প্রসঙ্গক্রমে
নিরপেক্ষ প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খা
জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরগুলি যে প্রধানত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নীতির মানদণ্ডে পরিচালিত হয় শরণার্থী বিভাগের কর্তাদের চলাফেরা তার উল্লেখযােগ্য নজীর। এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খা ইতিপূর্বে শরণার্থীদের দেখার নামে ভারতে এসে ভারত পাক সীমান্ত জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বসানাের প্রস্তাব করে গেছিলেন। বলা বাহুল্য এই প্রস্তাবটি মার্কিন সাম্রাজ্য আর ইয়াহিয়া এ প্রস্তাব দু হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছিল। ভারতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তিনি অবশ্য এ প্রস্তাব নিয়ে বিশেষ সুবিধে করতে পারেন নি।
সম্প্রতি তিনি আবার এসেছেন। এবারেও শরণার্থী সমস্যার একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার জন্যই তাকে নাকি কলকাতা হয়ে আবার পাকিস্তান যেতে হচ্ছে। কিন্তু পাকিস্তানে বা পাক দখলদার বাহিনী দখলীকৃত বাঙলাদেশে শরণার্থী কারা এ কথা সদরুদ্দিন সাহেব একবারও বলেন নি। ইয়াহিয়া তার বর্বর দস্যুবাহিনী দিয়ে যাদের ভিটে মাটি ছাড়া করেছে তার এ সকলেই সীমান্তে এপারে পালিয়ে এসেছে। সে রকম নব্বই লক্ষ শরণার্থী আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, পশ্চিমবাঙলা প্রভৃতি সীমান্ত রাজ্যগুলিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যত মাথায় নিয়ে দিনাতপাত করছে। কিন্তু ইয়াহিয়ার রাজত্বে শরণার্থী হয়ে আছে এ খবর ত কারুর জানা নেই। সেই শরণার্থী করে কারাই বা তাদের আশ্রয়চ্যুত করল, তাদের সংখ্যা কত এ খরবও ত কেউ জানে না। তবু জাতিসংঘের হাই কমিশনার বিভিন্ন রাষ্ট্র গােষ্ঠীর টাকা খরচ করে শরণার্থী সমস্যা বুঝতে পাকিস্তানে যাবেন কেন?
এও সেই তথাকথিত নিরপেক্ষতা বজায় রাখার মার্কিন-সাম্রাজ্যবাদী নীতির অঙ্গ। আসল সমস্যাটিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সব ব্যাপারে ভারত পাকিস্তানকে এক করে দেখা। ভারতের যখন পাকিস্তান থেকে শরণার্থী এসেছে তখন ভারত থেকেও পাকিস্তানে অবশ্যই শরণার্থী গেছে অতএব সাহায্য দিতে হলে ভারত যেমন পারে তেমনি পাকিস্তানকেও কিছু দিতে হবে। প্রিন্স সদরুদ্দিন যদি এই ধারণা থেকে শরণার্থী সমস্যার চিত্রের সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভের বাসনায় পাকিস্তান যাওয়ার স্থির করে থাকেন তবে অবিলম্বে তার প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
নিরপেক্ষ প্রিন্স সব বিষয়ে নিরপেক্ষ হতে পারেন কিন্তু রাজনীতির ব্যাপারে নয়। আসলে তিনি যা করতে চান তা শরণার্থীর সমস্যার সমাধান নয় বরং সমস্যা আরাে জটিল…
সূত্র: কালান্তর, ৮.১১.১৯৭১