২ শ্রাবণ ১৩৭৮, সোমবার, ১৯ জুলাই ১৯৭১
-জেড, এ ভুট্টো পিন্ডিতে বলেন, এটা পাকিস্তানের শেষ সমস্যা। আমার হাতে ক্ষমতা দিন। এভাবে চলাটা আমি আর বেশী দিন সমর্থন করবো না। (দৈঃ পাঃ)
-ঢাকায় দিনরাতে বোমাবাজী চলছে। গেরিলা অপারেশনে মালিবাগ পাওয়ার হাউজ বিধ্বস্ত। শহরের উত্তর অঞ্চল অন্ধকারে নিমর্জিত। পানি সরবরাহ বন্ধ প্রায়। মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুন বীরত্বপূর্ণ অপারেশন করে রাত সাড়ে আটটায়। অপারেশন শেষে গেরিলাদল রামপুরা বিল সাতরে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যায়।
-ইয়াহিনা খান জনৈক বিদেশী সাংবাদিককে বলেনঃ যদি ভারত আমাদে উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে আমরা আর একা থাকবো না। উল্লেখ্য, ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টোর ঘোষণা অনুযায়ী ইঙ্গিত পাওয়া গেল না যে যদি যুদ্ধ বেঁধে যায় তা হলে অর্থ পরিমাণ চৈনিক সমর্থন প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের।
-বগুড়ার পাঁচবিবি জয়পুরহাট এলাকায় রাজাকার, বিহারী ও শান্তিকমিটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বহু লোককে ধরে নিয়ে থানায় জেলে আমনবিক অত্যাচার শুরু করে। সিগার মিলে বাংলোতে পাকবাহিনী নারীদের ওপর পৈচাশিক নির্যাতন চালায় বলে জানা যায়।
-কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা রাওয়ালপিণ্ডিতে বলেন, জাতীয় জীবনের সংকটকালে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি দেশদ্রোহিতামূলক। (সংবাদপত্র)
-পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি খান আবদুল কাইয়ুম খান বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে শুধুমাত্র পাকিস্তান মুসলিম লীগেই প্রথম থেকে ৬ দফার বিরোধিতা করে এসেছে। তিনি ৬ দফাকে একটি ‘টাইম বোম’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
-ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং রাজ্যসভায় বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে অস্ত্র ফলে কেবল বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে না সেই সাথে এই উপমহাদেশের শান্তি স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীণ হবে। ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ওপর তা প্রভাব ফেলেতে পারে।
–বিপ্লবী বাঙ্গালদেশ সরকারের অর্থ সচিব কে এ জামান (কাজী আছাদুজ্জামান) স্বাক্ষরিত ‘Provisional Financial Rules’ এদিন জারি করা হয়। (৩ খঃ পৃঃ৭২)
-১৯শে জুলাই “ফাইনান্সিয়াল টাইমস” এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়। “শীঘ্রই সামরিক আদালতে শেখ মুজিবর গোপন বিচার অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামাবাদের ব্রিটিষ সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খান এই তথ্য প্রকাশ করে। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হবে তাঁর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। তাঁর পক্ষ সমর্থন করার জন্য পাকিস্তানী করা হয়। মিঃ ম্যাক্সওয়েল আরও বলেন ইয়াহিয়া পরামর্শদাতাদের মধ্যে কেউ কেউ রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ শেখ মুজিবকে প্রাণদণ্ড দেওয়ার জন্য ইয়াহিয়া খানের উপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে তিনি বিভিন্ন সূত্রে জানাতে পেরেছেন। এই সাক্ষাৎকার কালে ইয়াহিয়া খান বাহাদুরী দেখাবার জন্যই বলে, ভারত যদি পূর্ব বঙ্গের ব্যাপারে বর্তমান তুলনায় অধিকতর বাড়াবাড়ি করে বিদ্রোহীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য একটি এলাকা দখল করে, তবে সে ভারতের বিরুদ্ধে “সার্বিক যুদ্ধ” ঘোষণা করবে। তাঁর এই সংকল্পের কথা বহির্বিশ্বের জানা উচিত। ইয়াহিয়া আরও দাবি করে, উপরোক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পাকিস্তান বন্ধুহীন থাকবে না। তাঁর এই উক্তি ব্যাখ্যা করতে সে অস্বীকার করে। এই প্রসংগে ভুট্টোর একটি উক্তি স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালে ভুট্টো দাবি করে, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে হলে পাকিস্তান চীনের সমর্থন সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারে।” (“ফাইনান্সিয়াল টাইমস” ১৯ শে জুলাই,১৯৭১)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী