৮ শ্রাবণ, ১৩৭৮ রোববার, ২৫ জুলাই ১৯৭১
ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার দূর্গাপুর থানাধীন নাজিরপুরে এদিন মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল পাকসেনাদের ওপর অ্যামবুশ করে। পাকসেনারা কাউন্টার অ্যামবুশে বীরমুক্তিযোদ্ধ জামাল শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা নাজমুল হোক তাঁরা গুরুতরভাবে আহত হয়। উল্লেখ্য- এ দিনের যুদ্ধে বিশ ঘন্টা স্থায়ী হয়। নাজমুল হোক তারা গুরুতরভাবে আহত হয় উল্লেখ্য- এ দিনের যুদ্ধ বিশ ঘন্টা স্থায়ী হয়। নাজিরপুর যুদ্ধে নুরুজ্জামান, দ্বিজেন্দ্র,ইয়ার মাসুদ, ভবতোষ , জামাল, আজিজ ,ফজলুর রহমান ও কালামিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হন। এরা সকলেই তোরা মুক্তি যোদ্ধাশিবিরের প্রথম ব্যাচের বীর মুক্তিযোদ্ধ ছিলেন। (সংগ্রহ)
-দৈনিক টকিও শিম্বুন (জুলাই ২৬) পত্রিকায় বাঙালীশরণার্থী তথা পাকসেনাদের অত্যাচার সম্বন্ধে জাপান সরকারের নিরুত্তর থাকার সমালোচনা করে। পত্রিকা বলে, জাপানের মত একটি মহান দেশের পক্ষে পূর্ব বাংলার গভীর শোকের দিন কোন কথা না বলা বা সংসদে কোন বক্তব্য না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক। পূর্ব বাংলার এই দুর্্যোগ শরণার্থীদের সাহায্য করা উচিত। এশিয়ার মহা শক্তিধর দেশ জাপানের নিরাপত্তা পরিষদ স্থায়ী সদস্য পদ পেতে হলে তার জোগ্যতানুসারে সাহায্য পাঠান উচিত।
-জলপাইগুড়ি শহরে রুবি বোডিং চত্বরে মেজর জিয়া ও ন্যাপ নেতা মশিউর রহমান (যাদুমিয়া) সাক্ষাৎ করেন। ঐ রাতেই দু’জন একই গাড়িতে জলপাইগুড়ি থেকে চলে গেলেন।
কয়েকদিনের মধ্যে তুরা রৌমারী হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর অপর পারে পাকবাহিনীর অবস্থান গাইবান্ধায় গোপনে মশিউর রহমান চলে গেলেন। (উত্তর রণাঙ্গনে বিজয় (পৃঃ ৯০)
প্রধান নির্বাচনী কমিশনার বিচারপতি আবদুস সাত্তার ইসলামাবাদ থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান।
ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাজফর আহমদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশের সংগ্রাম বায়াফ্রার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগ্রাম নয় এ সংগ্রাম এ্যাংগোলা মোজাম্বিকের উপনিবেশিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মত স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি বলেন মুক্তিযোদ্ধারা তখন সময় নিচ্ছেন শেষ আঘাত আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের দু’টি প্রদেশ সিন্ধু ও বেলুচিস্তানকে প্রতিরোধ গড়ে ওঠেছে। ‘তারাও মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে শীঘ্রই’ (৪ খঃ পৃঃ ৫৬৫)
মার্কিন প্রেসিডেন্টের চীন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ উপলক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া সম্মিলিত এক সম্পাদকীয় ‘প্রাভদায়’ প্রকাশিত হয় (কেসি এ, পৃঃ ২৪৭৬৬)
খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক ও গভর্ণর লেঃ জেনারেল টিক্কা খান কুমিল্লায় বলেন, আমরা শান্তি চাই কিন্তু ভারত সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে। ভারত কখনো পূর্ব পাকিস্তানী জনসাধারণের বন্ধু হতে পারে না। তিনি বলেন, শান্তি রক্ষা ও দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিবাহিনী) নির্মূল করার কাজে জনসাধারণকে সহযোগিতা করার উদ্দেশেই শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। (সংবাদপত্র)
২৫ শে জুলাই “দি অবজারভার” পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, পশ্চিম বংগের মাও-সমর্থক নক্সালপন্থীরা পূর্ব বংগে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর বর্বর অত্যাচার সমর্থন করে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতা থেকে পত্রিকাটির সংবাদদাতা সুনন্দ দত্ত রায় এই সংবাদ প্রেরণ করেন। ঐ সংবাদে আরও বলা হয়, একটি গোপন প্রচারপত্রের মাধ্যমে চীনের নীতি সমর্থন করে নক্সালপন্থীরা অন্যতম নেতা অসীম চ্যাটাজী কর্তৃক প্রাণীত এই প্রচারপত্রে পশ্চিম পাকিস্তানকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করা হয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে নক্সালপন্থী পার্টির চেয়ারম্যান চারু মজুমদার ও আসীম চ্যাটাজীর মধ্যে গুরুতর মতভেদ রয়েছে। চারু মজুমদার নিরপেক্ষ থাকার পক্ষহপাতি; অসীম চ্যাটাজী অন্তর্ঘাতি কার্যকলাপের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর প্রচেষ্টা বানচাল করার পক্ষপাতি। (স্বাঃ সং প্রঃ বাঃ পৃঃ ৯৪)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী