মানবতার প্রতিবাদ উচ্চারিত হলাে
প্রতীকবাদের কোনাে মূল্য থাকুক বা না থাকুক, বাংলাদেশে পাকিস্তানের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে অপারেশন ওমেগা’র প্রতিবাদ প্রতীক হিসাবে মূল্যবান। একদল নিরস্ত্র, শান্তিবাদী যুবকের পক্ষে শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ জানানােই সম্ভব ছিল এবং ইঙ্গ-মার্কিন এই দলটি এসেছিলেন ঐ উদ্দেশ্যেই। তাঁদের সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের মধ্যে বিতরণ করে তারা একটি জিনিস প্রমাণ করতে চেয়েছিলেনঃ বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনাে অধিকার পাকিস্তানের নেই, সুতরাং সেখানে ত্রাণকার্য চালাবার জন্যে পাকিস্তানের অনুমতি নেবার দরকার করে না। ঐ উদ্দেশ্য তারা ভালােভাবেই সফল করেছেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা যখন বেনাপােলের কাছে তাদের চারজনকে অন্য একটি দল অন্যত্র বাংলাদেশের মধ্যে ঢুকে তাদের ত্রাণসামগ্রী গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলি করে এসেছেন। এমন কিছু জিনিসপত্রও নয়—কিছু শাড়ি, কিছু ওষুধ, কিছু প্রােটিন বিস্কুট। কিন্তু বাংলাদেশে একটি আসন্ন দুর্ভিক্ষের সামনে দাঁড়িয়েও যেসব দেশ কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠান মানবতার সেবায় এগিয়ে যাবার জন্যে অনুমতির অপেক্ষায় চুপ করে বসে রয়েছে, এটা তাদের বিরুদ্ধে একটা তীব্র কষাঘাত। এই অপেক্ষা একটা নীতিহীন ক্লীবত্বেরই পরিচায়ক যা মানব ইতিহাসের এক চরম বিপর্যয়ের দিনে বাস্তবকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চায়। ওমেগা এই স্বার্থান্বেষী রাষ্ট্র আর রাজনীতির বিরুদ্ধে এক প্রবল প্রতিবাদ, যা বলতে চায় ইচ্ছে যদি আন্তরিক হয় তবে পীড়িতের সেবার পক্ষে কোনাে বাধাই টিকে থাকে না; যা হাতে-কলমে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে কোনাে বাধাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না।
আমরা জানি, এই প্রতিবাদ রাষ্ট্রনেতাদের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে এখনই কোনাে প্রতিফলন ঘটবে না। কেননা রাজনীতি যদি মানবিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতাে, তাহলে বাংলাদেশে এই অন্যায়, এত অবিচার আজও কায়েম থাকতে পারতাে না। কিন্তু আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় কথা হলাে, এক দল বিদেশী যুবকের এই শান্তিবাদী প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে মানবতাই তার অভিমত ব্যক্ত করেছে। এবং মানবতার রায় যদি নিঃসংশয় থাকে তাহলে রাজনীতির রায় শেষ পর্যন্ত পাল্টাতে বাধ্য।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১