You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারত-সােভিয়েত যুক্ত বিবৃতির কঠোর নিন্দায় সিপিএম পলিটব্যুরাে

কলকাতা, ২ অক্টোবর-বাঙলাদেশ সমস্যা সম্পর্কিত ভারত সােভিয়েত যুক্ত বিবৃতিকে খাটো করে দেখাবার ব্যাপারে সিপিএম পলিটব্যুরাে জনসংখ্যা, স্বতন্ত্র প্রভৃতি দলগুলােকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। সিপিএম পলিটব্যুরাে এই যুক্ত বিবৃতিকে একটি বিরাট অধঃপতন বলে মন্তব্য করে দ্বিধা করেন নি। আজ ইউ এন আইয়ের এক সংবাদে সি পি এম পলিটব্যুরাের বিবৃতিটিকে জানা গেছে।
প্রাভদায় জাতীয় ও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ইতিবাচক কাজগুলির প্রশংসা করায় ইতােপূর্বে সি পি এম নেতাদের গাত্রজ্বালা হয়েছিল। আজ ভারত-সােভিয়েত যুক্ত বিবৃতির নিন্দা করে সি পিএম পলিটব্যুরাে কার্যতঃ সেই গাত্ৰজ্বালার চরম বহিঃ প্রকাশ ঘটালেন।
পলিটব্যুরাে বলেছেন : ভাবা গিয়েছিল ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে ভারত সরকারকে দোদুল্যমানতা কাটাতে সমর্থ করবে। কিন্তু ঘটনাগুলি অন্য খাতে প্রবাহিত হয়েছে। উল্লেখযোেগ্য, ১১ আগস্ট সি পি এম সাধারণ সম্পদাক শ্রী পি সুরাইয়া ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইয়াহিয়া চক্রের রণােন্মদনার বিরুদ্ধে একটি বিরাট আঘাত বলে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন। সেই বিবৃতিতে সি পি এম কিন্তু একবারও বলে নি : ভারত-সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তি বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে ভারত সরকারের দোদুল্যমানতা কাটাতে সমর্থ হবে।
এমনকি যে দল বা গােষ্ঠী যুক্ত বিবৃতির প্রশংসা করেছে। তাদেরকে হেয় করতেও সি পি এমের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয় নি। “সরকারের ঢাক বাজিয়েরা একটি আত্মতুষ্টির মনােভাব ছড়াবার চেষ্টা করছেন—এই প্রবণতার বিরুদ্ধে পলিটব্যুরাে জনগণকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে। যুক্ত বিবৃতিতে খুব সতর্কভাবে বাগাড়ম্বরময় শব্দ ব্যবহারের সাহায্যে অধঃপতনকে চাপ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ, জনগণের মনে প্রত্যয় সৃষ্টি করা যে সঠিক দিকে নতুন বাঁক দেওয়া হচ্ছে।”
ইন্দিরা গান্ধী কোসিগিনের যুক্ত বিবৃতিতে বাঙলাদেশ সমস্যার সমাধান হিসাবে বলা হয়েছিল : পূর্ববাঙলার জনগণের ইচ্ছা অনস্বীকার্য অধিকার এবং ন্যায়সঙ্গত স্বার্থের প্রতি যথােচিত মর্যাদা দেখিয়ে রাজনৈতিক সমাধান।’ এই রাজনৈতিক সমাধান’ সি পি এম পলিটব্যুরাের কাছে ইয়াহিয়ার পক্ষে ওকালতির সামিল মনে হয়েছে। পলিটব্যুরাে বলেছে : আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার “সেজন্য ইতােমধ্যেই হাজারাে মানুষ জীবন দিয়েছে, সেই সম্পর্কে বিন্দুমাত্র উল্লেখ না করে যুক্ত বিবৃতিতে রাজনৈতিক সমাধানে পৌছাবার জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে, যার অর্থ জনগণের অচ্ছেদ্য অধিকার লাভের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে খুনী ইয়াহিয়াকে আবেদন করা।” এমন কি সি পি এমের কাছে যুক্তবিবৃতি এবং জাতিসংঘে পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী শরণ সিংয়ের বিবৃতি একই সূত্রে গাঁথা মনে হয়েছে। বলা হয়েছে, “জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীশরণ সিং বাঙলাদেশের স্বাধীনতার দাবি বা বাঙলাদেশ সরকারের অস্তিত্বের কথা যে উল্লেখ করেন নি, তা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়।”
এমনকি সােভিয়েত চাপের ফলেই যেন ভারত সরকার বাঙলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন করে থেকে সরে আসছেন এমনতর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পলিটব্যুরাের বিবৃতিতে আভাসিত হয়েছে। পলিটব্যুরাে বলেছেন : “ধাপে ধাপে ভারত সরকারকে বাঙলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সমর্থনের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে।” উল্লেখযােগ্য, ইতােপূর্বে সি পি এম নেতারা ইন্দিরা-ইয়াহিয়া এক হায়’ ধ্বনি তুলেছিলেন।
এমন কি ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশ শান্তি বজায় রাখার যে সদিচ্ছা যুক্ত বিবৃতিতে প্রকাশিত হয়েছে তাতাে পলিটব্যুরাের ভাল লাগে নি। বিবৃতিতে সমগ্র প্রশ্নটি একপেশে দৃষ্টিকোণ অর্থাৎ শান্তি বজায় রাখার দিক থেকে উপস্থাপিত হয়েছে। বাঙলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার বদলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের যাতে পুনরায় অবনতি না ঘটে সেটিকেই মূল প্রশ্ন রূপে নির্দেশ করা হয়েছে।
“তাই বক্তব্য রাখার সময় বাংলাদেশ সমস্যাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে গুরুত্ব আরােপ করা শ্রীকোসিগিনের পক্ষে বিচিত্র কিছুই নয় এবং কার্যতঃ তার দিক থেকে একথা ঘােষণা করাও আশ্চর্যের নয় যে ভারত সরকার ন্যায্যত শুধুমাত্র পূর্ববাঙলা থেকে আগত শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারেন। আর লক্ষ্যণীয় বিষয়, শ্রীমতী গান্ধী এই অবস্থান সমর্থন করেছেন। অথচ ভারত সরকার এতকাল প্রকাশ্যে অবস্থান সমর্থন করেন নি।”
“এভাবে ভারত সরকারকে কার্যতঃ শরণার্থী সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে এর অর্থ বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সাফল্য লাভের জন্য ভারত সরকার যে সাহায্য দিচ্ছে তা প্রত্যাহার করতে বলা।”

সূত্র: কালান্তর, ৩.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!