কিউবা ও ভিয়েতনামের মত বাঙলাদেশও ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছুবে
আমেরিকার কমিউনিষ্ট নেতা ডঃ আপ্তেকারের মন্তব্য
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৩১ আগষ্ট- আমেরিকার বিধ্বংসী আক্রমণের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছােট্ট কিউবা এবং ভিয়েতনাম যখন স্বাধীন হয়ে মাথা উঁচু করে রয়েছে তখন সাত কোটি জনগণ অধ্যুষিত “বাঙলাদেশ ও অভূতপূর্ব সংগ্রামে। ইন্সিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।” নিক্সনের পুতুল সরকার ইয়াহিয়া খা সেই সংগ্রাম ধ্বংস করতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতা ডক্টর হার্বাট আপ্তেকার আজ উপরােক্ত ঘােষণা করেন। তিনি বলেন, বাঙলাদেশের সর্বস্তরের সংগ্রামী যােদ্ধাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্ট হওয়া উচিত। কেননা একতাই শক্তি। পূর্ব বাঙলা তথা বাঙলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান করার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে শেখ মুজিবর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তার তথাকথিত বিচার বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব শান্তি সংসদের চারজন সদস্য ডক্টর হার্বাট আপ্তেকার, অ্যাভৌলে ট্রমাদোর এম পি, কার্লো মুশা ইলাভাদ এম, পি এবং মাহমুদ তেব্বে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। তারা বলেন আমরা আমাদের দেশে ফিরে “বাঙলাদেশের কথা বলব, মুজিবরকে মুক্তি দেবার জন্য নিজ সরকারকে চাপ দিতে বলব। প্রতিনিধিবৃন্দ বলেন, বাঙলাদেশের জনগণের উপর ইয়াহিয়া সরকারের বর্বরােচিত সশস্ত্র আক্রমণ বিশ্ব। ইতিহাসে কলঙ্কজনক। ডক্টর আপ্তেকার এক উত্তরে বলেন, রাজনৈতিক সমাধান বলতে আমি স্বাধীন বাঙলাদেশের কথাই বলছি। তিনি বলেন, বাঙলাদেশের সংগ্রাম আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অভূতপূর্ব সংগ্রাম। বাঙলাদেশের মানুষ সেই কথা ঘােষণা করেছে। তিনি বলেন, সকল স্তরের সংগ্রামী যােদ্ধাদের নিয়ে যুক্তফ্রন্ট হওয়া উচিত। জনৈক সাংবাদিক যখন বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ একক সংখাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার করার দায়িত্ব পেয়েছে তখন নতুন করে যুক্তফ্রন্ট করার কথা দরকার কী ? ডক্টর আপ্তেকার বলেন, ঘটনা এর মধ্যে অনেক পাল্টে গেছে। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে যে, নির্বাচনে সামরিক চক্র কতৃর্ক অবৈধ রাজনৈতিক দলগুলি অংশ গ্রহণ করতে পারেন নি। সারা ভারত শান্তি সংসদের আহ্বানে উপরােক্ত চারজন ভারতে এসে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। শিবিরে শরণার্থী কাছ থেকে পাক ফৌজের বর্বর পাশবিক অত্যাচারের কথা শােনেন। প্রতিনিধিবৃন্দ শরণার্থীদের প্রতি ভারত সরকারের ব্যবহার এবং বন্দোবস্তের দারুণ প্রশংসা করেন। ডক্টর আপ্তেকার বলেন, ৬০ সালেই আমেরিকা ভিয়েতনাম ধ্বংস করতে পারেনি, ৭১ এ বাঙলাদেশ কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানের ইয়াহিয়া সরকার মার্কিন সরকারের অর্থে এবং অস্ত্রে সজ্জিত। এখনও আমেরিকা পাকিস্তানকে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, গণহত্যাকারী ইয়াহিয়া খাকে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রশংসা করেছেন, কেননা ইয়াহিয়া তাদের পুতুল সরকার। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুশাে বছর আগে আমরা প্রথমে সায়ত্ত্বশাসনের জন্যই লড়াই শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সংগ্রামকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দেবার চেষ্টা হয়। স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামের দিকে মােড় নেয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যকারী আমার দেশের অধিবাসীদের বাঙলাদেশের কথা বুঝিয়ে বলতে কোন অসুবিধা হবে না। ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির এম,পি শ্রী এ, ইমবাদোরি বলেন যে, নাৎসীদের আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিলাম। বাঙলাদেশের সংগ্রামী যােদ্ধাদের নিয়ে এখনও কোনাে যুক্তফ্রন্ট হয় নি। তিনি বলেন, পাক সরকার যুদ্ধের প্ররােচনা চালাচ্ছে। আগরতলা ভারতীয় এলাকায় পাক-ফৌজের গােলাগুলি নিদর্শন আমরা দেখেছি। তিনি এবং কার্লো মুশা বলেন, বাংলাদেশ সমস্যা সামরিকভাবে সমাধান করার কথা মানে এই উপমহাদেশে শান্তি বিঘ্নিত করা। লেবাননের মাহমুদ তেব্বে বলেন, পৃথিবীর সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের সংগ্রামের পেছনে আমরা রয়েছি।
সূত্র: কালান্তর, ১.৯.১৯৭১