“ভয় দেখিয়েই মুজিবকে সামলাতে হবে” – গভর্নর মােনায়েম খান
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
যুক্তফন্ট মন্ত্রিত্বকালীন সময়ের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযােগ এনে মুজিবের বিরুদ্ধে এসময় ৮টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি মামলায় তিনি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত একটি মামলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাকে দু’বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি প্রদান (সেপ্টেম্বর, ১৯৬০) করে। এ-সংক্রান্ত আপিল মামলায় হাইকোর্টে শেখ মুজিবের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী। জুন, ১৯৬১ মামলাটিতে জেলা-কোর্টের রায় খারিজ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, এর আগেই সাতটি মামলায় নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে ডিসেম্বর, ১৯৫৮ মুজিব কারামুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে গােয়েন্দা এবং পুলিশের নিবিড় নজরদারিতে রেখে ঢাকার বাইরে যাবার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়েছিল।
“Mujib could have secured his release earlier had he agreed to sign a bond renouncing political activity as a number of detainees had done, but politics was in his blood and he had no intention of giving it up” (১৭/৯৭)। সেনা-শাসনের শুরুতেই শেখ মুজিব ছাড়াও মামলা হয়েছিল অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধেও। আবুল মনসুর আহমদের ক্ষুব্ধ মন্তব্য : “আমরা আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগার। আওয়ামী লীগাররাই দুর্নীতিবাজ এটা দেখানােই এই সব কেসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। শেষ পর্যন্ত আদালতের বিচারে কারাে বিরুদ্ধেই কোনাে মামলা টিকে নাই। কথায় বলে, ভালরূপ কাদা ছুড়িতে পারিলে, কাদা গেলেও দাগ থাকে” (৪/৫৭২)। এক্ষত্রে পাকিস্তানি সেনা-আমলা চক্র সাময়িক সফলতাও পেয়েছিল। সেনা-শাসন জারি করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা প্রধান সেনাপতি আয়ুব খানকে বানিয়েছিলেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং প্রধানমন্ত্রীও। এই আয়ুব খানই মাত্র ২০দিনের মাথায় ২৭ অক্টোবর মধ্য রাতে তিনজন জেনারেলকে পাঠিয়ে অস্ত্রের মুখে ইস্কান্দার মির্জাকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিলেন। এক্ষেত্রে আইয়ুবের মূল সহায়ক ছিলেন আজম খান এবং পরামর্শদাতা ইয়াহিয়া খান। ২৭ অক্টোবর প্রধান সেনাপতি আইয়ুব খান নিজেকেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘােষণা করে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেছিলেন। মির্জার মন্ত্রিসভার সকল সদস্যকে বহাল রেখেই তিনজন নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে আইয়ুবের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। তবে আইয়ুবের মন্ত্রিসভায় কোনাে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।
আইয়ুব খান পূর্ব বাংলায় একে একে গভর্নর বানিয়েছিলেন জেনারেল আজম খান(জুন, ১৯৬০), অতঃপর পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা গােলাম ফারুক (মে, ১৯৬২) এবং সবশেষে (অক্টোবর, ১৯৬২) ময়মনসিংহের উকিল আব্দুল মােনায়েম খানকে। “Monem Khan’s principal characteristick was his unabashed servility toward Ayub Khan… In spite of black marks on his records, or perhaps because of them, he was considered a suitable Governor for East Pakistan” (১৭/১০৫)। পূর্ব বাংলায় তদানীন্তন সময়টা মূলত ‘আইয়ুব-মােনায়েম আমল’ পরিচয়েই কুখ্যাত হয়ে আছে। গভর্নর মােনায়েম খান চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শেখ মুজিবকে “In him (Mujib) Monem Khan saw his principal political antagonist in East Pakistan. Mujib could not be tempted by inducements of office or material rewards to give up his opposition to the Ayub rgime (১৭/১০৬)। মােনায়েম ভেবেছিলেন, প্রচণ্ড ভয় দেখিয়েই মুজিবকে সামলাতে হবে। ১৯৬০-দশকের মধ্যভাগ থেকে শেখ মুজিব সামরিক শাসন-বিরােধী কর্মকাণ্ড জোরদার করায় মােনায়েমও তাঁকে সম্ভাব্য সকল প্রকার অত্যাচার-অপমানের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিলেন।
……
References:
হক – ভাসানী – সোহরাওয়ার্দী – মুজিব, রামেন্দ্র চৌধুরী, পৃষ্ঠা ১২৬-১২৭
ছবি – বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সাল