You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৪ আগস্ট জলিলপুর কোন রাষ্ট্রের শাসনে ছিল?
পাক হানাদারদল কর্তৃক মহিলা অপহরণ-প্রত্যর্পণ গুপ্তচর চক্রান্ত নয় কি?

আগরতলা, ২৫ আগস্ট৷ গত ১৪ আগস্ট ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহর হইতে মাত্র ২৪ কিলােমিটার উত্তরে অবস্থিত সীমান্ত পল্লী জলিলপুরে এক ব্যাটালিয়ান পাকহানাদার অনুপ্রবেশ করিয়া জঙ্গি অভিযান চালাইয়া নিরীহ পল্লীবাসীদের মধ্যে ১১ জনকে হত্যা, অন্যান্য গ্রামবাসীদের গুরুতরভাবে আহত করে এবং চারিজন মহিলাকে লইয়া যায়। মেশিনগান, রাইফেল আর বেয়নেটের সাহায্যে নির্মমভাবে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চলে প্রায় তিন ঘণ্টা। অদূরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটি বর্তমান আছে। থানাও বেশি দূরে নয়। গােলাগুলির আওয়াজ থানা ও ঘাঁটির শ্রবণ শক্তির মধ্যে; ঘাটি হইতে আর্তনাদও শােনার কথা। আরও জানা যায়, পাক হানাদারদের অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ফোন বা রেডিওগ্রামযােগে শুভ সংবাদটি আগরতলা হেড কোয়ার্টারে পৌছানও হইয়াছিল।
কার্যত দেখা গেল ঘটনার সময় তাে দূরের কথা, ঘটনার দিন রাতে, এমনকি পরদিন মধ্যহ্ন কাল (অর্থাৎ ঘটনার বিশ বাইশ ঘণ্টা পরেও) পর্যন্ত ত্রিপুরা প্রশাসন বা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কেউই ঘটনাস্থলে যান নাই। এলাকাটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত ছিল। মৃতদেহগুলাে শিয়াল-কুকুরের মাংস ক্ষুধা মিটাইয়াছে। ১৫ আগস্ট অপরাহ্নে ত্রিপুরা সরকার তথা ভারত সরকার তথায় যাইয়া পাক হানাদারদের পরিত্যক্ত আহতনিহতদের খবরাখবর লইয়াছে। অর্থাৎ প্রায় ২৫ ঘণ্টা ঐ অঞ্চলটিতে ভারতের শাসন কর্তৃত্ব বা আধিপত্য ছিল না; পাক হানাদারদের দয়া ও কৃপার পাত্র বা সামগ্রী হিসেবে গণ্য হইয়াছিল ঐ অঞ্চলের অধিবাসীগণ ও তাহাদের সম্পদ সম্পত্তি। আমাদের বীরপুরুষদের পাক হানাদার ভীতির আরও চমকপ্রদ সংবাদ পাওয়া যায়। মৃতদেহগুলাে উদ্ধারের নিমিত্ত বীর রক্ষীরা অগ্রসর হন নাই, নিরীহ গ্রামবাসীদের দ্বারা কুড়াইয়া আনাইয়াছেন। অপর একটি মৃতদেহ আবিষ্কার ও সংগৃহীত হয় তিন দিন পর।
সরকারি সংবাদে প্রকাশ পাক হানাদাররা অপহৃতা মহিলাদের (চারিজনকেই) অপহরণের ২/৩ ঘণ্টা পর ফেরত দিয়াছে। তাহারা অক্ষত দেহে ফিরিয়া আসিয়াছে। এরপর আর কোনাে সংবাদ নাই। ফিরিয়া আসা এই মহিলাদের কোনাে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হইয়াছে কি? জিজ্ঞাসাবাদ করিবে কাহাকে? তাহাদের পাত্তা পাওয়া গেলে তাে কুশলাকুশল বার্তা জানা যাইবে। বলা হইয়াছে অপহরণের ২/৩ ঘণ্টা পর তাহারা ফিরিয়া আসিয়াছে। তখন তাহাদের প্রত্যাবর্তন রেকর্ড করিবার মতাে সরকারি কর্মচারী বলিতেও তাে কেহ ছিল না ঐ অঞ্চলে। এই মহিলারা নাকি শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা ছিল। এখন নাকি তাহাদের হদিসই পাওয়া যাইতেছে না। অক্ষত দেহে ফিরিয়া আসিয়াছে’ ইহাই বা প্রথম বলিল কে? তাহারও যে সন্ধান পাওয়া যায় না। মহিলা অপহরণ ও প্রত্যাবর্তন’ ব্যাপারটা পাক গুপ্তচরচক্রের চক্রান্তও হইতে পারে। চেতনা সম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের মুখে আজ একমাত্র কথা, স কিছুরই তদন্ত হওয়া উচিত। যেমন তদন্ত হওয়া উচিত আমাদের প্রহরী বা নিরাপত্তা বাহিনী ২৪ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন।

সূত্র: ত্রিপুরা
২৫ আগস্ট, ১৯৭১
৮ ভাদ্র, ১৩৭৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!