জয় বাংলা ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখের মূল পত্রিকা
মূল পত্রিকা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুজিবনগর থেকে ঢাকায় একই প্রশ্ন
বঙ্গবন্ধু কবে ফিরছেন
(জয়বাংলা প্রতিনিধি)
এখন মুজিব নগর থেকে ঢাকা সর্বত্র একই একই প্রশ্ন ,একই বিষাদ মাখা জিজ্ঞাসা-বঙ্গবন্ধু কবে ফিরবেন?পাকিস্তানী জংগি জান্তার নতুন প্রেসিডেন্ট ভূট্টো বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত কোঁড়ে অজ্ঞাতস্থানে গৃহবন্দী করেছেন এবং বাংলার মির জাফর নুরুল আমীনকে ভাইস-প্রসিডেন্ট পদে নিয়োগ করেছেন।এতে পর্যবেক্ষকমহল সন্দেহ করছেন বাংলাদেশ প্রশ্নে পিকিংয়ের মদত নিয়ে নতুন চক্রান্তে অবতীর্ন হতে পারে।কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর হাতে এখন প্রায় লক্ষ্যের কাছাকাছি হানাদার সৈন্য এবং নিয়াজী ফরমান আলী সহ বহু হানাদার অফিসার বন্দী।সুতরাং এই বন্দীদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য করাচী-লাহোর-পেশোয়ারে যে বিক্ষোভ শুরু হবে,তার পরিণতিতে ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন,এমন একটি আশা এখন সকলের মনেই অঙ্কুরিত হয়েছে।পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের লক্ষ্য লক্ষ্য পরিবার পরিজনের সম্মিলিত দাবীর মুখে ভুট্টোর ভন্ডামী বেশীদিন টিকবে না এবং বঙ্গবন্ধু শীঘ্রই ঢাকা ফিরবেন এই দৃঢ় প্রত্যয় এখন সকলের বুকে। বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি করলে পাকিস্তানকে আরেকটি বড় আঘাতের জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ভুট্টোকেও ইয়াহিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে।
ঢাকায় চলেছি
–আবদুল গাফফার চৌধুরী
এবার মুজিবনগর থেকে ঢাকায় ফেরার পালা।কত স্মৃতিমাখা কুষ্টিয়ার সেই আমাএর বাগান—যেখানে উচ্চারিত হয়েছে স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাপত্র,মুজিবনগরের প্রতি ধুলিকণায় লেখা কত শহীদের রক্তাক্ত কাহিনী,নয় মাসের কত সুখ দুঃখের স্মৃতি,একটি নবজাত প্রজাতন্ত্রের সরকারী কাজকর্মের তৎপরতা,স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও কর্মীদের সেই অনলস খাটনি,জয়বাংলা পত্রিকা প্রকাশের সেই চাঞ্চল্যকর উত্তেজনামাখা দিনগুলো, সব পেছনে ফেলে আবার ফিরে চলেছি ঢাকায়।এই ঢাকা ছেড়ে একদিন এসেছিলাম বজ্র শপথ বুকে,এখন ফিরে চলেছি আনন্দাশ্রু দুই-ই চোখে নিয়ে।স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী মুক্তিবাহিনীর অবশিষ্ট বীর যোদ্ধারাও ঢাকায় ফিরে চলেছেন।যারা এসেছিলেন তারা সকলে ফিরে যাচ্ছেন না।স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মহুতি দিয়ে অনেকেই এখন চিরনিদ্রায় শায়িত মুক্ত বাংলার শ্যামল মাটিতে।আহা ভাইরা আমার তোমরা ঘুমোও।তোমাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি এমন সাধ্য আমাদের নেই।দেশ্মাতার তোমরাই প্রকৃত বীর সন্তান।সোনার বাংলাকে শৃংখল্মুক্ত করার গৌরব তোমাদের।তোমরা আমাদের গর্ব।চিরকাল আমরা তোমাদের জয়ধ্বনি কন্ঠে ধারন করে বেড়াব।
ঢাকা এখন মুক্ত বাংলার রাজধানী।সংগ্রামে সাফল্যের পর এখন চলছে পুনর্গঠনের পালা।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নেতারাও মুজিবনগর ছেড়ে চলে গেছেন ঢাকায়।ভাবতে ভাবতে চোখে আনন্দাশ্রু গড়ায়।যে শহীদ মিনারের ভগ্নস্তুপ দেখে এসেছি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পাশে,আবার সেখানে উঠবে শহীদ মিনারের অভ্রভেদী চূড়া।আবার ঢাকার রাস্তা হয়ত কলরব মুখর হয়ে উঠেছে।কিন্তু আমার মনে শান্তি শান্তনা কোথায়?যাদের ঢাকায় রেখে এসেছিলাম তাদের কি গিয়ে আবার ফিরে পাবো?যে অসংখ্য ঘরে বাতি নিভে গেছে,তা-কি আবার প্রজ্বলিত হবে আমাদের প্রত্যাবর্তনে?কিন্তু কেমন করে?কোথায় ইত্তেফাকের সেই সদানন্দ মানুষটি,সিরাজ ভাই,যার সাথে বহুকাল সাংবাদিকতা করেছি?কোথায় পূর্বদেশের সেই তরুন সাংবাদিক মোস্তফা,যার বিয়ে খেয়েছি বছর খানেক হয়?কোথায় ডঃ রাব্বি,শহিদুল্লা কায়সার,আলিম চৌধুরী,মুরতজা,মনিরুজ্জামান?কোথায় আবার দেখা পাব সেই শান্ত হাসিমাখা মুখ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর?বাংলার আকাশ কাদছে।ঢাকার বাতাস এখন কাদছে।হায় পাকিস্তানী আইখম্যান ,তোমার বর্বর ঘাতকবৃত্তি এই বিংশ শতাব্দীতেও রেখে গেল মানবতাফ্রোহের ইতিহাসে এক পৈশাচিক নজির বিহীন নকির।তোয়াকে ক্ষমা?না ক্ষমা নয়।তুমি যুদ্ধবন্দী নও,যুদ্ধাপরাধী।পৃথীবীর আলোবাতাস ভোগের কোন অধিকার নেই এই নরপশু,নরঘাতকের।
ঢাকার কান্না মুজিবনগরের এই পরিত্যক্ত আকাশেও যেন শোকের কুয়াশা জমিয়েছে।পৌষের কুয়াশার চাইতে এই কুয়াশা জমিয়েছে।পৌষের কুশার চাইতেও এই কুয়াশা ঘন এবং ভারী।মুজিবনগর এখন শুন্য।জয়বাংলার এটাই- মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত শেষ সংখ্যা।এরপর জয়বাংলা নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করবে ঢাকা থেকে।
আনন্দ আর বিষাদ দুই-ই আজ আমার অন্তর ছেয়ে আছে।মুজিবনগরের বাতাসে বিসায়ের কান্না।ঢাকার আকাশে নতুন আগমনী সানাই।আজ মুক্ত বাংলার মুক্ত তীর্থের দিকে চেয়ে শুধু প্রার্থনা করি মনে মনে –
তোমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবারে দাও শকতি । -জয়বাংলা।
ভারত সাহায্য করবে
‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ভারত সর্বপ্রকার সাহায্য দেবে।নতুন রাষ্ট্রের জনগনের অর্থনৈতিক উন্নতিই তাদের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করবে,যে স্বাধীনতার জন্যে ভারত প্রায় সর্বপ্রকার ঝুঁকি নিয়েছিল।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রী ওয়াই,বি,চ্যাবন সম্প্রতি এক জনসভায় ভাষনদান কালে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠীত গণহত্যার ব্যাপারে জাতিসংঘের ভুমিকার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন রাষ্ট্রসংঘ বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার ব্যাপারে কিছুই করতে পারেনি।যারা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধারক ও বাহক বলে দাবী করেন সেই সব বৃহৎ শক্তির তিনি সমালোচনা করেন ।শ্রী চ্যাবন আন্তরিক আশা প্রকাশ করেন যে,’’পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে তার নীতির পরিবর্তন ঘটাবে।এতে তার ভবিষ্যতে ভাল হবে।‘’
বিপুল সংবর্ধনা
বুধবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য নেতা মুজিবনগর থেকে ঢাকা পৌঁছলে তাদের বিপুল সংবর্ধনা জানান হয়।
২১ জন বুদ্ধিজীবীর আবেদন
২১ জন বুদ্ধিজীবী গত ২০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিত আবেদনে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যার জন্য দায়ী পাকবাহীনির যুদ্ধবন্দীদের বিচার দাবী করেছেন।তারা এই জন্য একটি মিলিটারী ট্রাইবুনাল গঠনের জন্যে অনুরোধ করেছেন।বুদ্ধিজীবীগণ বলেন যে,প্রকৃত অপরাধীরা যেন শাস্তি গ্রহন বিনা পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে না পারে।
এই আবেদন পত্রে জন-সাধারনকে অনুরোধ করা হয়েছে যে,তারা যেন আইন নিজের হাতে না নেন এবং সরকারকে আইন শৃংখলা রক্ষা করতে সহায়তা করেন।
জনাব এ,আর মলিক,ডঃ মজহারুল ইসলাম,শ্রী রণেশ দাসগুপ্ত,জনাব কামরুল হাসান,জনাব শওকত ওসমান প্রমুখ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,শিল্পী ও সাহিত্যিক-বৃন্দ এই আবেদন করেছেন।
ঢাকা কলকাতা দিল্লী
