বাঙলদেশের মুক্তিযুদ্ধে কৃষকসমাজ
রণেশ দাশগুপ্ত
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙলাদেশের কৃষকদের ভূমিকাটি কী সে সম্বন্ধে জানবার আগ্রহ খুবই স্বাভাবিক। বাঙলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকেরাই জনগণের অপরিমেয় অধিকাংশ। তাদের চিন্তা, চেতনা ও সংগ্রামী মনােভাবের উপর মুক্তিযুদ্ধের সাফল্য নিশ্চয় অনেকাংশে নির্ভরশীল হতে বাধ্য।
বিভিন্ন মহল থেকে আরও একটি কারণে এ আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। সামান্তবাদ-পুঁজিবাদসাম্রাজ্যবাদের যে খুঁটিগুলাে রয়েছে ঔপনিবেশিক পিছিয়ে-পড়া দেশসমূহে, সেগুলােকে ধ্বংস করার জন্য কৃষক থেকে বা ভূমি-বিপ্লব প্রাথমিক শর্ত। বাঙলাদেশও রাওয়ালপিন্ডি-করাচী-লাহােরভিত্তিক সামন্তবাদপুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্তির জন্য এতকাল সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে এবং সে সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কাতারে এসে দাঁড়াবেন বিপ্লবী কৃষকশ্রেণী এইটাই স্বাভাবিক। বাঙলাদেশের কৃষকেরা তাঁদের এই ভূমিকা পালনে কোন পর্যায়ে রয়েছেন? এটা একটা অত্যন্ত সঙ্গত প্রশ্ন।
উপরােক্ত দুই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্যে বাঙলাদেশের কৃষকদের সংগ্রাম, সংগঠন ও চেতনার একটা পটভূমিকে সামনে আনা দরকার। এখানে বেশি পিছনে যেতে চাই না। এই প্রসঙ্গে ১৯৬৯ সালে ঢাকা নগরীতে ঢাকা জেলা কৃষকসমিতি কর্তৃক আহূত একটা কৃষক-বিষয়ক আলােচনাসভার উল্লেখ করা যেতে পারে। এই সভায় জনৈক বক্তা কিছুটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন এই প্রশ্ন করে যে, যদি পূর্ব বাঙলা তথা বাঙলাদেশে ভূমিব্যবস্থার বৈপ্লবিক পুনবণ্টনের আয়ােজন হয় এবং যদি ধনী কৃষক ও জোতদারদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে খাস জমি সমেত গ্রামে গ্রামে ভূমিহীন ও স্বল্প জমির চাষিদের মধ্যে বিলিব্যবস্থা করার বিধান জারি করা যায়, তাহলে কৃষকসমাজ তার তদারকি ব্যবস্থা করতে পারবেন কিনা? কৃষকসমাজের শ্রেণীসংগ্রামভিত্তিক সংগঠন কৃষক সমিতিকে অবশ্যই এই পুনর্বন্টনের দায়িত্ব নিতে হবে এবং গ্রামে গ্রামে কৃষক সমিতির সংগঠন নেই, সেজন্য এই জমির পুনর্বন্টনের ব্যাপারটাকে নিয়ে সারা। বাঙলাদেশে বৈপ্লবিক আবহাওয়া গড়ে তুলতে হবে, যার ফলে সংগঠনের ফাঁকগুলাে ভরাট হয়ে যাবে । উপরােক্ত বক্তব্যের মধ্যে দুটি পরস্পরের পরিপূরক চাহিদা প্রকাশ পায়। সামান্তবাদ পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের কজাকে ভেঙে ফেলবার জন্যে কৃষক সমাজের একটা বৈপ্লবিক আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন পরিচালনার জন্যে কৃষক সমিতিকে যথােপযুক্তভাবে গড়ে তােলা।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত মতবিনিময়ের মধ্যে দিয়ে যে সত্যটা প্রকাশ পায়, সেটা এই যে ১৯৬৯ সালেও দেখা গিয়েছে, এই দুটো চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারে আরও অনেক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর পরই আসে সাধারণ নির্বাচনের ঘটনা। এই সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বে কৃষক সমিতির দুটি অংশ দুই ভাবে বিষয়টিকে দেখে। একটি অংশ প্রবীণ কষকনেতা হাতেম আলী খানের নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচনে ত করে ক্ষমতা দখল করে অথবা আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে গণ-চাপ দিয়ে তার মারফত বাঙলাদেশের জনগণের এবং সেই সঙ্গে বাঙলাদেশের কৃসকশ্রেণীর মুক্তির কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত ও বাস্তবায়িত করার ব্যবস্থাকেই সঙ্গত বলে মনে করেন। আরেকটি অংশ নিপীড়িত জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে নির্বাচনের মাধ্যমে কোন কিছু ফল হবে না রায় দিয়ে বিকল্প পন্থা অর্থাৎ এই মুহূর্তেই বিপ্লবের পথে কৃষকসমাজ তথা বাঙলাদেশের জনগণের মুক্তির পথকে প্রশস্ত করাকেই সর্বোত্তম মনে করেন। সমগ্র ৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে বাঙলাদেশে যে বড় বড় কৃষকসমাবেশ হয় তাতে এই দুটি মতের পক্ষেই কৃষকসমাজের তরফ থেকে বিপুল সাড়া লক্ষ্য করা যায়। যারা এই সময়ে এ ধরনের ব্যাপারটাকে তলিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন তার সিদ্ধান্তেই পৌছেছিলেন যে, বাঙলাদেশের কৃষকসমাজের প্রায় আধাআধি অংশ নির্বাচনের মারফত মুক্তির কাজটা হাসিল করাটাকে যুক্তিযুক্ত এবং সম্ভব মনে করেছেন। অন্য আধাআধি অংশ বিপ্লবের পথেই মুক্তির কাজ সমাধা করার ব্যাপারে রায় দিয়েছেন।
সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলাে। এটা একটা বাস্তব ঘটনা। বিপ্লবের কার্যক্রম এ সময়ে আয়ােজনের পর্বে রয়েছে। সুতরাং বাঙলাদেশের কৃষকসমাজের যে আধাআধি অংশ নির্বাচনের পক্ষে তারা বিপুল উৎসাহে এতে অংশ গ্রহণ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে যে অংশ বিপ্লবের জন্যে অপেক্ষা করে এসেছেন তারাও এতে অংশীদার হলেন। এর কারণে কী? কারণ এই যে, বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ একটা বিষয়ে একমতাে। তারা রাওয়ালপিন্ডি-করাচি-লাহােরভিত্তিক সামন্তবাদ-পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের চক্রের কবল থেকে মুক্তি চান। একথাটা পরিষ্কার প্রকাশ করার জন্যে এবং ঢােল শহরতে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবার ব্যাপারে সাধারণ নির্বাচন একটা উপায়, এ সম্বন্ধে কারও মনে দ্বিধা নেই। বাঙলাদেশ ও তার কৃষকসমাজের মুক্তি কিভাবে আসবে-শান্তিপূর্ণ পথে অথবা বিপ্লবের পথে-এ বিষয়ে কৃষকসমাজের মধ্যে দ্বিমত থাকতে পারে। বিন্তু ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানদের মিলিটারি এবং বাইশ পরিবারের বিরুদ্ধে রায় দেবার কথা যেখানে উঠেছে, সেখানে বাঙলাদেশের কৃষক কি করে ঘরে বসে থাকতে পারেন? সুতরাং ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর যে সাধারণ নির্বাচন হলাে, তাতে বাঙলাদেশের সেই গ্রামঞ্চলে রাজনৈতিক ভুমিকম্প হয়ে গেল। কৃষকসমাজ নৌকামার্কা বাক্সেই ভােট দিলেন, যে নৌকা নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রামের গণ-যাত্রার শুরু। আওয়ামী লীগ কৃষকদের মধ্যে শ্রেণীসংগঠনগতভাবে কখনও কাজ না করলেও রাওয়ালপিন্ডি-করাচি-লাহােরচক্রের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশের বক্তব্যকে সবচেয়ে জোরদার করে বলতে পেরেছে বলেই, তার মনােনীত প্রার্থীদের এবং তাদের প্রতীক নৌকার পক্ষে বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ বিপ্লবাত্মকভাবে ভােট দিয়েছে।
কিন্তু যখন রাওয়ালপিন্ডি মিলিটারিচক্র এই গণভােটকে বানচাল করে দিয়ে সামন্তবাদ-পুঁজিবাদসাম্রাজ্যবাদের জোয়ালে বাঙলাদেশকে বেঁধে রাখার জন্যে বাঙলাদেশের জনগণের উপর রক্তলােলুপ নেকড়ের মতাে ঝাঁপিয়ে পড়লাে, তখন কৃষকসমাজের আধাআধি যে দ্বিতীয় বিকল্প পথের পক্ষে রায় দিয়েছেন, সেটাই মুক্তির পথ হিসেবে সমগ্র কৃষকসমাজের সামনে আসবে স্বাভাবিকভাবেই। তা-ই এসেছে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ মতপ্রকাশ করেছেন। ২৫ মার্চের পরে রাওয়ালপিন্ডির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী যে প্রথম পর্যায়ে প্রতিরােধ-সংগ্রাম চালিয়েছে, তাতে সেই কৃষকসমাজই ব্যাপক সমর্থন ও সাহায্য জুগিয়েছেন, যার কয়েকমাস আগে সপরিবারে ভােটকেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন ভােট দেবার জন্যে।
২৫ মার্চের পরে দেখা গিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কৃষকসমাজের ব্যাপক জনসমর্থনকে সংগঠিত ও কার্যকরী রূপ দেবার ব্যাপারে কৃষকসমিতর উভয় অংশই সক্রিয় অংশ নিয়েছে। যে অংশ সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, তার কাছেও নির্বাচন কোনদিনই একটিমাত্র পন্থা হিসেবে বিবেচিত ছিল না। বস্তুতপক্ষে এই অংশ বরাবরই নিপীড়িত কৃষকসমাজকে বিপ্লবের জন্যে প্রস্তুত করে এসেছে এবং এজন্য আংশিক সংগ্রাম করে এসছে অবিশ্রান্তভাবে। নির্বাচনের ব্যাপারটাকে কৃষক সমিতির এই অংশ বিপ্লবের রাস্তা তৈরি করারই একটা উপায় হিসাবে দেখেছে ইতিপূর্বেও। বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবের মূল রাস্তাটা প্রত্যক্ষভাবে সামনে এসে গিয়েছে এইমাত্র। কৃষক সমিতির দ্বিতীয় অংশ বিপ্লবের পথকেই অবশ্যম্ভাবী বলে নর্দিষ্ট করে এসেছে। সুতরাং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বিনা দ্বিধায় কৃষক সমিতির এই অংশ শরিক হয়ে গিয়েছে। এখানে একটা কথা পরিষ্কার বলা দরকার। কৃষকবিপ্লব বলতে জাতীয় বুর্জোয়ার কোনাে কোনাে প্রবক্তা নিছক বিচ্ছিন্ন শ্রেণীবিপ্লব বলে মনে করেন এবং সেই ভাবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কৃষকবিপ্লব ঐতিহাসিকভাবে জাতীয় মুক্তিবিপ্লব। কৃষক সমিতির দ্বিতীয় অংশের প্রধান হিসেবে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এ কথাটাকে আগেই পরিষ্কার করে রেখেছিলেন গত ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাঙলা তথা বাঙলাদেশেকে স্বাধীন ঘােষণা করে এবং বাঙলাদেশের জনগণের মুক্তিসগ্রামকে স্বাধীন বাংলাদেশকে রক্ষা করার সংগ্রাম হিসেবে অভিহিত করে। বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর কৃষক বিপ্লব যে একার্থক, সেটা কৃষক সমিতির দুই অংশই কার্যত বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের অবিভাজ্য সহকারী হিসেবে দেখাচ্ছেন।
বক্তব্যটা তাহলে এখানে দাঁড়ায় যে, যে কৃষকসমাজ আওয়ামী লীগ তথা নৌকাকে ভােট দিয়েছিলেন রাওয়ালপিন্ডির মিলিটারিচক্রের বিরুদ্ধে গণরায় দেবার জন্যে তারাও আজ উক্ত মিলিটারিচক্রকে বাঙলাদেশ থেকে ঝড়ে-বংশে বিতাড়িত করার জন্যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে শরিক হয়েছেন।
