারা স্বাধীন হবে অথবা একটি দীর্ঘ গেরিলা সংগ্রাম চলতে থাকবে।
এটা ইচ্ছামত চিন্তা নয়। পাঁচ হাজার অত্যন্ত ভাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা গত মাসে যুদ্ধে যোগদান করেছে। যদিও তারা মেয়াদ উত্তীর্ন অস্ত্র দিয়ে কাজ চালাচ্ছে। সাবেক বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর ১০০০০ সদস্য এখনো দেশ ভিতরে সক্রিয় আছে।
বাংলাদেশ “সরকার” (অবস্থান অজানা) এছাড়াও নিবিড় সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং এর ফলে ৬০০০০ থেকে ৭০০০০ মানুষের একটি ‘নিয়মিত বাহিনী’ তৈরি হবে। এরা শরণার্থীদের থেকে আসছে – যাদের সংখ্যা ভারতীয়দের হিসেব অনুযায়ী সাড়ে আট মিলিয়ন। আর পাকিস্তানের মতে ২ মিলিয়নের কাছাকাছি।
মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হিসাবে কার্যকর হবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তারা বলে – অস্ত্র – কোন সমস্যা নয়। তারা বিদেশী বাঙালিদের থেকে ফান্ড সংগ্রহ করেছে, বাণিজ্যিকভাবে অস্ত্রবাজারে আধুনিক অস্ত্রের প্রাপ্যতা এবং ইস্রায়েলের মত কিছু দেশের সম্মতি তাদের কাজে লাগবে। তারা এটা উল্লেখ করে নাই কিন্তু ভারতের “নির্ভরযোগ্য এলাকা” এই গণনার একটি বড় কারণ হবে।
এসব গণনার বেশিরভাগ যুক্তিযুক্ত। এটা বলা কঠিন যে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য ঘুরে দাঁড়াবে না। সাম্প্রতিক সময়ে ধারনা দেয়া হয় যে একটি বেসামরিক সরকার প্রশাসনে আসতে পারে তার সাথে সেনাবাহিনী সমন্বয় করে চলতে পারে। সম্প্রতি বেসামরিক গভর্নর ১০ জন মানুষ নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রীসভা করেছেন এবং পূর্ব অঞ্চলে উপনির্বাচন নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রস্তুত করা শেষ হয়ে যাবে।
এসকল পদক্ষেপ বাঙ্গালিকে আরও তিক্ত করে তুলবে। তারা তারা গভর্নর এ এম মালেককে চেনেনা। এই মন্ত্রিসভা দক্ষিণপন্থী দলগুলোর সদস্যদের নিয়ে গঠিত যারা নির্বাচনে হেরে গেছে। আওয়ামী লীগে উপ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের আরও একটি বিষয় সাহায্য করতে পারে। তা হলপশ্চিম পাকিস্তানের অস্থিরতা। বাংলার সংগ্রাম ধীরে ধীরে পশ্চিম অংশে উপজাতীয় স্বায়ত্তশাসনের জন্য যে আন্দোলন তার উপর একটি প্রভাব ফেলতে পারে। খাইবার মেল সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে মুক্তির জন্য বেলুচিস্থান ন্যাশনাল ফ্রন্ট কার্যক্রম চালাচ্ছে, কাবুল (আফগানিস্তান) রেডিও সম্প্রতি জানায় যে পাঠানরা একটি সভা করেছে একটি সার্বভৌম পাখতুনিস্তান গঠনের দাবিতে।
শহরাঞ্চলে সম্ভবত আরো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে শ্রমিক ও ছাত্রদের মধ্যে। এই মুহূর্ত তারা জুলফিকার আলি ভুট্টোকে তাদের অঞ্চলের নেতৃত্বে চাচ্ছেন।
ভুট্টো চেষ্টা করছেন। তিনি এখনও তার ককটেল সহচরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে সম্প্রতি বলেছেন যদি ইয়াহিয়া “জাতীয় প্রধানমন্ত্রী” হতেন। অন্যদিকে তিনি কনিষ্ঠ মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের বলেন তিনি যথেষ্ট বয়স পার করে এসেছেন।
এটা ভুট্টোর জন্য কল্পনাতীত যে জুনয়র অফিসারদের থেকে সামরিক অভ্যুত্থান হবে ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে কারণ সম্ভবত ইয়াহিয়াকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তারা দেখে।
ভুট্টো যদি ড্রাইভারের সীট পায়, তবে সে হয়ত পূর্ব পাকিস্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু অন্যদের হস্তক্ষেপ হতে পারে – কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা পূর্বাঞ্চলে সামরিক অবস্থান থেকে বিরত থাকতে পারে -ভারতের সেনাবাহিনী একটি সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে – বাঙ্গালি ফোর্স হরতাল দিতে পারে।
আসল ব্যাপার হল এসব সম্ভাবনা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আলোচনা শুরু হয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে একটি চাহিদা তৈরি হতে পারে পূর্ব অঞ্চলের করা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি থামানোর ব্যাপারে। যেভাবেই হোক – অক্টোবর-নভেম্বর পাকিস্তানের জন্য একটি নিষ্পত্তিমূলক সময় হতে পারে।