You dont have javascript enabled! Please enable it!

২২ অক্টোবর ১৯৭১ঃ কসবা যুদ্ধ

২২ অক্টোবর ১৯৭১ কসবা দখলের জন্য খালেদ মোশাররফ নিজে উপস্থিত থেকে ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিনের কোম্পানি নিয়ে সকালে আক্রমন শুরু করেন। এই যুদ্ধে লেঃ হারুন (সাবেক সেনা প্রধান) সেঃ লেঃ আজিজ অংশ নেন। আগের দিন ২১ অক্টোবর, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা আবেদকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী কসবা ওয়ালের উপর বাঁশে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে। তখন পাক হানাদার বাহিনী কসবা ওয়ালের পশ্চিম পাশ থেকে চেঁচিয়ে বলতে থাকে, ’মুজিব কা ছাওয়াল কেয়া করতা হে তুম? হাতিয়ার বি ঢাল দাও’। এই ঘটনার পরের দিন মূল আক্রমন শুরু হয়। ২১ অক্টোবর রাত ২টা। রোজার মাস। পেছনে বাঙ্কার গুলোতে অবস্থান নেয় ইন্ডিয়ান আর্মি। পরিকল্পনা ছিল ভোরের দিকে ইন্ডিয়ান আর্মি আর্টিলারি মারবে। কিন্তু তার পূর্বেই পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কারগুলো মুক্তিবাহিনী দখলে নেয়। এ সময় অনেক বাঙ্কারে নগ্ন বাঙালি তরুণী উদ্ধার করা হয়। অল্পসময়ের মধ্যেই ইন্ডিয়ান আর্মির আর্টিলারি ছোঁড়া বন্ধ হয়ে যায়। সে সুযোগে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিবাহিনীর বাঙ্কার লক্ষ্য করে আর্টিলারি ছোঁড়ে। সেখানে অবস্থান করছিল ইন্ডিয়ান আর্মি। অনেক ইন্ডিয়ান সেনা আহত হয়। কনাবনে অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর গোলন্দাজ সহায়তা পাওয়ার আগেই মুক্তিবাহিনীর অনেক হতাহত হয়। কসবায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ২৬ জন মুক্তিবাহিনী। আহতদের মদ্ধে ছিলেন লে. হারুন অর রশিদসহ কয়েকজন।

লে. হারুন শত্র“র গুলিতে আহত হলে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা বিলাত মিয়া অসাধারণ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে অনেক পাক সৈন্যকে হত্যা করেন। তার সঙ্গে যুদ্ধে দারুণ নৈপুণ্য দেখান সহযোদ্ধা মিরাশী গ্রামের ল্যান্স নায়েক আবদুল হক। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ বিলাত মিয়া বুকের নিচে গুলিবিদ্ধ হন। প্রায় একই সময়ে তার সহযোদ্ধা আবদুল হকের ডান চোখে মর্টারের স্পি¬ন্টার এসে লাগলে তিনিও আহত হন। এ যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের মাথায় স্পি¬ন্টারের আঘাত লাগে। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় কুমিল্লার এম এন এ ক্যাপ্টেন সুজাত এই যুদ্ধে আহত হন তাকেও হাস্পাতালে পাঠানো হয়। ক্যাপ্টেন সুজাত, মেজর খালেদ মোশাররফ, বিলাত মিয়া, ও আবদুল হককে আগরতলার জিবি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। কসবার যুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য বিলাত মিয়া পরে বীরউত্তম খেতাব উপাধি পান। আর তার সহযোগী ল্যান্স নায়েক আবদুল হক পান বীরবিক্রম খেতাব উপাধি। সিপাহী মো. ফরিদ মিয়া এই যুদ্ধে মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। মাথাসহ তার শরীরে আঘাত হানে পাকিস্তানি সেনাদের ২৮টি গুলি। এতে তার বামপায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। তার সারা শরীর প্লাস্টারে আবৃত থাকে প্রায় আড়াই বছর। শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগানো হয় কৃত্রিম পাত। বর্তমানে হুইলচেয়ারই তার একমাত্র সঙ্গী। ২২ অক্টোবর কসবার কনভেনশনাল যুদ্ধে ৪ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে কসবার ৬ কিমি উত্তরপূর্বে লক্ষ্মীপুরে সমাধিস্থ করা হয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!