কলকাতা ও দিল্লীর সংগে ঢাকার টেলিফোন যোগাযোগ সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে।আমাদের ডাক ও তার বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল জনাব লোকমান হোসেন ভারতের যোগাযোগ দফতরের সেক্রেটারী শ্রী এন, ভি, শেলয় ও ভারত সরকারের উপদেষ্টা শ্রী এম,কে বসুর সঙ্গে গত ১৮ই ডিসেম্বর নতুন লাইনে কথাবার্তা বলেছেন।উল্লেখযোগ্য, ভারতের বিদেশ সংযোগ ব্যাবস্থার আওতায় এই টেলিফোন ব্যাবস্থা পরিচালিত হবে।
Unicoded by- Mehedi Hasan Piyal
ত্রিদিব রায়ের মিশন ব্যার্থ
চট্টগ্রামের চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় গত ২১শে নভেম্বর কলোম্বোতে সিংহলের সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত কবুল করেছেন যে,পূর্ববংগে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেওয়া দরকার।নারীঘাতী,শিশুঘাতী ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হিসাবে গত ২৫শে নভেম্বর রাজা ত্রিদিব রায় সিংহলে যান।তার উদ্বেগ ছিল শাক্যবংশ গৌরবের সুযোগ নিয়ে ইয়াহিয়ার হস্তে সিংহলের বৌদ্ধ অধিবাসীদের কাছে ওকালতী করা।কিন্তু চারদিন ব্যার্থ চেষ্টা করে বিফল মনোরথ হয়ে রাজাবাহাদুর গত ২১শে নভেম্বর ব্যাংককের পথে পাড়ি জমিয়েছেন।
রাজাবাহাদুরের প্রচেষ্টা যে কি ভাবে ব্যার্থ হয়েছে তা টাইমস উইক এলডারের রাজনৈতিক ভাষ্যকার কয়েকটি কথায় চমতকারভাবে প্রকাশ করেছেন।তিনি বলেছেন একটা ত্রিদিব রায়তো দূরের কথা শত শত ত্রিদিব রায়ও সিংহল বাসীদের ইয়াহিয়ার অনূকূলে নিয়ে যেতে পারবে না।ইয়াওয়ার এই প্রয়াস অনেকটা দালাই লামাকে তিব্বতে ফিরিয়ে যাবার জন্যে চৌ এন লাইয়ের কাছে দরবার করার মতই হাস্যকর।পূর্ববংগে জংগীশাহীর নির্মম অত্যাচারে সিংহলের অধীবাসীদের তীব্র ক্ষোভ আন্দাজ করতে পেরে সিংহল সরকার ত্রিদিব রায়কে তেমন আদর আপ্যায়ণ করতে ভরসা পাননি।সিং হল বেতারে রাজাবাহাদুরের সফর ও মোলাকাতের কথাও প্রচার করা হয় নি।এমনকি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী বন্দর নায়েকের সঙ্গে ত্রিদিব রায়ের সাক্ষাতের কথাও বেতার থেকে চেপে যাওয়া হয়।ত্রিদিব রায় সিংহলের বৌদ্ধ নেতাদের সংগে আলাপ করেও সুবিধা পাননি।
কিন্তু মহারাজার দালালীর চাকুরীটা টেকে কিনা সন্দেহ।সিং হলের সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত রাজা বাহাদুর ত্রিদিব রায় চোখের পানিতে নাকের পানিতে ০ বড় বেসামাল কথা বলে ফেলেছেন।রাজাবাহাদুর স্বীকার করেছেন যে,পূর্ববঙ্গে অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করেছিল।শুধু তাই নয় তিনি আরো কবুল করেছেন, পূর্ববঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত পন্থা হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেয়া।
পৃষ্ঠা-৪
স্বাধীনতার পর জাতি গঠনের গুরুত্ব
ডলি নাথ
৬ই ডিসেম্বর সোমবার বেলা ১১টা(১৯৭১ সাল) আমাদের জীবনে তথা বাঙলাদেশের জীবনে এক স্মরণীয় ও বরণীয় মূহূর্ত।যে শুভ মূহূর্তে ভারত সরকার ,শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাঙ্গলাদেশের স্থান দিলেন।সর্ব প্রথম আমরা ভারত সরকারের কাছে স্বীকৃতি পেলাম এবং এই স্বীকৃতিই সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে সহায়তা করবে ।৭ই মার্চ (১৯৭১ সাল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার পল্টন ময়দানে এক আগ্মিগর্ভ বক্ততা দিয়েছিলেন। সে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বাংলার শহরে-নগরে ,আকাশে বাতাসে ,বাংলার ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়িয়েছিল।২৩শে মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা সুর্যের মত ঝিক ঝিক করে উঠল ।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীন পতাকা পশ্চিমা গোষ্ঠী ছিনিয়ে নিতে চাইল চালাল অত্যাচার, নিপীড়ন । সে অত্যাচার ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সে অত্যাচার হিটলার, নাদির শাহ্, “চেঙ্গিস খা এদের চেয়েও যথেষ্ট নির্মম-নিষ্ঠুর জঘন্য । আমর! বাঙ্গালীরাও চুপচাপ মুখবুজে ওদের অত্যাচার সইতে চাইলাম না । আমরা প্রতিশোধ নিতে চাইলাম । আর কতদিন?সুদীর্ঘ ২৪ চছর ধরে বাংগালীরা নির্মম নির্যাতনে নির্যাতিত,নিষ্পেষনে ঝর্ঝরিত। এবার বাঙালীর শুধু রক্ত দিতে চাইল না রক্ত নিতেও শিখল । তাই আরম্ভ হল সশস্ত্র আন্দোলন আর মরণ-পণ . সংগ্রাম। এই সংগ্রাম বাঙালীর সংগ্রাম_-এই সংগ্রাম সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তির সংগ্রাম । এই সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ল ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, কৃষক-শ্রমিক-মজুর ৷ পুরুষের সাথে হাত মিলিয়ে বাঙলার নারী সমাজও ঝাপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র সংগ্রামে ৷ বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা চরম ধৈর্য্য, ত্যাগ ও তিতীক্ষার মধ্য দিয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে যে মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বিশ্বের কোন শক্তিই এদের অভিযানকে রোধ করতে পারেনি, পারবেও না। এরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত। বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশের বিজয় গাথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।মুক্তি বাহীনিকে শত প্রণাম,শত সালাম।আমাদের মুক্তিবাহিনী প্রথমে বলতে গেলে খালি হাতেই নেমেছিল সংগ্রামে,বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় । ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত গিয়েছিল, বাংলাদেশ বৃটিশের কবলে পড়েছিল । প্রায় ২০০ বছর পরে ১৯৪৭ সালে আমরা নামে মাত্র স্বাধীনতা পেয়েছিলাম । সে স্বাধীনতার মূলেও -ছিল বাঙালীর রক্ত, বাঙলার তাজ ছেলের আত্মবলী- দান। কিন্তু সেদিনকার সেই স্বাধীনতা আমরা পরিপুর্ণ রুপে ভোগ করতে পারি নি ।আমাদের স্বাধীনতা সুর্য এসেছিল ঠিকই,কিন্তু সে সূর্য দ্বিখন্ডিত হয়ে দুই বাংলা সম্পূর্ণ দুই মুর্তি নিয়ে বাংগালির মনকে ভেঙ্গে চুরমার করে,বাঙালীর মনে বিষ ঢুকিয়ে মনে ভাইয়ে ভাইয়ে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে । যে শুভ মুহূর্তে আমরা হিন্দু মুসলমান এক হয়েছি, হাতে হাত মিলিয়ে সংগ্রাম করে চলেছি, সেই মিলিত সংগ্রাম আমাদের বিজয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছে, পশ্চিমাগোষ্ঠি আমাদের মনে বিদ্বেষ ঢুকিয়ে-আমাদের মধ্যে ভাংগন ধরিয়ে ভেবেছিল বাঙালী হিন্দু ও মুসলমান এই দুইটি সম্প্রদায় পৃথক করতে পারলে এদের শক্তি ভেঙ্গে যাবে । আর তার ফলে পশ্চিমাগোষ্ঠী নিরাপদে -শোষণ করে শাসন চালিয়ে যেতে পারবে বছরের পর বছর ধরে। কিন্তুনা-তা আর হল না কালের চাকা ঘুরে গেল । বাঙালী হিন্দু মুসলমান একযোগে নামল সংগ্রামে, এগিয়ে চলল চুড়ান্ত বিজয়ের পথে ৷ আজ আমরা ষে স্বাধীনতা সে স্বাধীনতা আমাদের দ্বারে সহজে আসেনি। কত মায়ের বুক ফাটা ক্রন্দনের বিনিময়ে ক্রীত এই স্বাধীনতা কত বধূর সিথির বিনিময়ে ক্রীত এই স্বাধীনতা, কত ভগ্নীর দীর্ঘনিশ্বাসের বিনিময়ে ক্রীত এই স্বাধীনতা, কত রক্তের বিনিময়ে ক্রীত এই স্বাধীনতা । সেই মহামূল্যবান স্বাধীনতা আজ আমাদের দ্বারে আগত । এখন আমরা স্বাধীনতা৷ পেয়েছি _ তাই আমাদের কর্তব্য পালনে অগ্রনি হতে হবে । যেমন করে শত ত্যাগ ও তীতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের
স্বাধীনতা আমরা এনেছি, ঠিক তেমনি করেই. আমাদের কর্তব্য ও জাতিগঠনে তৎপর হতে হবে । দেশকে নূতন করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের দেশ কৃষি প্রধান, তাই আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ কৃষির উপর নজর দেওয়া বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ জমিতে ফসল ফলে । এই দেশের শতকরা ২০ ভাগ আবাদি জমিতে দুবার ফসল ফলে । কোন কোন ক্ষেত্রে তিনবারও ফসল ফলে । বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট ।বিশ্বের শতকরা ৮০ ভাগ উন্নত ধরণের পাট উৎপন্ন হয় এখানে । প্রতি বছর গড়পড়তায় বাঙলাদেশে প্রায় ১০ লক্ষ উন পাট উৎপন্ন হয়। পাট রপ্তানি করে ১৯৬৭-৬৮ সালে বিদেশ থেকে আয় হয়েছিল প্রায় ১৩৯ কোটি টাকা।পাটের পরেই প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে উওল্লেখ করতে হয় চায়ের কথা।১৯৬৮-৬৯ সালের হিসাব থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে উতপাদিত চায়ের পরিমান ছিল প্রায় ২৯০০০ টন,এই উৎপাদন কে আরো বৃদ্ধি করা যায়।বাংলাদেশে প্রতি বছর পাট ,চা ও অন্যান্য দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে ২২৫ কোটি টাকার উপর।এই টাকা কেবলমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশের প্রয়োজনেই বায় করা যাবে। এখন আমাদের চাষীদের উপর যথেষ্ঠ নজর দিতে হবে । তাদের উন্নত ধরণের বীজ সরবরাহ করতে হবে. ব্যাংক থেকে চাষীদের যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার দিতে হবে। তাদের উন্নত ধরনের ট্রাক্টর যোগান দিতে হবে।যেসব জমিতে ট্রাক্টর চালান সম্ভব নয়সে সেসব জমির কৃষককে ভাল গরুর ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি কৃষকদের স্বাস্থ্যের প্রতি যথেষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের ব্যাংক থেকে যতদুর সম্ভব সাহায্য করতে হবে । কৃষকই জাতীর মেরুদণ্ড ।একথা আমাদের ভুললে চলবে না। কেওবল্মাত্র কৃষির উপরেই লক্ষ্য রাখলেই চলবে না,আমাদের শিল্পের দিকেও যথেষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে। বাংলাদেশে কলকারখানা গড়ে তুলবার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। আমাদের দেশে গত ২৩-২৪ বছরে যে পরিমাণ কলকারখানা গড়ে উঠেছিল প্রয়োজনের তুলনায় তা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশে কলকারখানা গড়ে তুলবার জন্য যে অর্থ লাগবে তা পাওয়া যাবে কৃষিজাত দ্রব্যের রপ্তানী থেকে । আমাদের দেশে কাজ করবার লোকের অভাব নেই।আমাদের দেশে শ্রম সস্তা ।শ্রম সস্তা বলে কম পুজিতে এখানে কলকারখানা চালু করা সম্ভব। আমাদের অর্থনীতিতে বর্তমানে শ্রমের প্রাচুর্য দিয়ে পুজির অপ্রাচুর্যকে কমিয়ে নেওয়া যাবে । পরে আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে হবে মজুরী বৃদ্ধি । দেখা দেবে আর্থিক ও সচ্ছলতা সম্বৃদ্ধি। বাংলাদেশ বাইরে থেকে তুলা রপ্তানী করে এখানে বয়ন শিল্পের যথেষ্ট প্রসার করা চলে । বাংলাদেশে ইংরেজ আমলে ১০টি কাপড়ের কল ছিল । কিন্তু পাকিস্তান হবার পর বাংলাদেশে যেন হারে কাপড়ের কল হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি । বাংলাদেশের বাজারে তাই পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড় বিক্রী হত । বাংলাদেশের জলবায়ু বয়ন শিল্পের উপযোগী। একদিন বাংলাদেশ ছিল বয়ন শিল্পে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ।ঢাকার মসলিন শাড়ি ছিল পৃথিবী বিখ্যাত। | ইউরোপীয় বনিকরা বাংলাদেশের প্রতি প্রধানত আকৃষ্ট হয় বাংলাদেশের তৈরী কাপড় বিক্রী করে ব্যবসায় লাভ করার জন্যর ফরাসী পর্যটক বেরনিয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় বাংলাদেশে আসেন। তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে লিখেছেন, বাংলাদেশকে বলা যায় সারা পৃথিবীর বস্ত্রের আডত । তাছাড়া বাঙলাদেশের মাটির নীচে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ আছে,সে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যথেষ্ট নয়।দেশের ছাত্রদের বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে । যাহাতে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদকে পরিপূর্ণভাবে আরো কাজে লাগাতে পারি ব্রাহ্মনবাডিয়াতে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস, অনেকদিন পর্যন্ত জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা চলবে, বগুড়ার জয়পুরহাট অঞ্চলে কয়লাখনির সন্ধান পাওয়া গিয়াছে । খুজলে বাংলাদেশের মাটির নিচে তেলও পাওয়া যেতে পারে।সমুদ্র তীরে জোয়ার ভাটার যে সক্তি তৈরি হয় ,তা থেকে ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন সম্ভব হতে পারে।এছাড়া বাঙলাদেশের নদ-নদী থেকে আরও জল-বিদ্যৎ উৎপাদন সম্ভব । যুদ্ধে ক্ষতি হয় সেই সব দেশেরই বেশী যাদের অর্থনীতি বিশেষভাবে কলকারখানার উপর নির্ভরশীল । যুদ্ধের শেষে সব দেশের মানুষের মনেই বিশেষ ধরণের নিষ্ঠা ও কর্মোদ্যম পরিলক্ষিত হয়। এই নিষ্ঠা ও উদ্যমের জোরে একটা দেশ যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি অনেক কাটিয়ে উঠতে পারে । গত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি জাপানের হয়েছিল ভয়াবহ ক্ষতি। কিন্ত তার তাদের এই. ক্ষয়ক্ষতিকে দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল তাদের নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতার ফলে।যুদ্ধ শেষে আমাদের মধ্যেও জাগবে গঠনমূলক কর্মোদ্যম।এখন আমরা যেমন একযোগে লড়ছি তখনো আমাদের একসাথে লড়তে হবে আর্থিক পুর্নগঠনের জন্য।একটা দেশের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করে সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ,মানুষের কর্ম কুশলতা ও সামাজিক ব্যাবস্থার উপর।আগামি বাংলাদেশের সমাজ সংগঠন গড়ে উঠবে তার অর্থনৈতিক অগ্রগত্তির সাথে সংগতিপূর্ণভাবে।সর্বোপরি আমাদের মাঝে মৈত্রি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অটুট রাখতে হবে।বিশেষ করে এই সময় অর্থাৎ,স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই আমাদের অর্থাৎ নারী সমাজের যথেষ্ট ভূমিকা। আছে । আমাদের ভূমিকাও আমাদের পরিপুর্ণরূপে পালন করতে হবে। নারী শিক্ষার হার বাড়াতে হবে, স্ত্রী শিক্ষা ব্যাতীত কোন জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারে না।শিশুদের গঠনের মুলে মায়েদের কর্তব্য সবচেয়ে বেশী । যে শিশু ভবিষ্যতের রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব হাতে নেবে,সে শিশুকে গঠন মায়েদেরকেই করতে হয়, তাই প্রতিটি মেয়েই যদি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তাহলে প্রতিটি শিশুই ভাল হয়ে গড়ে উঠবে। কিন্ত মা যদি অশিক্ষিতা হয় তাহলে সে শিশু সহজে ভাল হতে পারে না। আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়েই যদি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতা হয় তাহলে দেশ দ্রত পদক্ষেপে উন্নতির সর্বোচ্চশিখরে আরোহন করবে । ।স্বাধীনতার পর পরই স্ত্রীশিক্ষার প্রসার বাড়ান একটি প্রধান কর্তব্য। তার জন্য গ্রামে মেয়েদের স্কুল গড়ে তুলতে হবে আর কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে । এখনও বাঙলাদেশের বহু অঞ্চলে বাল্য বিবাহ প্রচলন আছে, এগুলি দূর করতে হবে। সরকারের আইন থাকবে ১৬ বছরের আগে কোন মেয়েকেই বিয়ে দেওয়া চলবে না। গরীব মেয়েদের যথেষ্ঠ অর্থ সাহায্য দিতে হবে, অর্থের অভাবে তাদের শিক্ষা যেন বাধা প্রাপ্ত না হয়। সর্বশেষে আমি বলতে চাই আমাদের প্রত্যেককে জাতি গঠনে তথা দেশ গঠনে তৎপর হতে হবে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই দেশের মঙ্গল তবেই দেশের উন্নতি ৷.