যারা বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কৃষকসমাজের ব্যাপকভাবে ব্যাপৃত হওয়ার এই ঘটনাটার প্রত্যক্ষ প্রমাণ চান, তাঁদের বাঙলাদেশের গত দুই বছরের আনুপূর্বিক ঘটনাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং মার্চ মাসের পরে গ্রামাঞ্চলে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তার ধারাটিকে আন্দাজ করে নিতে হবে। প্রমাণ পেতে হতে হয় মুক্তিতে, নয়তাে প্রত্যক্ষ রণক্ষেত্রে। এখানে যুক্তিটাকেই দেখানাে হচ্ছে।
বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খানের সন্ত্রাসের রাজত্বকে আমলেই আনেনি। যেখানেই রাওয়ালপিন্ডির সেনাবাহিনী উপস্থিত নেই, সেটাই মুক্ত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি করেও ইয়াহিয়া টিক্কারা বাঙলাদেশের কৃষকসমাজেকে বাগে আনতে পারেনি। আসলে বাগে আনতে পিরবার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। যে বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ গত ২৪ বছরে রক্তজলকরা পাটের দাম পাননি, তাঁর পাটের ব্যবসাদারদের দালাল ইয়াহিয়া টিক্কা খান গােষ্ঠির কোন কথাই শুনতে পারেন না। রাওয়ালপিন্ডি গােষ্ঠি অস্ত্রের জোর দেখিয়ে কিংবা দুর্ভিক্ষঅবস্থা সৃষ্টি করে বাঙলাদেশের কৃষকসমাজকে দমন করতে পারবে না। তবে যেকথা আগেই বলেছি, সেটা এখানে আবার বলা দরকার। মুক্তিযুদ্ধে শরিক কৃষকসমাজকে যতখানি সংগঠিত করতে পারলে, এপ্রিল কিংবা মে-জুন মাসেই কৃষকদের মধ্যে থেকে সশস্ত্র সেনাদল তৈরি করা যেত, সেটার অভাব তাে আগেই ছিল। কৃষক সমিতি সাধারণভাবে বাঙলাদেশের কৃষকসমাজকে বিপ্লবের পথে এগিয়ে, নিয়ে এলেও মূল সংগঠনগুলাে পকেট বা ঘাঁটিভিত্তিক হওয়ার দরুন ষাট হাজার গ্রামে ছড়িয়ে থাকা কৃষকসমাজকে সংগঠিত করে তােলার কাজটা সময় নিচ্ছে। তবে বৈপ্লবিক আবহাওয়া তথা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক প্রয়ােজনীয়তাবােধ সংগঠনের অভাবটাকে পূরণ চালাতে চালাতেই সংগঠনের ব্যাপক রূপ দেবার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন কৃষক সমিতির বিপ্লবী কর্মীরা।
বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কৃষকসমাজের ভূমিকাটিকে এভাবে দেখতে পারলে সন্দিহানদের সন্দেহ দূর হবে।
উপরােক্ত পটভূমি ছাড়াও এই প্রসঙ্গে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের কথা বলা যেতে পারে। কথাটা একেবারে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ই পি আর এবং বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পুলিশ ও আনসারের লােকেরা যে মুক্তিবাহিনীর প্রথম কাতারের সৈনিক সে কথা সকলেরই জানা আছে। এরা কারা? এঁরা সবাই নির্যাতিত নিপীড়িত কৃষকের সন্তান। নিপীড়িত কৃষকের সন্তান হিসেবেই বাঙলাদেশর উপরােক্ত সশস্ত্র ব্যক্তিরামুক্তির পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। কৃষকসমাজ এঁদের সন্তান হিসেবেই ইতিপূর্বে জায়গা দিয়েছেন এবং এর পরেও দেবেন। এবং আগামী দিনগুলাে চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিতভাবে বিপ্লবী চিন্তার পতাকাকে সামনের কাতারে নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবেন।
বাঙলাদেশের কৃষকসমাজ ধীরে স্থিরে চলে থাকতে পারেন কোনাে কোনাে সময়ে। কিন্তু সামন্তবাদপুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের চক্রের সঙ্গে বাঙলাদেশের কৃষকসমাজের কোন আপস হতে পারে না।
সূত্র: সপ্তাহ, ১৩ আগস্ট ১৯৭১