বাঙলাদেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত
অহিংসভাবে বাঙলাদেশে অভিযান করা অন্যতম কার্যক্রম
নয়াদিল্লী, ২০ সেপ্টেম্বর, (ইউএনআই) বাঙলাদেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সমবেত ২৫টি দেশের প্রতিনিধিদের কাছে উত্তাপিত এক রিপাের্টে আজ সুপারিশ করা হয়েছে যে, সর্বজনীন ভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এবং এ ব্যাপারে ভারতকেই অগ্রণীর ভূমিকা নেওয়া উচিত।
বাঙলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের যে আগ্রহ সমগ্র বিশ্ববাসীরই আছে তদনুসারে রিপাের্টে এই সুপারিশ করা হয়েছে যে, ভারত থেকে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের একটি মুক্তি অভিযান সংগঠিত করা কর্তব্য— যা অহিংসভাবে বাঙলাদেশে প্রবেশ করবে।
সম্মেলনে যে তিনটি কমিশন গঠিত হয়েছিল তাদের পক্ষ থেকে পেশ করা রিপাের্টে বাঙলাদেশের জনগণের মুক্তি নিশ্চিত করতে এবং বাঙলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী উৎপীড়নের অবসান ঘটাতে সরকারী ও বেসরকারী তৎপরতা চালাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, বাঙলাদেশে সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ না-করা পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানকে সমস্ত বৈষয়িক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ বিলম্বে করতে হবে। | বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করে রিপাের্টে এই সুপারিশও করা হয়েছে স্বাধীনতার সংগ্রাম যাতে সার্থকভাবে চালাতে পারে সেজন্য সমস্ত সরকারের কর্তব্য বাংলাদেশ সরকারকে সর্বাধিক বৈষয়িক ও সামরিক সাহায্য দেওয়া।
কাবুল, তেহরান অথবা দিল্লী থেকে আরেকটি আন্তর্জাতিক অভিযান ইসলামাবাদের দিকে পাঠাবার সুপারিশও রিপাের্টে রয়েছে।
প্রতিনিধিদের অনুরােধ করা হয়েছে, তারা যেন ব্যক্তিগতভাবে নয়াদিল্লীতে পাকিস্তানী হাইকমিশনের দপ্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করে সম্মেলনে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা পেশ করেন এবং অন্যান্য কূটনৈতিক মিশনে গিয়ে অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবার দাবি জানান।
সম্মেলনের সমস্ত প্রতিনিধি আগামীকাল কলকাতা যাচ্ছেন শরণার্থীদের কথা শুনতে। প্রতিনিধিদের অনুরােধ করা হয়েছে তারা যেন বাঙলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করেন এবং দেখান যে তারা বাঙলাদেশের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব স্বীকার করেন না।
প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে বাঙলাদেশের একটি সার্বভৌম রাষ্ট্ররূপে গণ্য হবার সমস্ত যােগ্যতাই আছে এবং বাঙলাদেশের অস্থায়ী সরকারই হল সেখানকার অধিবাসীদের আশা-আকাক্ষার প্রতিনিধি বৈধ সরকার।
রিপাের্টে বাঙলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের বে-দখলকারী সৈন্যবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির জন্য কোনাে সরকার যেন পশ্চিম-পাকিস্তানী বিমান বা জাহাজকে তেল নেওয়া, পােতাশ্রয়ে আশ্রয় দেওয়া এবং অবতরণাদি করার সুযােগ না দেয় সেজন্যও আহ্বান জানানাে হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ২১.৯.১৯৭১