Unicoded by- Mehedi Hasan Piyal
অমর বাংগালী
শ্রী চিত্তরঞ্জন খাঁড়া
বাঙ্গালী মরে না কোন দুর্যোগে সময়ের সন্তান
দুখানা অস্থি যদি পড়ে থাকে আবার জাগিবে প্রাণ।
দুর্বল নহে বাংগালীরা আর
বজ্র সমান দধিচীর হাড়
স্বর্গ-মর্ত করি তোলপাড় চালায়েছে অভিযান
বাঙ্গালী মরে না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ।
সাড়ে সাত কোটি বাংলার সেনা দাড়ায়েছে তুলি শির
তাহারে বধিবে পৃথিবীর বুকে আছে.কিরে হেন-বীর?
এই তো সেদিন কেই-বা জানে না
লড়েছিল কত ইংরেজ সেনা
মুখে উঠেছিল মরণের ফেনা, এমন সে পালোয়ান
বাঙ্গালী মরে না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ।
যুগে যুগে এই বাংলার বুকে উঠিয়াছে কত ঝড়
শাসনে শোষণে পীড়নে পেষনে ভেঙেছে এদের ঘর
দস্যু্দলের কত ছল কলা
লিখিয়া সেসব যায় কিগো বলা
সহিব না আর পর পদদলা, লাঞ্চনা, অপমান
বাঙ্গালী মরে না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ।
ইয়াহিয়া ! আজ বাংলার বুকে এসেছ দস্যু বেশে:
ড্রাগনের মত বিষ ঝরিতেছে তোমাদের নিঃশ্বাস
‘মাইন’ পাতিয়া রোসেনরা বোন
পলকে করিল দস্যু নিধন
পথে প্রান্তরে মরিছে এখন তোমার পাকিস্তান
বাঙ্গালী মরে না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ।
ইয়াহিয়া! তুমি ডাকিয়া আনিলে ইরান-ইরাক-চীন
অস্ত্র যোগান দিতেছে তোমায় দুশমণ মারকিণ,
টুকরো টুকরো হয়েছে এবার
পাকিস্তান-ই-হারেম তোমার
বাঙ্গালীর হাতে নাহি নিস্তার শুনে রাখ শয়তান
বাংগালী মরে না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ॥
জল্লাদ! আজ বসিয়াছ তুমি মৃত্যু সিংহাসনে
এখনি চুর্ণ হইবে আসন বিরাট বিস্ফোরণে
মৃত্যুকে মোরা করি নাকো ভয়
বাংলা স্বাধীন হল নিশ্চয়
আমরা বাঙ্গালী আর কিছু নয় হিন্দু-মুসলমান
আমরা মরি না কোন দুর্যোগে অমরের সন্তান ।
ইতিহাসের দৃষ্টিতে নুরুল আমিন
শেখ আবু হামেদ
কসাই ইয়াহিয়া নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী করে পিনডিতে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। আর পাকিস্তানের ৭টি পাঞ্জাব ভিত্তিক রাজনৈতিক দল খুনী নুরুল আমীনকে তাদের দলের পার্লামেন্টারী পাটির নেতা নির্বাচন করেছিল । বাংলাদেশ শশ্মান থেকে মহাশশ্মান হোক, তবু খুনী নুরুল আমীন প্রধানমন্ত্রী হবেন। বড় খায়েশ ছিল নুরুল আমীনের । কিন্তু তার সেই খোয়াব ভেঙে গেছে । অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলার ইতিহাসের একটি বিশেষ পাতাকে মেলে ধরলো সংবাদটা আমার চোখের সামনে ।১৭৫৬ সাল।একদিকে স্বাধীনতা রক্ষার অগ্মিমন্ত্রে দীক্ষিত যৌবন ও তারুণ্যের মূর্ত প্রতীক নতুন. নবাব সিরাজউদ্দোল্লা যখন বেতমিজ উদ্ধত ও বাংলার বুকে সাম্রাজ্য করে স্থাপনের স্বপ্নে বিভোর বিদেশী ইংরেজ বেনিয়াদের শায়েস্তা করবার দুর্বার অভিযানে চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পলাশীযুদ্ধে লিপ্ত, তখন তারই প্রধান সেনাপতি ও আত্মীয় মীরজাফর আলী খান নবাবকে পরাজিত করে নিজে নবাব হবার ষড়যন্ত্রে ইংরেজ প্রতিনিধি উচ্চাকাঙ্খী ক্লাইভ ও ওয়াটসনদের সাথে গোপনে বৈঠকে ব্যস্ত ।বিংশ শতাব্দীর স্বাধীন বাংলার মুক্তি সেনারা যখন সাম্রাজ্য লুলুপ বিদেশি পাকিস্তানী সেনাদের পরাভূত করে অঞ্চলের পর অঞ্চল দখল করে চলছে আর মুখোমুখি হচ্ছে চূড়ান্ত বিজয়ের,সেই মূহূর্তেও বিংশ শতাব্দির বাংলার মীরজাফর নুরুল আমীন “বেইন্সাফাবাদে’ (বাংলার সকল সম্পদ হরণ করে নিয়ে নিশ্মিত রাজধানী ইসলামাবাদকে তাই বলা উচিত ) বিংশ শতাব্দীর উপনিবেশবাদী বিদেশী শোষক পাঞ্জাবী বেনিয়াদের প্রতিনিধি জল্লাদ ইয়াহিয়া কাইয়ুম ও নছরুল্লা৷ প্রমুখদের সাথে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভে আলোচনা বৈঠকে ব্যস্ত বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল ।বাংলার ইতিহাসের পরবর্তী পৃষ্ঠাও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।সে পাতায় লিখা আছে পলাশী যুদ্ধের পর ক্লাইভ বাংলার স্বাধীনতার সূর্র অস্তমিত হওয়ায় মর্মাহত ও স্বাধীনতাকামী তখনকার অভি’জাত শ্রেণীকে ধ্বংস করে বৃটিশ শাষনকে অভিনন্ধনকারী ও স্বার্থ লুন্ঠনকারী নিম্ন বংশোদ্ভুত চাটুকার শ্রেণীর লোকদের দিয়ে নতুন আভিজাত্যের পত্তন করেন । বৃটিশ ও চাটুকারদের কারসাজীতে তদানিন্তন অভিজাতরা কেবল আর্থিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়েই বঞ্চিত হলো না, তারা তাদের অনেক উপাধিও হারালো।বাংলার ইতিহাসের এই পাতাটি পড়েছিলাম আরেকবার বিগত নির্বাচনের প্রাক্কালে । নুরুল আমীন তার জন্মস্থান শাহবাজপুরে (কুমিল্লা জিলার সরাইল থানার অন্তর্গত) এসেছিলেন ।তিনি চলে যাওয়ার পর এক সন্ধ্যায় রাস্তার উপর একটা বকধার্মিক বদমায়েস (নুরুল আমীনের পাড়া প্রতিবেশী অথবা আত্মীয় হবে ) নুরুল আমীন ও শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে শেখ বংশের উপর কঠাক্ষ করে বুঝাতে চাচ্ছিলেন যে শেখ মুজিবর রহমান অনভিজাত ঘরের সন্তান ও নুরুল আমীন অভিজাত শ্রেনীর সন্তান। ইতিহাস পড়ে পড়ে মন অনুসন্ধিৎসু হয়েছে।সে লোক থেকেই বংশ তালিকা নিয়ে আমি আবিষ্কার করলাম যে নুরুল আমীনও, পলাশী যুদ্ধের সময়কার বাংলার স্বার্থবিরোধী,দালালদের বংশোদ্ভুত সেই চাটুকারদের দ্বারা গঠি্র নতুন অভিজাত শ্রেণীর একজন।তার রক্তে দালালীর রক্ত মিশে আছে । আমার মনে হয় দালালদের ইতিহাস আবিষ্কারেরত হলে এমন সুন্দর তথ্য পাওয়া যাবে যে আজ যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে ধলাকে স্বাধীন ও শোষণমুক্ত করার সংগ্রামের বিরোধীতা করছে অথবা সংগ্রামে নিলিপ্ত রয়েছে, তাদের অধিকাংশই ওই কমজাতদের সম্ভান। বৃটিশের বদৌলতে অভিজাত হয়েছিলো তারা । আর এতথ্য ইতিমধ্যে কিছুটা আবিষ্কৃত হয়েও গেছে ও আরও পরিস্ফুটভাবে আবিষ্কৃত হবে যে শেখ মুজিবর রহমান ও তার অনুগামী অধিকাংশদের রক্তেই পলাশীযুদ্ধের সময়কার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রক্ত প্রবাহিত আর তারা পলাশীবুদ্ধের সময়কারন সংগ্রামী শ্রেণীর অন্তর্গত ।ইতিহাসটা এমনভাবে পরিস্ফূট হওয়ায় মনে আরেকটি আশাও জাগে যে দেশ যখন স্বাধীন হয়েছে, বাংলার ইতিহাস আবার নতুন করে লিখতে হবে।বিংশ শতানব্বীর বাংলার ইতিহাস অন্তভাবেই লিখিত হবে। বিংশ শতাব্দীর মীর জাফর ছাড়া ও তার মত
কমজাতদের জেনে রাখা উচিত যে ইহা অষ্টাদশ শতাব্দী না, উহা ১৭৫৭ সাল না, ইহা ১৯৭১ সাল।অষ্টাদশ শতাব্দীর পলাশীর আম্রকাননে মীরজাফর আলি খাঁর দেশদ্রোহীতায় স্বাধীন নবাব পরাজিত হয়েছিল, কিন্ত বিংশ শতাব্দীর বেইনসাফাবাদে নুরুল আমিনের দেশোদ্রোহীতা সত্ত্বেও আজ কারান্তরালে থেকেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জয়ী হয়েছেন । অষ্টাদশ শতাব্দীর, পলাশীর যুদ্ধের পর পরাজিত, ভাগ্য বিড়ম্বিত নবাবকে মীরজাফর আলীখানের পুত্র মীরনের আদেশে আততায়ী মোহাম্মদ বেগ হত্যা করেছিল । কিন্তু বিংশ শতাব্দীর বাংলার মিরজাফরদেরকেই হত্যা করে চলেছে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। গেছে মোনেম খাঁ, সুলতানউদ্দিন, ফকাতনর ও আরো অনেকে।যাবে আরো।হুশিয়ার মীরজাফর নুরুল আমীন।
ইতিহাসের ডাক এসেছে।নতুন দিনের নবীন সুর্য উদীয়মান।হাতছানি দিয়ে ডাকছে ।হুশিয়ার বিংশ শতাব্দির মীর জাফরেরা।সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন এবার বাস্তবায়িত হয়েছে।
বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়
ডঃ ইবনে গোলাম সামাদ
(উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)
যুদ্ধ একদিন শেষ হয় । ধ্বংস -স্তূপের মধ্য থেকে গড়ে তুলতেহয় নতুন,জীবন, নতুন সভ্যতা ।মানুষ যুদ্ধ চায় না। চায় শান্তি।তবু যুদ্ধ চলে আসছে মানব অস্তিত্বের আদিকাল থেকে ।আমরা যুদ্ধ চাইনি। তবু যুদ্ধ চেপে বসেছিল আমাদের উপর আট মাস বাইশ দিন পরে বাংলাদেশের সর্বত্র দখলদার বাহিনী
আত্মসমর্পণ করেছে। যুদ্ধ শেষ । এখন যা দরকার, তাহল বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে দেশগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করা ।বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ । এখানে প্রতি বর্গ মাইলে জনসংখ্যা ৯০০ জনেরউপরে । জনসংখ্যার চাপ বাঙলাদেশে খুব বেশী । আমাদের প্রধান সমস্যা এই বিরাট জনসংখ্যার সাচ্ছন্দ বিধান । বাংলাদেশের মোট আয়তন ৩৫.৩ মিলিয়ন একর । এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ হল
২২.৫ মিলিয়ন একর। এর মধ্যে একাধিকবার ফসল উৎপাদক জমির পরিমাণ হল ৩ মিলিয়ন
একর । মোট আবাদি জমির পরিমাণ একাধিকবার ফসল উৎপাদক জমির পরিমাণ যোগ করে মোট ফসলি জমির পরিমাণ দাড়ায় ৩৮৮ মিলিয়ন একর। একটাদেশের কৃষি উৎপাদন
বৃদ্ধি করা যায় দুভাবেঃ
(১) আবাদযোগ্য অনাবাদী জমি আবাদ করে; এবং
(২) যে জমিতে বর্তমানে ফসল উৎপাদন করা হয়,তাতে ফসল উতপাদনের পরিমাণ বাড়ান।
বাংলাদেশে এখন আবাদ করা হয় না,কিন্তু কলের লাঙ্গলের সাহায্যে কর্ষন করে ফসল ফলানোর উপযোগী করে তোলা যায়,এমন জমির পরিমান হল ১ মিলিয়ন একরের কিছু বেশী।এই জমিকে চাষ করে চাষের মোট জমির আয়তন বৃদ্ধি করা চলে।তবে এর দ্বারা ফসল উৎপাদনের পরিমান অন্যন্য দেশের মত বৃদ্বি করা যাবে না।অন্যান্য উন্নয়ন গামী দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির খোজ নিলে দেখা যায়,গত কয়েক বছরে তাদের ফসল বৃদ্ধির মূল কারন অনাবাদি জমিকে আবাদযোগ্য করে ফসল উতপাদন।যেহেতু বাংলাদেশে কর্ষ্ণ উপযোগী পতিত জমির পরিমান বেশি নয় তাই বাংলাদেশে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান উপায় হিসাবে গ্রহন করতে হবে ,বর্তমানে আবাদী জমিতে উন্নত কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগ ফলে বর্তমান আবাদী জমিতেই অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।বাংলাদেশে খাদ্য শস্যের ফসল উৎপাদনের মাত্রা খুবই কম। যেখানে বাংলাদেশে ধানের গড় পড়ত ফসল একর প্রতি ৯০০-১০০০ পাউন্ডের মত।সেখানে জাপানে একর প্রতি ফসলের মাত্রা ২০০০ পাউন্ড উপর । আমাদের দেশে ধানের ফসল মাত্রা কমের একটি কারণ জমিতে উপযুক্ত সার প্রয়োগের অভাব । বাংলাদেশের জমিতে একর প্রতি ৪০ পাউন্ড নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে যে, এর ফলে আউষ ধানের উৎপাদন শতকরা ৩৭ ভাগ আমন ধানের উৎতপাদন শতকরা ৪০ ভাগ ও বোরো ধানের উতপাদন শতকরা ৪৬ ভাগ বাড়ানো সম্ভব ।আমাদের দেশে মাটির নীচের যে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান এ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে তার পরিমাণ হল ৯.৩৪ মিলিয়ন, মিলিয়ন কিউবিক ফুট ।এই গ্যাসের সঙ্গে বাতাসের নাইট্রোজেন যুক্ত করে, নাইট্রোজেন ঘটিত সার আমাদের প্রয়োজন অনুসারে যথেষ্ট উৎপন্ন করা সম্ভব ।বাংলাদেশের আবাদী জমির কম করে শতকরা ৬০ ভাগ শীতকালে পতিত থাকে । কারন শীতকালে আমাদের দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাপ খুব কম । উপযুক্ত জল সেচের ব্যাবস্থ্যা করে,শীতকালে রবিশষ্যের চাষ বাড়িয়ে,আমাদের দেশের খাদ্য সমস্যা বহুল ভাবে সমাধান করা সম্ভব।পাকিস্তানী আমলের সরকারী হিসাব থেকে দেখা যায়,বাঙলাদেশে ১.৫ মিলিয়ন একর জমিতে জল সেচের ব্যবস্থ’ আছে । এই জমির পরিমাণ হল মোট আবাদী জমির শতকরা ৫ ভাগ মাত্র । তাই কেবল সেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে বাংলাদেশের খাদ্যের ঘাটতি পুরণ করা চলে । বাংলাদেশের এক বিরাট সমস্যা হল বন্যা । বন্যার পানি প্রতি বছর যথেষ্ট পলিমাটি বহন করে এনে বাঙলার মাটিকে উর্বর করে ৷কিন্তু বন্যা আবার বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ফসলের ক্ষতির কারণ। মাঝারি রকমের বন্যার ফলে, বাঙলাদেশে প্রায় ৯ মিলিয়ন একর জমি জলমগ্ন হয়। ১৯৫৭ সাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যে সব অনুসন্ধান হয়েছে, তা থেকে দেখা যায়, ভারতের সহযোগীতা ছাড়া বাঙলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রনের কোন স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এতদিন পাকিস্তানী রাজনীতির জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতিবেশী রাস্ট্র ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা সম্ভব হয়নি । কিন্তু বর্তমানে, এই অসুবিধা আর থাকছে না । বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জন-বহুলদেশ । কিন্ত বাঙলাদেশের যুক্ত জল-সেচের ব্যবস্থা করে, মাটি থেকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন মোটেই অসম্ভব নয়।
শাফি ট্যাঙ্ক
গত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ট্যাঙ্ক প্রথম ব্যবহার হয়।প্রথম ট্যাংক তৈরি হয় বিলাতে ও তা ব্যাবহৃত হয় ফ্রান্সের রণক্ষেত্রে,কার্মান বাহিনীর বিপক্ষে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ট্যাঙ্ক স্থল যুদ্ধে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা অভিনয় করে। ট্যাঙ্ক আধুনিক যুদ্ধে বিশেষ সহায়।
পাক বাহিনীর বহু শাফি ট্যাঙ্ক খোয়া গিয়েছে বর্তমান যুদ্ধে।শাফী ট্যাঙ্ক আমেরিকায় তৈরী।এই ট্যাঙ্ক আমেরিকা প্রথম ব্যবহার করে কোরিয়ার যুদ্ধে।শাফি ট্যাঙ্ক মাঝারি ধরনের ট্যাঙ্ক।শাফি ট্যাঙ্ক এর ওজন হচ্ছে আঠার টন।এতে থাকে ৭৫ মিলিমিটার কামান।করাচী থেকে জাহাজে করে সিংহ ল ঘুরে ৩ হাজার মেইল দূর থেকে জাহাজে করে বাংলাদেশে ট্যাঙ্ক আনা পাক ফৌজের পক্ষে সহজ নয়। ট্যাঙ্ক ঘায়েল হওয়া তাই তার সামরিক শক্তির পক্ষে মারাত্মক ক্ষতি।
জাপানি পত্রিকার অভিমত
ইয়াহিয়া মুক্তিবাহিনীকে ভারতীয় সৈন্য বলে প্রচার করেছিল
জাপানের প্রতিটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ঘোষনা কোঁড়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত বন্ধ করার জন্য প্রচেষ্টারত শক্তিগুলিকে বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্ভবের প্রধান কারনগুলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করার উপদেশ দিয়েছেন।
জাপানের প্রভাবশালি জাতীয় দৈনিক ইউমিয়ুরি সিমবুন এক নিবন্ধনে বলেছেন যে,বিগত কয়েক মাসে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী এমন দুর্জয় এবং বিরাট আকার নিয়েছে যে প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া ২২ এবং ২৩ শে নভেম্বরের আক্রমন দেখে তাকে ভারতীত বাহিনীর আক্রমণ বলে ভুল করেছে।আড়াই কোটি জাপানী নাগরিক এই পত্রিকাটি পড়ে থাকেন।এইপ্ত্রিকা পাকিস্তানী প্রেসিডেণ্টকে নির্যাতনের জন্যে বাংলাদেশের কন্ঠ স্তব্ধ করার ভ্রান্ত নীতি স্বীকার করে নেয়ার জন্যে আহবান জানানো হয়।অপর একটি জাতীয় দৈনিক মইনিচি সিমবুন বলেন যে ,মার্চ মাসে বাঙ্গালীদের আশা আকাঙ্খাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে যাওয়ার পরই বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত হয়েছে এবং দুর্জয় মুক্তিবাহিনীর জন্ম হয়েছে।সংবাদদাতা লিখেছেন,’’আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত অপর একটি গ্রাম কজাই এবং অদূরবর্তী তৃতীয় আর একটী গ্রাম পরিদর্শন করি;গ্রামবাসীরা বলেন যে,আরো এগিয়ে গেলে আরও এমনি ধ্বংস প্রাপ্ত গ্রাম দেখতে পারেন’’।কিন্তু আরো গ্রাম দেখার মত সময় আমাদের হাতে ছিল না।
