ওপার বাংলার সংগ্রাম ও এপার বাংলার মুসলিম
হাবিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন আজ জনসংগ্রামে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ নওজোয়ান মরণপণ করে তাদের স্বল্প সংগৃহীত অস্ত্রশস্ত্র ও অকৃত্রিম দেশপ্রেমের বহ্নি দিয়ে ইয়াহিয়া খাঁর জালিম শাহীর জিঞ্জির ভেঙে এক মুক্ত, স্বাধীন, শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থার রাষ্ট্র কায়েমের মহৎ প্রচেষ্টায় ব্রতী।
ঠিক সেই সময়ই এপার বাংলার কিছু সংবাদপত্র বেসামাল অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নীরব দর্শক ও ইয়াহিয়া খার চর বলে চেঁচামেচি শুরু করেছেন। এর উদ্দেশ্য যে কী তা শ্রেণী সচেতন সংগ্রামী মানুষের অগম্য নয়।
এপার বাংলার মুসলিম কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়, যারা রুজি ও রুটির লড়াইয়ে বিভিন্ন সংগ্রামী সংগঠনের সাথী, তাঁরা সমস্ত সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির উর্ধ্বে থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযোেদ্ধাদের পাশে আছেন ও থাকবেন। এপার বাংলার মুসলিমদের সংগ্রামী চেতনা বিচ্ছিন্নতাকামী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের প্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে এপার ও ওপার দুই বাংলাতেই সংগ্রামের ঐক্যকে দৃঢ় ও মজবুত করতে বদ্ধপরিকর। ক্ষুদ্র সাম্প্রদায়িকতাকে তারা ঘৃণা করেন।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারের অন্যতম অংশীদার সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ ও তাদের চেলাচামুণ্ডাদের বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিকে কি তা আজও পরিষ্কার নয়। এমনকি বিধান সভায় বাংলাদেশের সমর্থনে জ্যোতি বসুর তথা সংযুক্ত বামপন্থী ফ্রন্টের বলিষ্ঠ বক্তব্যের অবতারণার মুহূর্তেও মুসলিম লীগের ভূমিকা সম্পর্কে মুক্তি যােদ্ধাদের তথাকথিত দরদী সংবাদপত্রগুলাে সােচ্চার নন কেন?
সূত্র: দর্পণ
২১.০৫.১৯৭১