দিনে পাকিস্তান, রাতে বাংলাদেশ
মুক্তিফৌজ আখাউড়া রণাঙ্গনে চাই পাতিয়াছে। চাই’ জিনিসটা খাল, বিল, ঝিল, নদী-নালার সহিত বসবাসকারী পূর্ববঙ্গবাসীদের খুবই প্রিয় বস্তু। অন্যরাও হয়তাে অনেকে চিনে। চাই’ নামটা পূর্ব বাংলার নিজস্ব। অভিধানে নাই। কেউ কেউ উহাকে আইডাও বলে। অনেক রকমের চাই আছে। উহা বর্ষাকালে মাছ ধরিবার জন্য ব্যবহৃত হয়। একাধারে ফাঁদ এবং খাদ। বাঁশ বেতের তৈরি। বিভিন্ন মাছ ধরিবার জন্য বিভিন্ন রকমের। চাই আছে। এক মুখী, উভয় মুখী এবং বহুমুখী নানারকম চাইয়ের সাহায্যে মাছধরা হয়। মুক্তিফৌজ আখাউড়ার যে চাই পাতিয়াছে উহা মাছ ধরিবার জন্য নহে, পাক বাহিনীকে ঘায়েল করিবার চাই উহা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও শ্রীহট্টে অবস্থানকারী পাক সৈন্যদের জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারা আখাউড়া অঞ্চলে ত্রিমুখী চাই সদৃশ ফাঁদ পাতিয়াছে। এই তিন স্থানের পাক জঙ্গি ফৌজ একে অন্যের সহিত মিলিত হইবার নিমিত্ত আখাউড়ার উপকণ্ঠে আসিলেই কোথা হইতে মুক্তিফৌজ আসিয়া তাহাদের ঘাড়ে ঝাপাইয়া পড়ে এবং একটি একটি করিয়া প্রতিটি পাক ফৌজকে কোরবানি দিয়া থাকে। বলা আবশ্যক পাক ফৌজের যানবাহনসহ অস্ত্র-শস্ত্র-গুলি মুক্তিফৌজের দখলে আসে। বিগত সপ্তাহে এই চাই প্রথায় কয়েক শত পাক জঙ্গি ফৌজ এবং তাহাদের গােলামস্বরূপ বহু সংখ্যক মুসলিম লীগার মুক্তিফৌজের হাতে জবাই হইয়াছে এবং কয়েকটি ট্রাক বােঝাই কামান, মর্টার, মেশিনগান এবং গাে-গুলি বাংলাদেশ সরকারের দখলে আসিয়াছে।
দিনের বেলায় পাক জঙ্গি ফৌজ ছাউনিতে বসিয়া মুসলিম লীগারদের দ্বারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনিতে বন্দিত এবং স্তোকবাক্যে ও গােস্তকাবাবে আপ্যায়িত হইয়া দিনান্তে বর্বরস্থানের হুকুম তামিল করিতে বাহির হইলেই জয় বাংলা বলিয়া বাংলাদেশের গেরিলা যােদ্ধারা আসিয়া সব ওলট-পালট করিয়া দেয়।
সূত্র: ত্রিপুরা
২৮ এপ্রিল, ১৯৭১
১৪ বৈশাখ, ১৩৭৮