মইনিচি বলেছেন,’’পূর্ব বাংলার বর্তমান অবস্থা ভিয়েতনামের প্রাথমিক অবস্থার মত বলে আমরা জানতে পেরেছি।‘’ আসাহী সিমবুন এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলেছেন যে,বৃহৎ শক্তিবর্গের বর্তমান সংকটের মুল কারণের প্রতি চোখ বন্ধ করে রাখার কোন যুক্তি নেই’’।
ভারতীয় সৈন্যরা ২২ এবং ২৩ শে নভেম্বর’’পূর্ব পাকিস্তান’’ আক্রমণ করেছে বলে পাকিস্তানের দাবীকে জাপানি সংবাদপত্র গুলি হাস্যস্পদ বলে বর্ণনা করেছেন।
ইউমিউরি সিমবুন লিখেছেন,’’হাস্যস্পদ পাকিস্তানী অভিযোগ থেকে এই প্রমাণিত হয় যে ,বাঙ্গালী জাতির প্রতিরোধ সংগ্রাম দুর্জয় ও দুর্বার হয়ে উঠেছে।ইয়াহিয়া তাকেই ভারতীয় আক্রমন বলেভুল করেছে।এই পর্যায়ে আমরা আজ এটুকু বলতে পারি যে,বাংগালীদের রুখতে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী ব্যার্থ হয়েছে।পাকিস্তানী নেতাদের তা স্বীকার করে নেয়ার সময় এসেছে।কিন্তু তারা যদি এ ভুল স্বীকার না কোঁড়ে এবং বাংলাদেশ সৈন্যবাহিনীর আক্রমণকে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর কাজ বলে গলা বাজি করে তার সৈন্যবাহিনী সীমান্তে সমাবেশ করে তা হলে স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে ভারতকেও তার সৈন্যবাহিনী সীমান্তে রাখতে হবে।‘’
পত্রিকাটি সর্বশেষে লিখেছেন ।‘’বাংলাদেশের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় না এসে ইয়াহিয়ার কোন উপায় নেই।এই সমাধানের জন্য আমেরিকা,চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের চেষ্টা চালানো উচিত।‘’
হসিমবুনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে,’’বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ যে রায় দিয়েছে তার ভিত্তিতে সমাধানের জন্য এগুতে হবে।‘’
আশাহী সিমবুন সম্পাদকীয়তে লিখেছেন যে, ‘’ভারত পাকিস্তান সামরিক সংঘাতের সমাধানের পথ বের করতে হলে সমস্যা সৃষ্টির মূল কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে হবে।‘’
জাপানী দৈনিক অভিযোগ করেন যে ,বৃহৎ শক্তিগুলি শরণার্থীদের সন্মানের সাথে তাদের মাতৃভুমিতে ফিরিয়ে নেওয়া এবং বাংলাদেশ সংগ্রামের প্রতি চোখ বন্ধ করে রেখেছেন।কারণ হিসেবে বলেছেন,এসব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।কিন্তু আমরা মনে করি এ দুটি কারণের প্রতি যথযথ দৃষ্টি না দিয়ে সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব নয়।
প্ত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে মানবিক অধিকারের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা কারো ঘরোয়া ব্যাপারে হস্তক্ষেপের সমস্যার চাইতে অনেক উর্ধ্বে।যেসব দেশ বাংলাদেশ সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাবেন তাদের উচিত হবে সংকটের গভীরে গিয়ে সে আলোকে সমাধানের চেষ্টা করা।
সম্পাদকীয়তে আরো বল হয়েছে,পাকিস্তান দুটি কারণে,’’ভারতীয় সৈন্যদের তার দেশ আক্রমনণের’’ ধুয়া তুলেছে।এ জাতীয় অভিযোগ দাড় করিয়ে পাকিস্তান সরকার তার সৈন্য বাহিনীকে দিয়ে বাংগালী নিধন যজ্ঞের ঘটনা এবং অন্য দিকে নৃশংস সামরিক অভিযানের ফলে এক কোটি শরনার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে সে সত্য বিশ্ববাসীর কাছে চাপা রাখতে চাইছে।
Unicoded by- Mehedi Hasan Piyal
আমরা দেশকে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়ে তুলব _কামরুজ্জামান (কলিকাতা প্রতিনিধি )গত ১৯শে ডিসেম্বর আমাদের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, জনাব এ,এইচ,এম, কামরুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন পৃথিবীর মুক্তি আন্দোলনের অঙ্গ। আমেরিকা ও চীনের ষড়যন্ত্র সত্বেও আমাদেরসংগ্রাম জয়যুক্ত হয়েছে । এ জয়কে সুনিশ্চিত করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও সোভিয়েট ইউনিয়নের সমর্থন।জনাব কামরুজ্জামান ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত জনসভায় আরো বলেন,“আমরা দেশকে পু’জিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক ভিত্তিতে গড়ে তুলব ।
প্রাভদা বলেন
সোভিয়েট কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপাত্র প্রাভদা লিখেছেন ‘’বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নটি বেমালুম উপেক্ষা করে,পক ভারত উপমহাদেশের মৌল সমস্যা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র মাথা না ঘামিয়ে পশ্চিমী শক্তিবর্গ ভারত-পাক সংঘর্ষের ব্যাপারে বড় বেশী উৎসাহ দেখাচ্ছে’’
প্রাভদা আরো বলেছেন পাকিস্তানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেও সংরক্ষিত সেনাবাহিনীকে তলব করে গোটা পরিস্থিতিটা ই জটিলতর করা হয়েছে।ভারত- পাক উপমহাদেশ থেকে যে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে ,’প্রাভদার মতে তা খুবই উদ্বেগের কারণ।অপর এক সং খ্যায় প্রাভদা লিখেছেন,সোভিয়েট ইউনিয়ন বরাবর বলেছে যে,বাংলাদেশ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিরোধ এবং এর দুই পক্ষ হল পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তান।আমেরিকা ,বৃটেন ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের কিছু প্রতিক্রিয়াশীল এই জটিল পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চাইছে।তারাই বিষয়টিকে নিরাপত্তা পরিষদে তোলার অপচেষ্টা করেছিল।
গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের এই সংগ্রাম চলবেই
আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘোষণা
(বিলম্বে প্রাপ্ত)
মুজিবনগর, ৫ই ডিসেম্বর
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদর কার্যালয়ে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’ টায় মাতৃভূমির সার্বিক
মুক্তির জন্য আরও কঠোরতর সংগ্রামের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরু ও গণতন্ত্রের অতন্ত্র প্রহরী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৮ম মৃত্যু- বার্ষিকী পালন করা হয়। এই উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভানেত্রীর আসন গ্রহণ করেন
বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ । সভায় আলোচনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক জনাব ওরায়দুর রহমান বলেন যে, বাংলাদেশের মানুষের আজকের স্বাধীনতা আন্দোলনের
সূত্রপাত হয়েছিল মূলতঃ ১৯৬২ সালে স্বৈরাচার আইয়ূব শাহী কর্তৃক শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতারের দিন থেকে । সেদিন হোসেনশহীদ সোহরাওয়ার্দীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে দীর্ঘ চার বছরের রাজ-নৈতিক বন্ধ্যাত্বের হাত থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন ছাত্র-জনতা যে দূর্বার আন্দোলন শুরু করেছিলেন তার শেষ পরিণতিই হচ্ছে আজকের এই স্বাধীনতা সংগ্রাম –আজকের এই মুক্তির সংগ্রাম । তিনি জনাব সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে উল্লেখ করে বলেন যে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার সোহরাওয়ার্দীর হত্যার তদন্ত করবে এবং মৃত্যুর মুল কারণ খুঁজে বের করবেই । যে হানাদার পাক বাহিনীর অতাচারে বাংলাদেশের মানুষ এবার ঢাকায় সোহরাওয়ার্দীর কবর জেয়ারত করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাদেরকে সমূলে উৎখাত করে অচিরেই আবার বাংলাদেশের জনগণ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দীর মাজারে আগেকার মতই তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে ।সভানেত্রীর ভাষণে বেগম বদরুন্নেসা আহমদ বলেন যে, বাংল।দেশের জনসাধারণ তাদের স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র আর
সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দীর আদর্শকে বাস্তবায়িত করবে আর এই বাস্তবায়িত আদর্শের মধ্যেই হোসে শহীদ সোহরাওয়ার্দী চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন । ২৪ বছর আগে দেখা পৃথক বাংলাদেশের স্বপ্ন “স্বাধীন বাংলাদেশ ‘’সফল হবেই ।
বাঙলাদেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে একটি গণহত্যার কাহীনি
পাক সেনাবাহিনী ঢাকা সন্নিহিত কতিপয় গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এবং ৩০০ গ্রামবাসী-কে হত্যা করেছে।মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডোদের তৎপরতা প্রতিহত করার জন্য শহরের চারিদিকে গভীর প্রতিরক্ষা ঘাটি স্থাপন করার জন্যই শহর সন্নিহিত গ্রামগুলো নিশ্চিহ্ন করা হযেছে ।মৃত্যুর থাবা থেকে বেঁচে যাওয়া গ্রামবাসীরা সেই বীভৎস আক্রমনের বর্ণ্না দিয়েছেন । গত সোমবার ২১শে নভেম্বর শহরের উত্তর দিক থেকে এসে পাকসেনারা নিরীহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর ধারাবাহিক আক্রমণ পরিচালনা করে। একতরফা সংঘর্ষে ৩০০ গ্রামবাসী নিহত হন। এবি সি সংবাদ সংস্থার হংকংস্থ ব্যুরো প্রধান মিঃ হাওয়ার্ড টুকারের মতে গত শনিবারে(২৭শে নভেম্বর ) ঢাকার পাশের একটি গ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা ৭৫জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে” নিহতদের মধ্যে পুরুষ ছাড়াওমহিলা ও শিশু রয়েছে । গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে । মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল সন্দেহ করেই গ্রামটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। |মিঃ টুকার বিধ্বস্ত এলাকার ফটো তুলে এনেছেন । তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম সরকারী
বাহিনীর যাওয়ার পর ৭৫টি মৃতদেহ পড়ে আছে । মিঃ টুকার বলেন, পুর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র যা ঘটছে এটা তার খণ্ডাংশ মাত্র ।এটা আমরা আগেও শুনেছি,লোকজনও তাই বলতেন, এবার আমরা নিজেদের চোখেই
দেখলাম মিঃ টুকার. বলেন যে পশ্চিমা সেনাবাহিনী যে-সব বাঙ্গালী গেরিলাদের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদেরকে নিশ্চিহ্ন, করে ফেলতে চায়। বিধ্বস্ত গ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ-ই জানে না এ গ্রামটি সত্যি সত্যি গেরিলাদের আশ্রয় দিয়েছিল কী না। কিন্তু সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই বাঙ্গালী নিশ্চিহ্ন করার কাজটি সম্পন্ন করছেন । জনৈক এ পি (আমেরিকা )-র ফটোগ্রাফার সম্প্রতি ঢাকা থেকে ৮ মাইল দূরের একটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন । তিনি বলেন প্রায় অধিকাংশ খড়ের ঘরেই আগুন লাগানো হয়েছে । পার্শ্ববর্তী গ্রামে তাঁকে যেতে দেয়নি ।উক্ত ফটোগ্রাফার অভিযোগ করেন যে, তিনি পাশ্ববর্তী গ্রামগুলোতে যেতে চাইলে সেনাবাহিনী বাধা দেয় । তিনি বলেন,সেই “গ্রামগুলিকে মাটির সঙ্গে
মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ।‘’
একটি মহোত্তম ব্যাবস্থা
(জয় বাংলা প্রতিনিধি)
বাংলাদেশ সরকার দখলদার হিংস্র হায়েনাদের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আমাদের রক্ত স্নাত দেশের লাখো লাখ উৎপীড়িত মা-বোনদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক অনুকরণীয় মানবিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ, এইচ, এম, কামরুজ্জামান বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ মুজিবনগরে এ ঘোষনা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, আমাদের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বহু মা বোন হানাদার দস্যুদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন,অপহৃত হয়েছেন।তাদের ‘’যুদ্ধ বীরের সম্মান’’ দেয়া হবে।তিনি বলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের ঝটিকা বিক্ষুব্ধ দিনগুলোতে আমাদের নারী সমাজ আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বর্বর হানা-দার বাহিনীর সাথে সংগ্রাম বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কম গৌরবোজ্জল নয় । জনাব কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের সম্মানের সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং সরকার তাদের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
পাখি
অনু ইসলাম
মায়ের কোলে পাঁচ বছরের শিশুটা গপ্পো শুনছিলো । এই অল্প বয়সেই ওর গপ্পো
শুনতে ভীষণ মজা লাগে । সন্ধ্যার পর ওর মা যখন ঘুমের কথা বলে তখনই সুড়সুড় করে বিছানায় উঠে পরে আর আস্বারের সুরে বলে একটা গল্পো বলো না মা? প্রতিদিন রাজা-রাণী, যাদুকর,আশ্চর্য – প্রদীপ ,দৈত্যদানব আর কত রকম রকম অদ্ভুত গল্পো বলতে বলতে এক একদিন শিশুটাকে বুকে জড়িয়ে অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে ওর মা। ইউনিয়ন বোর্ডের ২ হাতের কাচা সড়কের পাশেই ওদের বাড়ী। টিনের ঘরসহ একটি বাড়ী। চারপাশে কলাগাছ আম জাম জোপ জঙ্গলের মধ্যে শীত গ্রীষ্মে দিনরাত্রিতে অভাব অনটনের মধ্যেও ওরা বেঁচে আছে।চারপাশে আরো কয়েকটি বাড়ী এবং ফসলের ক্ষেত। বাবা হাইস্কুলের মাস্টার ।স্কুলের মাইনেতে সংসার চলে না। তার ওপর কোনদিনই এক সাথে পুরো মাইনে পায় না।সরকারী ভাতার তো কোন
প্রশ্নই ওঠে না। তাই প্রাইভেট পড়াতেই হয় পাঁচ বছরের ছেলে পুতুল হাটাহাটি করে সারাদিন সারা আঙ্গিনা ঘুরে বেড়ায় আর খোলা আকাশের দিকে দুচোখ দিয়ে সেই নাম না জানা পাখির
সন্ধানে থাকে । একদিন পুতুলের আ শুয়ে শুয়ে ওই পাখির গপ্পো বলছিল । এটা অদ্ভুত ধরনের পাখী।মাটি বা গাছ – গাছালীতে কোনদিনই নামে না। নীচে বাসা বীধে না।আকাশেই ঘর । আকাশে আকাশে তাঁর বিহার । বহু ওপর থেকে ডিম পারে আর তা নীচে পড়ার আগেই তা থেকে ফুটে বাচ্চা বেড়িয়ে আকাশে উড়ে যায়।কেউ কন্দিন এই পাখি দেখেছে কিনা তা পুতুলের মা বলতে পারে না। অথচ পুতুলের ভীষণ সখ আহা এ পাখিটা যদি দেখতে পারতো ।আর সে আশা নিয়েই প্রতিক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থাকে । পুতুলের আশা পুর্ণ করেই বুঝি বা একদিন একজোড়া পাখি ওদের গ্রামটার ওপর ভীষণ চীৎকার করে ঘুরপাক খেলো । ইচ্ছার ভয়ঙ্কর টানে (তাই) পুতুল
