You dont have javascript enabled! Please enable it!

ক্ষমতাচ্যুতির ভয়

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সম্মুখে এ বিপদ ছাড়াও রয়েছে তার নিজের ক্ষমতাচ্যুতির এবং যে রাজনৈতিক সামরিক চক্রের তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই চক্রের আভ্যন্তরীণ বিরােধ পকট হয়ে পড়ে ছত্রভঙ্গ ছ’বার আশঙ্কা। তিনি দেখছেন, এই বিপর্যয়ের হাত থেকে তাঁকে বাঁচতে হলে বাংলাদেশের সমস্যাটিকে পাকভারত সমস্যায় পরিণত করাই একমাত্র পথ। যুদ্ধে ভারতকে জড়িয়ে ফেলতে তাই তাঁর এত আগ্রহ। তিনি মনে মনে ভাবছেন, ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে যদি হারাতেও হয় তাে তার জন্য ভারতকে দায়ী করে পশ্চিম পাকিস্তানের ঐক্যকে বজায় রাখার সুযােগ থাকবে। অন্যথা, পাক-ভারত সংঘর্ষ নিরসনের আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ (যা অবশ্যম্ভাবী) ঘটলে বাংলাদেশ সমস্যাকে পাক-ভারত সমস্যার অন্তর্গত করা যাবে। চাই কি, বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত করে অর্ধেকটা পাকিস্তানের কর্তৃত্ত্বাধীন রাখার পথও খুলে যাবে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহা খা কয়েকদিন আগে খােলখুলি বলেছেন, পাক ভারত যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তান একা লড়বে। আমেরিকার সাহায্য সে পাচ্ছে ও পাবে। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক জোট বন্ধনে তুর্কী ইরান রয়েছে। তিনি চীনকেও দলে টানতে পারবেন বলে আশা করছেন। অর্থাৎ তিনি ভারত বিরােধী রণহুঙ্কার দেবার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানিদের মনােবলকে অক্ষুণ্য রাখার উদ্দেশ্যে উপযুক্ত মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ সৃষ্টির কাজেও হাত দিয়েছেন।
উল্লেখযােগ্য যে, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতি পশ্চিম পকিস্তানে বিজয় উৎসব হিসাবে পালিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের সরল লােকদের একটা অংশ এখনও এই বিশ্বাস করে যে, গত যুদ্ধ হিন্দুস্থানের পরাজয় ও পাকিস্তানের জয় ঘটেছে। অবিরত মিথ্যা প্রচারের দ্বারা অন্যদের বিভ্রান্ত করতে এবং এই সরলমনা লােকগুলির মধ্যে ভারত বিরােধী যুদ্ধোদ্মদনা জাগাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহা খান যে সকল হবেন। তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর প্রস্তুতি গর্ব প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহা খান যখন ইচ্ছা ভারতের উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। অবশ্য ভারতীয় জওয়ানদের উদ্যত এবং ধারালাে বেয়নেট তাকে অভ্যর্থনা করার জন্য তৈরীই থাকবে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২৭ জুলাই ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!