You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.21 | বিপ্লবী বুদ্ধিজীবি আঁদ্রে মালরাে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বিপ্লবী বুদ্ধিজীবি আঁদ্রে মালরাে

ফরাসী দেশের বিখ্যাত লেখক, রাজনীতিক ও প্রাক্তন সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আঁদ্রে মালরাে কয়েকদিন পূর্বে ঘােষনা করেছিলেন যে, তিনি সংগ্রামী বাঙলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করতে চান। লেখকরা সাধারণত একটু আবেগপ্রবন হন। কিন্তু মালােরার ক্ষেত্রে নিছক এ কথা বলা যাবে না। মহান লেলিন যাদের বলেছিলেন বিপ্লবী বুদ্ধিজীবি মালরাে তাঁদেই শ্রেণিভুক্ত। স্পেনের মুক্তিযুদ্ধে মারিস কর্ণফোর্থ, গাথিয়া লােরকা, র্যাল, ফ, ক্রিস্টোফার কডওয়েল, স্টিফেন স্পেন্ডার প্রমুখ দিকপাল বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাম্রাজ্যবাদের দালাল ফ্রাংকোর প্রতিবিপ্লবী বাহিনীর বিরুদ্ধে মালরােও সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বাহিনীর বিমান দপ্তরে অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে তিনি স্পেনে লড়েছিলেন। এই মালরােকেই আবার আমরা দেখেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফাসিস্ত জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রান্সের কমিউনিস্ট ও গণতন্ত্রীদের অসম সাহসিক প্রতিরােধ সংগ্রামীদের গৌরবােজ্জ্বল সারিতে খ্যাতনামা লেখক ও চিন্তাবিদ… পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্প প্যাবলে…মতে মালরােও সংস্কৃতি শিল্পের অঙ্গন ছেড়ে বৃহত্তম…ডাকে রণক্ষেত্রে নেমে এসেছিলেন মানবতার আহ্বানে বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীরা বার বার মসি ছেড়ে অসি ধারণ করেছে। মালরাের চিরাচরিত সংগ্রামী ভূমিকা পশ্চিমের প্রগতিশীল মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বলেই বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি যােগদানের ইচ্ছে প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা দলে দলে মালরাে-কে জানিয়েছেন যে তিনি যদি আন্তর্জাতিক সশস্ত্র বাহিনীগঠন করেন, তবে তাঁরা বাঙলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। আশা করি, এই ঘটনাটি একই সঙ্গে আমাদের দেশের ও বিদেশের বুদ্ধিজীবীদের অনুপ্রাণিত করবে।

ইয়াহিয়ার গণতন্ত্র
বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে ইয়াহিয়ার গণতন্ত্রের নমুনা উপলব্ধি করছে। সেই গণতন্ত্রের দাপটে লক্ষ লক্ষ মানুষ দেশছাড়া ঘরছাড়া হয়েছে। যে গণতন্ত্র শরণার্থীদের জন্ম দিয়েছে সেই শরণার্থীদের সংখ্যা ইউরােপের কোনাে কোনাে দেশের লােকসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। এই গণতন্ত্র মানুষের গণতন্ত্র নয়-রাইফেল ও মেসিন গানেরই গণতন্ত্র। ভাওতাবাজী ও মরণাস্ত্রের গণতন্ত্র বাঙলাদেশে চক্রাকারে ঘুরছে। বাঙলাদেশে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে দিন তারিখ ইয়াহিয়া খান স্বেচ্ছায় ঘােষণা করেছিলেন তার আবার পরিবর্তন হয়েছে। ইতিপূর্বে এক কলমের খোচায় জাতীয় পরিষদের ৭৯টি নির্বাচিত সদস্যপদ নাকচ করে দেন ইয়াহিয়া খান । আবার নাকি নভেম্বর মাসে ক্ষমতা হস্তান্তরের নাটক শুরু হবে। সংবিধানও নাকি রচিত হয়েছে। বাকী ৭৯ জনের সদস্যপদ পূরণ না হলেই জাতীয় পরিষদ ষােলকলায় পূর্ণ হবে। অতএব উপ-নির্বাচন চাই। যদি ৭৯ জন সদস্যদের উপ-নির্বাচন হয় বন্দুকের মুখেই যে সেই নির্বাচন হবে তাতে সন্দেহ নেই। ভবিষ্যৎ জাতীয় পরিষদের সংবিধান সংশােধনে যে ভেটো প্রয়ােগ করার প্রয়ােজন হতে পারে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ইয়াহিয়া খান। উপরন্তু যে আওয়ামী লীগ গত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল ইয়াহিয়ার গণতন্ত্রে সেই আওয়ামী লীগ আজ বেআইনী ঘােষিত। ইয়াহিয়ার একনায়কত্বে যে গণতন্ত্র অঙ্কুরিত হতে চলেছে সে গণতন্ত্র যে বাঙলাদেশের মানুষের গলায় পরাধীনতার শৃঙ্খল পরিয়ে দেবে তার পুনরুক্তির কোনাে প্রয়ােজন আছে বলে মনে হয় না। আর সেই গণতন্ত্রের কাছে বশ্যতা স্বীকার করলে মরণাস্ত্র তাে আছেই। বাঙলাদেশের মানুষ ইয়াহিয়ার গণতন্ত্রকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।

সূত্র: কালান্তর, ২১.৯.১৯৭১