ভয় পেলো না। খালি দুরু দুরু বুকে আর উত্তেজনায় কাঁপছিল ! এত চীৎকার করছে কেন ? ওদের কি ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে? গভীর বেদনায় পুতুল তাকিয়েই আছে।এই বুঝি আকাশ থেকে পাখি বেড়িয়ে আসবে । পুতুলের মা পুতুল পৃতুল করে কাছে ডাকছে । পুতুলের সেদিকে কোন ভ্রক্ষেপই নেই । এক গাদা ঘরের আড়ালে চীৎ হয়ে সেই শিহরণ জাগা ডিম থেকে বাচ্চা বেরুনোর দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় পুতুল । কিছুক্ষণ আকাশে ঘুরপাক খেতে খেতে একটা পাখি খুব নীচে নেমে কয়েকটি ডিমের মত বস্তু পুতুলদের বাড়ীর ওপর শব্দ করে ফেললো ৷ এর পর পুতুলের কোন কথা মনে নেই । যখন জ্ঞান হলো তখন পুতুল জানলো তার বাবা কেউ আর বেঁচে নেই। তারপর দিনের পর দিন গড়িয়ে যায় । পাখি দুটো আসে, আকাশে আকাশে আপন ইচ্ছায় ঘুরে ফিরে যায় । প্রতিবার পাখি দুটো দেখলেই মায়ের গপ্পোবলার কথা মনে পড়ে যায়।আর সঙ্গে চোখে মুখে একটা জ্বালা, যন্ত্রনা এবং কি যেন একটা দুঢ়তা ফুটে ওঠে । এমনি করে আট মাস কেটে
গেল। আবার আকাশে দুটিপাখী ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর ঠিক তক্ষুণি ভীষণ বেগে এক ঝাক পাখী চুটে এলো! । পুতুল এবার আশ্চর্য হলো! এবার যেন ভীষণ আশ্চর্য হলো। তাকিয়ে আছে পুতুল । পাখী দুটো এক ঝাক পাখির কবলে পড়ে সে কি চীৎকার।ভীষণ লড়াই লেগে গেছে । একবার ওপর ওঠছে আবার নীচে নামছে । পাখি দুটো কিছুতেই পালাতে পারছে না। উহ! পুতুলের সে কি আনন্দ! হাতে তালি দিচ্ছে আর লাফাচ্ছে । তারপর কয়েকটি মুহূর্ত গড়িয়ে গেলে ।পুতুলের পাখি দুটোই আকাশ থেকে চীৎকার করতে করতে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।পুতুল হঠাত কান্না থামিয়ে দিল এবং মায়ের কবরের ওপর কাদতে কাদতে বললে, “মা মনি এই দেখ পাখি দুটো আজ মারা পড়েছে কারো কোন শব্দ নেই । দু’চোখের অবোধ অশ্রু শুধু প্রশ্নে প্রশ্নে সব কিছুকে তলিয়ে দিল।
Unicoded by- Mehedi Hasan Piyal
বাংলাদেশ যুগ যুগ জিও
বাসবজিৎ বন্দোপাধ্যায়
সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ।বসন্তের তপ্ত দুপুর।ঢাকার আশপাশের জনতা গভীর উৎসাহে চলেছে রেসকোর্সের দিকে।তখন কলকাতায় বসে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে বাংলা খবর শেষ হবার পর ঘোষকের কন্ঠে শুনলাম একটু পরেই রেসকোর্স থেকে রিলে করে শোনান হবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।অধীর আগ্রহে বসে রইলাম অনেকক্ষণ লিন্তু শুনতে পেলাম না তার সেই বজ্র কন্ঠের ঘোষনা,’’এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।‘’তবে অসময়ে রেডিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে শুনতে পেলাম অনেকগুলি অপূর্ব দেশাত্মবোধক গান যেগুলি শুনে তখনি মনে হয়েছিল সেদিন সুদূর নয় যেদিন পৃথীবির মানচিত্রকে নতুন করে ছাপাতে হবে-পূর্ব পাকিস্তানের জায়গায় লিখতে হবে বাংলাদেশ।শেষ পর্যন্ত হলো তাই।নির্বাচনে সাফল্যের পর কোন উপায় না দেখে অভূতপূর্ব অহিংস অসহযােগ আন্দোলন, ২৫শে মার্চ থেকে ইয়াহিয়ার চরম বর্বরতা শুরু, ভারতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন, মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, মুক্তি ফৌজদের সশস্ত্র বিপ্লবের দামামা, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জরুরী অবস্থা ঘোষণা ও আক্রমণ, ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তি বাহিনীর যৌথ জবাবে পাকিস্তানীদের শেষ অবস্থা ও সবশেষে স্মরণীয় ৬ইডিসেম্বরে ভারত সরকার দ্বারা বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি লাভ। এই হোল স্বীকৃতি লাভের সময় থেকে প্রায় এক বছর আগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। কিন্তু চরম লক্ষ্যে পেীছবার জন্যে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫২ র রক্তজরা একুশে। ফেব্রুয়ারীতে । তারপর থেকে সারা বিশ্ব জেনেছিল বাংলা হোল এক স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র।ভাষা আর ধর্মই সব নয়।। দ্বিজাতিতন্ত্রের তল্পীবাহকদের প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হয়েছিল ১৯৫৪-র ঐতিহাসিক নির্বাচনে । কিন্তু বুলেটের জোরে এতদিন টি কে থাকার পর সেই বুলেটের দ্বারাই তাদের স্থান হয়ে গেল কবরের নিচে ইতিহাসের পাতায় এক ঘৃণ্য স্থানে।আজ তাই হোল দুই বাংলার প্রগতিশীল জনগণের আনন্দ উৎসবের দিন ।নীতি যার যাই হোক না কেন আমাদের মুখের ভাষা,সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ইতিহাস এক এবং অবিচ্ছেদ্য ।সে নিবিড় সম্পর্কের মধ্যে এক বিরাট অদৃশ্য পাচিল তুলে দিয়েছিল পাক সরকার, ১৯৬৫ সাল থেকে । ফলে দুদেশের বাঙালীর মিলতে পারতেন না দুর্গাপূজা, ঈদ, নববর্ষ ‘বা পচিশে বৈশাখে, অথবা তাদের অন্য কোন প্রয়োজনে । এবার আর তা হবেনা তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধু তাদের নয় পশ্চিম বাংলার কাছেও নিঃসন্দেহে এক বিরাট আনন্দের সংবাদ । এতদিন পশ্চিম বাংলা তথা ভারত তার সীমান্তের দরজা খুলে দিয়েছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ অত্যাচারিত শরণার্থীদের জন্যে । পশ্চিম বাংল। তথা ভারতের জনগণ সম্ভাব্য সব রকমের সাধ্যই করে এসেছে । তাদের বন্ধুদের জন্যে শুধুমাত্র তাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়া ও ধর্মনিরপেক্ষতার ‘আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এক গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সুখী সোনার বাংলা দেখার জন্যে । এ ছাড়াও দুই দেশের বন্ধুত্বের ফলে অন্যান্য অনেক ব্যাপারে উভয়ের সুযোগ সুবিধে তো আছেই।তাই পশ্চিম বাংলার জনগন এটা আশা করেন যে একদিন যে সমস্ত বাংগালিরা সব খুইয়ে দেশ ছেড়ে গিয়েছিল তারা যেন আবার সসম্মানে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাবে এবং নিরাপদে থেকে সকলের সংগে চেষ্টা করবে সোনার বাংলাকে ভরিয়ে দিতে গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ।সাইরনের আওয়াজে ঢুকবে বেরুবে কারখানাতে,দুচোখ দিয়ে দেখবে নিল আকাশের নীচের ওরা চীমনির কালো ধোয়া ।এছাড়া পশ্চিম বাংলার বুদ্ধিজীবি,পাঠক ও শিল্পিদের বহুদিনের একটি ইচ্ছা পূরন হল।এবার থেকে স্বাভাবিক ভাবে চলবে দুই বাংলার মধ্যে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভাব বিনিময়।যার ফলে দু ধর্মের জনগনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হবে এবং আশা করা যায় সারা বিশ্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের পর এটি সম্প্রিতীর আরো একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।এই প্রসংগ এককালে প্রাচির ঘেরা দুই বাংলার
মধ্যে সাহিত্য ও সংস্কৃতির যোগাযোগ ও উভয় ধর্মের মধ্যে সম্প্রিতীর সাড়া জাগানোর উদ্দেশ্যে নিবেদিত শ্রী পান্নালাল গুপ্তের “কম্পার” মৈত্রেয়ী দেবীর নব জাতক কলকাতার বাংলা ওপার বাংলা” ও.লন্ডনের দুই বাংলার প্রবাসী বাঙালীদের মিলিত উদ্যোগে প্রকাশিত দর্পণ পত্রিকার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।আজ তাদের আশা পূর্ণ হল।যাই হোক বাংলাদেশ আজ স্বীকৃতী পেয়ে গেছে।সংগে আছে আছে ভারতের জনগণ ও অন্যান্য বিশ্বের হিতাকাঙ্খী।তাই বাঙ্গলাদেশ্র জনগনের মনে আজ খুশির আবেগ।এটাই স্বাভাবিক।আর এই আবেগকে গঠনমূলক কাজের মধ্যে দিয়ে নিয়া যাওয়া যে একান্তই প্রয়োজন বলাই বাহুল্য । বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণকে শেষ করছি অভিনন্দন জানিয়ে । কামনা করি দুই বাংলার সম্পর্ক আরো নিবিড় হোক, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী দীর্ঘজীবি হোক, যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুভাষচন্দ্র, জীবনানন্দের ও হাজার হাজার শহীদের রক্তে ভেজা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
জয়হিন্দ। জয়বাংলা ।
Unicoded by- Mehedi Hasan Piyal